ভারতে বাণিজ্য মিশন স্থগিত করল কানাডা

দ্বিপক্ষীয় মুক্তবাণিজ্য চুক্তি আলোচনা আপাতত বন্ধ রাখার পর ভারতে বাণিজ্য মিশন পাঠানোর সিদ্ধান্তও অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করল কানাডা। আগামী ৯ অক্টোবর কানাডার পাঁচ সদস্যের বাণিজ্য মিশনের ভারতে আসার কথা ছিল। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের দ্রুত অবনতির দরুণ এই বাণিজ্য আলোচনা কবে নাগাদ শুরু করা যাবে, তা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে।

বাণিজ্য মিশন পাঠানোর সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখার কথা জানিয়েছে কানাডার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তবে কী কারণে মিশন পাঠানো হচ্ছে না, সরকারিভাবে তা জানানো হয়নি। গত মে মাসে ভারতের বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী পীযূষ গয়ালের কানাডা সফরের সময় এ বাণিজ্য মিশন গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।

দুই দেশের সম্পর্কের অবনতির কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে, শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আন্দোলনে কানাডার সরকারের রাশ না টানা। সম্প্রতি কানাডায় ভারতীয় দূতাবাসে বেশ কয়েকটি হামলা চালায় শিখ সমাজ। এ নিয়ে ভারত প্রতিবাদ জানিয়েছে। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও করেছে। কিন্তু কানাডা সরকারের কোনো ব্যবস্থা ভারতকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি।

সম্প্রতি জি–২০ সম্মেলনে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে এ নিয়ে অসন্তুষ্টি ও ক্ষোভের কথা শুনিয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ভারত এতটাই ক্ষুব্ধ যে ট্রুডো চাইলেও মোদি তাঁর সঙ্গে কাঠামোগত দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় বসতে রাজি হননি। সম্মেলনের ফাঁকে সংক্ষিপ্ত আলাপচারিতায় ট্রুডোকে মোদি ভারতের অসন্তোষের কথা সরাসরি জানিয়েছিলেন।

কানাডার রাজনীতিতে ভারতীয় বংশোদ্ভূত শিখ সম্প্রদায় যথেষ্ট প্রভাবশালী। ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদী শিখ সম্প্রদায়ের খালিস্তান আন্দোলনের প্রতি কানাডায় বসবাসকারী শিখদের এক বড় অংশের সমর্থনও রয়েছে। এ নিয়ে ভারতের সঙ্গে কানাডার মধ্যে প্রায়ই কূটনৈতিক আলোচনা হয়। সম্প্রতি এ শিখ সমাজকে নিয়ে ভারতের আপত্তি তীব্র হয়েছে।

জি–২০ সম্মেলনে ট্রুডোকে বিচ্ছিন্নতাবাদী শিখদের সংগঠনকে মদদ দেওয়া বন্ধ করার কথা বেশ কঠোরভাবে বলেছিলেন মোদি। ভারতীয় দূতাবাসে হামলাকারীদের কারও বিরুদ্ধে কানাডা সরকার ব্যবস্থা না নেওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন তিনি। জবাবে ট্রুডো বলেছিলেন, গণতান্ত্রিকভাবে আন্দোলনের অধিকার সবার রয়েছে। তবে হিংসা বরদাশত করা হবে না।

দিল্লিতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ট্রুডো বলেছিলেন, চেতনা, মতপ্রকাশ ও শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করার স্বাধীনতাকে কানাডা যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়। সেই অধিকার কানাডা কখনো খর্ব করতে পারে না। কিন্তু ঘৃণা ও হিংসা ছড়ানো কিছুতেই বরদাশত করা হবে না। তবে তিনি একথাও বলতে ভোলেননি যে হাতে গোনা কয়েকজনের কাজের দায় গোটা সম্প্রদায়ের ওপর বর্তায় না।

ভারত–কানাডা বাণিজ্য আলোচনা প্রথম শুরু হয়েছিল ২০১০ সালে। ২০২২ সালে তা গতি পায়। দুই দেশের মধ্যে ‘কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ চুক্তি’ তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। এই বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে অনেকগুলো বৈঠক হয়েছে। কিন্তু বিচ্ছিন্নতাবাদী শিখদের সমর্থনের প্রশ্নে যে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে ও দুই দেশের সম্পর্কে যে অবনতি ঘটেছে, তাতে বাণিজ্য চুক্তির ভবিষ্যৎ ঘিরে সংশয় দেখা দিয়েছে।