কুকিদের নিয়ে রাজ্য সরকারের নতুন উদ্যোগে মণিপুরে আবার সংঘাত শুরুর শঙ্কা

মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেনছবি: এএনআই

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন গতকাল মঙ্গলবার বলেছেন, রাজ্যের তফসিলি আদিবাসী (শিডিউল ট্রাইব) তালিকা থেকে ‘কুকি–চিন প্রভৃতি যাযাবর’ সম্প্রদায়কে সরিয়ে ফেলার লক্ষ্যে রাজ্যের সব আদিবাসী সম্প্রদায়ের সমন্বয়ে একটি কমিটি করা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদন কেন্দ্রীয় উপজাতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রস্তাব হিসেবে পাঠানো হবে।

১৯ শতকের গোড়ায় মণিপুরের রাজা গম্ভীর সিংয়ের ১৯০তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বীরেন সিং এসব কথা বলেন। মুখ্যমন্ত্রীর এ ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্যে আবার নতুন করে উত্তেজনা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন পর্যবেক্ষকেরা।

রাজ্য সরকারের এ ধরনের প্রক্রিয়া শুরু করার অর্থ দাঁড়াচ্ছে, ভারতের আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃত কুকি–চিনদের আদিবাসী বা উপজাতি হিসেবে থাকা বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার করে নেওয়া। বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার করে নেওয়া হলে তারা বাড়তি কিছু সুযোগ-সুবিধা, যেমন স্কুল-কলেজে বা চাকরির ক্ষেত্রে সংরক্ষিত আসন হারাতে পারেন।

২০২৩ সালের গোড়ায় আদিবাসী বা উপজাতি হিসেবে স্বীকৃত নয়, এমন সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেই সম্প্রদায়কে আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া যায় কি না, তা বিবেচনা করতে মণিপুর হাইকোর্ট রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দেওয়ার পরেই সেখানে সাম্প্রদায়িক সংঘাত শুরু হয়। সংঘাতে ১৮০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। পরিস্থিতি এখনো পুরোপুরি স্বাভাবিক নয়। এ অবস্থায় গতকাল মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পর পরিস্থিতি আবার উত্তেজনা ছড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

নিজের সিদ্ধান্তের সমর্থনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে বীরেন সিং লেখেন, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বাঁচানোর জন্য কাউকে ঝুঁকি নিতে হবে। তরুণদের মাদক ও রাষ্ট্রের জন্য হুমকিস্বরূপ বিভিন্ন বিপদ থেকে রক্ষা করার জন্য ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। রাজ্য সরকার এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছে। সংবিধানে বর্ণিত আইন ও মূল্যবোধ মেনে চলার মাধ্যমে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা হবে।

অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, এই চ্যালেঞ্জ কীভাবে মোকাবিলা করা হবে? উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমরা রাজ্যের সব স্বীকৃত উপজাতির সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করছি। এ কমিটির সুপারিশ আমরা কেন্দ্রের কাছে পাঠাব।’

মণিপুরে ৩৪টি সরকার স্বীকৃত উপজাতি বা আদিবাসী সম্প্রদায় রয়েছে।
সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয় সরকারের পাঠানো একটি প্রশ্নের ভিত্তিতেই এ কমিটি গড়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে মণিপুর সরকার। বিজেপির নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্সের (এনডিএ) শরিক মহারাষ্ট্রের রাজনৈতিক দল রিপাবলিকান পার্টি অব ইন্ডিয়ার (আথাওয়ালে) জাতীয় সেক্রেটারি মহেশ্বর থাউনাওজাম সম্প্রতি কেন্দ্রীয় উপজাতিবিষয়ক মন্ত্রনালয়কে একটি চিঠি লেখেন।

গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর লেখা সেই চিঠিতে থাউনাওজাম বলেছিলেন, গত কয়েক বছরে মণিপুরের আদিবাসী তালিকায় কয়েকটি সমাজকে যুক্ত করা হয়েছে। তিনি দাবি করেছেন, ‘যেকোনো ‘মিজো’ (লুশাই), ‘কুকি উপজাতি’ এবং ‘জো’-কে ভিত্তিহীনভাবে আদিবাসী ঘোষণা করা হয়েছে। তারা ভারতের মূল নিবাসী নয়। তাদের তফসিলি আদিবাসী তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার আবেদন জানায় থাউনাওজাম।

থাউনাওজামের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি সম্পর্কে মণিপুর সরকারের কাছে তাদের বক্তব্য জানতে চেয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।

গত বছর এ ধরনের একটি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্যের হাইকোর্ট উপত্যকাভিত্তিক মেইতেই সম্প্রদায়কে তফসিলি উপজাতির মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি রাজ্য সরকারকে বিবেচনা করতে বলে। এরপর সহিংসতা শুরু হয়। পরে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্টের নির্দেশের নিন্দা করেন। হাইকোর্টের নির্দেশ খারিজ হয়ে যায়।

এখন বিষয়টি আবার নতুন করে সামনে নিয়ে এল মণিপুর রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার। মেইতেই সম্প্রদায়কে তফসিলি উপজাতি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার চেষ্টার পরিবর্তে তারা এবার আদিবাসীদের তফসিল স্বীকৃতি খারিজের চেষ্টা শুরু করল। পর্যবেক্ষকদের আশঙ্কা, এর জেরে নতুন করে অশান্তি শুরু হবে মণিপুরে।