কংগ্রেস জ্যেষ্ঠ নেতা দিগ্বিজয়ের আরএসএস-বিজেপির প্রশংসা উসকে দিচ্ছে বিতর্ক

নয়াদিল্লির ইন্দিরা ভবনে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির (সিডব্লিউসি) বৈঠক। শনিবার, ২৭ ডিসেম্বরছবি: এএনআই

কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির (সিডব্লিউসি) বৈঠক বসেছিল আজ শনিবার। তার ঠিক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দিয়ে বির্তকের জন্ম দিয়েছেন কংগ্রেসের জ্যেষ্ঠ নেতা ও রাজ্যসভার সদস্য দিগ্বিজয় সিং। পোস্টটি দেখে মনে হয়েছে, তিনি বিজেপি ও আরএসএসের ‘প্রশংসা’ করেছেন।

হিন্দিতে লেখা এক্স-এর পোস্টে দিগ্বিজয় লিখেছেন, ‘কোরা ওয়েবসাইটে এই ছবিটি আমি খুঁজে পেয়েছি। এটি অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক। যেভাবে আরএসএসের তৃণমূল স্তরের স্বয়ংসেবকেরা (কর্মীরা) এবং জন সংঘ/বিজেপির কর্মীরা নেতাদের পায়ের কাছে মেঝেতে বসেন এবং পরবর্তী সময়ে একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও দেশের প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত হয়ে ওঠেন, তাতে সংগঠনটির শক্তিই ফুটে ওঠে। জয় সিয়া রাম।’

দিগ্বিজয় পোস্টের সঙ্গে নব্বইয়ের দশকের একটি ছবিও যুক্ত করেন, যেখানে আপাতদৃষ্টিতে দেখা যাচ্ছে বিজেপির প্রবীণ নেতা এল কে আদভানি গুজরাটের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। সেখানে তাঁর পাশেই মেঝেতে বসে আছেন তরুণ নরেন্দ্র মোদি।

কংগ্রেস নেতার এক্সের পোস্ট নিয়ে বিতর্ক বাড়তে থাকলে তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যম আমাকে ভুল বুঝেছে।’ তিনি বলেন, ‘আমি সংগঠনটির প্রশংসা করেছি। তবে আমি আরএসএস এবং মোদিজির কট্টর প্রতিপক্ষ।’

দিগ্বিজয়ের কংগ্রেসে সংস্কার ও ‘বিকেন্দ্রীকরণ’-এর আহ্বান জানানোর এক সপ্তাহ পর এই বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছে। আজ শনিবার কংগ্রেসের কার্যনির্বাহী কিমিটর (সিডব্লিউসি) বৈঠকেও তিনি বিষয়টি উত্থাপন করেছিলেন।

১৯ ডিসেম্বর এক্সে করা এক পোস্টে দিগ্বিজয় বলেন, ‘রাহুল গান্ধীজি, সামাজিক-অর্থনৈতিক নানা ইস্যুতে আপনি একেবারে ঠিক জায়গায় বাড়ি দিয়েছেন–ফুল মার্ক। কিন্তু এখন দয়া করে আইএনসির (ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস) দিকেও নজর দিন। ইসিআইয়ে (ভারতের নির্বাচন কমিশন) যেমন সংস্কার প্রয়োজন, তেমনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসেরও সংস্কার প্রয়োজন।’

জ্যেষ্ঠ এই কংগ্রেস নেতা আরও লেখেন, ‘আপনি “অর্গানাইজেশন (সংগঠন) সৃজন” দিয়ে শুরু করেছেন, কিন্তু আমাদের আরও বাস্তবসম্মত ও বিকেন্দ্রীভূত সক্রিয়তা দরকার। আমি নিশ্চিত আপনি তা করবেন, কারণ আমি জানি আপনি পারবেন। একমাত্র সমস্যা হচ্ছে, আপনাকে “রাজি করানো” সহজ নয়।’

দিগ্বিজয়ের এই মন্তব্যকে ব্যবহার করে কংগ্রেসের ভেতরের ‘বিভক্তিগুলোকে’ নিশানা করেছে বিজেপি। দলটির জাতীয় মুখপাত্র প্রদীপ ভান্ডারি বলেন, ‘দিগ্বিজয় সিং প্রকাশ্যে রাহুল গান্ধীর বিরোধিতা করছেন। তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন, রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেস সংগঠনটি ভেঙে পড়েছে। কংগ্রেস বনাম কংগ্রেস প্রদর্শিত হচ্ছে!’

কংগ্রেসের কার্যনির্বাহী কমিটির (সিডব্লিউসি) বৈঠকে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে তাঁর উদ্বোধনী বক্তব্যে বলেন, এমজিএনআরইজিএ–এর নাম পরিবর্তনের বিরুদ্ধে একটি শক্ত পরিকল্পনা তৈরি এবং এ নিয়ে দেশব্যাপী আন্দোলন গড়ে তোলা দলের ‘সম্মিলিত দায়িত্ব’।

খাড়গে বলেন, কোনো ধরনের গবেষণা বা মূল্যায়ন ছাড়া এবং রাজ্য বা দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শ না করেই মোদি সরকার এমজিএনআরইজিএ বাতিল করে একটি নতুন আইন চাপিয়ে দিয়েছে, ঠিক যেমনটা তারা তিনটি ‘কালো কৃষি আইনের’ ক্ষেত্রে করেছিল। এই সময়ে দেশব্যাপী জোরালো আন্দোলন প্রয়োজন।

মোদি সরকারকে নিশানা করে খাড়গে বলেন, এমজিএনআরইজিএ বাতিল করার মধ্য দিয়ে সরকার ‘গরিবদের পেটে লাথি মেরে পিঠে ছুরি মেরেছে।’