সিকিমে তিস্তায় অগুনতি বাঁধ রুখতে সংসদীয় স্থায়ী কমিটিকে উদ্যোগী হতে আরজি

তিস্তা নদীর ওপর সেতু
রয়টার্স ফাইল ছবি

ভারতীয় রাজ্য সিকিমে তিস্তা নদীতে অগুনতি বাঁধ নির্মাণ রুখতে কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটিকে উদ্যোগী হওয়ার আরজি জানানো হয়েছে। ভারতের সাবেক রেলমন্ত্রী ও কংগ্রেস নেতা পবন কুমার বনসল এ বিষয়ে একটি চিঠি লিখেছেন সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশকে। গতকাল মঙ্গলবার লেখা ওই চিঠিতে তিনি বলেছেন, এখনই উদ্যোগী না হলে প্রকৃতির পাশাপাশি জনজীবনের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যাবে। তিস্তার পানিপ্রবাহ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। হাজার হাজার স্থানীয় মানুষকে গৃহচ্যুত হতে হবে।

তিস্তার উৎপত্তি সিকিমে। সেখান থেকে প্রবাহিত হয়ে পশ্চিমবঙ্গ পেরিয়ে মোট ৪১৪ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে তিস্তা বাংলাদেশের ব্রহ্মপুত্রে মিশেছে। আন্তর্জাতিক এই নদীর পানির ন্যায্য ভাগ পেতে ভাটির রাষ্ট্র বাংলাদেশ আগ্রহী। কিন্তু প্রধানত পশ্চিমবঙ্গের আপত্তিতে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তি আজও সই হয়নি। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দাবি, শুকনা মৌসুমে তিস্তায় পর্যাপ্ত পানি থাকে না। তা ছাড়া এই নদীর পানির ওপর পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোর সেচব্যবস্থা নির্ভরশীল।

তিস্তা নিয়ে সম্প্রতি এক আলোচনাসভায় অংশ নিতে পবন কুমার বনসল পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলায় গিয়েছিলেন। স্থানীয় নাগরিক সংগঠন ‘অভিমুখ’ ওই আলোচনা সভার আয়োজক ছিল। সেখানে যোগ দিয়েছিলেন সিকিমের ‘তিস্তামানব’ বলে পরিচিত সমাজকর্মী গিয়াৎসো ডি লেপচা। অবাঞ্ছিত বাঁধ নির্মাণ ঠেকাতে তিনি সিকিমে জন–আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সেই আন্দোলনের জেরে তিস্তার উত্তর অববাহিকায় অন্তত তিনটি বাঁধের কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ভারত সরকারের ন্যাশনাল হাইড্রো পাওয়ার করপোরেশনের (এনএইচপিসি) উদ্যোগে ওই তিনটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প রুখতে গিয়াৎসোর নেতৃত্বে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ ১৫০ ঘণ্টা অনশন আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন।

পবন কুমার বনসল চিঠিতে লিখেছেন, আলোচনা সভায় প্রত্যেকেরই অভিমত পশ্চিমবঙ্গের গজলডোবায় তিস্তায় ব্যারাজ নির্মাণ ভারত ও বাংলাদেশের বিবাদের একটা কারণ। সিকিমে যেভাবে মাত্রাছাড়া জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরি হচ্ছে, তাতে সমস্যা আরও গভীর হচ্ছে। তিস্তায় পানিপ্রবাহ তো কমছেই, পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশ। অথচ তা উপেক্ষা করে এনএইচপিসি তিস্তা ও তার শাখানদীগুলোয় আরও ৫৩টি বাঁধ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এ ‘বিপর্যয়’ থেকে দেশকে বাঁচাতে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান জয়রাম রমেশকে উদ্যোগী হওয়ার অনুরোধ জানিয়ে পবন কুমার বনসল লিখেছেন, স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ‘তিস্তামানব’ গিয়াৎসো ডি লেপচাকে আমন্ত্রণ জানানো হোক। তিস্তায় যথেচ্ছ বাঁধ নির্মাণ গোটা উত্তর ভারতের পরিবেশ কীভাবে বিষিয়ে দিচ্ছে, তা তিনি ভালোভাবে উপস্থাপন করতে পারবেন। সরকারও সতর্ক ও সজাগ হতে পারবে। দেশ বিপর্যয়ের হাত থেকে বাঁচতে পারবে। তিস্তাও রক্ষা পাবে অবলুপ্তির হাত থেকে।