প্রথম আলো: সাগরদিঘি তো বেশ কয়েক বছর ধরে তৃণমূলের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। শেষ তিনটি নির্বাচনে এ আসনে জেতেন তৃণমূল প্রার্থীরা। সম্প্রতি আসনটি শূন্য হয় তৃণমূলের রাজ্যমন্ত্রী সুব্রত সাহার অকালমৃত্যুতে। তাই আপনি কোন অঙ্ক কষে তৃণমূলের বিরুদ্ধে নামলেন বাম সমর্থন নিয়ে?

বায়রন বিশ্বাস: এ লড়াইয়ের পেছনে বহু যুক্তি আছে আমাদের। কারণও আছে। আমি খেটে খাওয়া মানুষ। মানুষের কল্যাণে আজও আমি নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছি। সারা দিনই গ্রামগাঁয়ে ঘুরি, কাজ করি, কথা বলি, কথা শুনি। গ্রামের মানুষই আমাকে বলেন, মমতা সরকারের নিচুতলা থেকে উঁচুতলার নেতা-কর্মীদের ব্যাপক দুর্নীতিকে এখন আর মেনে নিতে পারছেন না এলাকাবাসী। তাই তাঁরাও চাইছেন দুর্নীতিমুক্ত একটি সরকার। তাঁদের আশীর্বাদ এবং নিজের বিরাট মনোবল নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লাম। বাম দল আমাকে সত্যিই উজাড় করে সমর্থন দিয়েছে, প্রচারে নেমেছে। তাই সাগরদিঘির মানুষের কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ।

প্রথম আলো: আপনি কি ভেবেছিলেন এ আসনে আপনি জিতে যাবেন?

বায়রন বিশ্বাস: সংশয় তো একটা ছিল। যদি ওরা ভোট দিতে না দেয়, বুথ দখল করে, ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে না দিয়ে ভোটকেন্দ্র দখল করে নেয়—এসব বিষয় সংশয় ছিল। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের দৃঢ় পদক্ষেপে এবং নির্বিঘ্ন ভোট করায় আমার জয়ের পথ খুলে দিয়েছে।

প্রথম আলো: সাগরদিঘি এলাকাটি তো মুসলিম সংখ্যালঘু অধ্যুষিত। ৬৪ শতাংশ ভোটার সংখ্যালঘু। এর আগে এ ভোটের বেশি তৃণমূলই পেয়েছে বলে মনে করা হয়। এর মধ্যে আপনি কীভাবে সাহস পেলেন যে সংখ্যালঘুরা তৃণমূলকে ছেড়ে আপনার পক্ষে ভোট দেবেন?

বায়রন বিশ্বাস: সংখ্যালঘুরা তো আমার মতোই একজন ভোটার। তারা তো স্বচক্ষে দেখেছে রাজ্য সরকারের দুর্নীতি, চাকরিতে ঘুষ, কাটমানির রমরমা, কয়লাখনি, বালুর খাদানে দুর্নীতি ও ঘুষের রাজনীতি। তাই তো তারাও এবার ঘুরে গেছে। তৃণমূলের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে সংখ্যালঘু মুসলিমরা, যেটা ভাবতে পারেনি তৃণমূল।

প্রথম আলো: এলাকার ভোটার কি আপনাকে ব্যক্তি বায়রন বিশ্বাস নাকি দলকে ভোট দিয়েছে?

বায়রন বিশ্বাস: আমি মনে করি, ভোটাররা দলকে এবং আমাকেও ভোট দিয়েছে। দুটির সংমিশ্রণই আমার জয়ের পথকে প্রশস্ত করেছে।

প্রথম আলো: তৃণমূলের এ পরাজয়ের কারণ কী?

বায়রন বিশ্বাস: একটাই কারণ, দুর্নীতি। মানুষ কখনো ভাবতে পারেনি ‘সততার প্রতীক’ মমতার সরকারের এ দুর্নীতিকে। একেবারে নিচুতলা থেকে উপরতলা দুর্নীতির আঁচড় লেগেছে, ভাবা যায়?

প্রথম আলো: তৃণমূল বলছে অন্তর্ঘাত?

বায়রন বিশ্বাস: সব গল্প। তৃণমূল বুঝে গেছে, তাদের পায়ের তলার মাটি সরে যাচ্ছে। মানুষ তাদের ছুড়ে ফেলছে।

প্রথম আলো: আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে সাগরদিঘির নির্বাচনের প্রভাব কি পড়বে?

বায়রন বিশ্বাস: নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে প্রভাব পড়তে বাধ্য। পঞ্চায়েতে ওদের ভরাডুবি হবে। লোকসভায়ও এর প্রভাব পড়তে বাধ্য। মানুষ আর এই দুর্নীতিবাজদের ক্ষমতায় চাচ্ছেন না।

প্রথম আলো: তৃণমূল সরকার আপনার এলাকায় কতটা উন্নয়নকাজ করেছে?

বায়রন বিশ্বাস: একদম না বললেই চলে। এখনো এলাকার মানুষ পুকুরের পানি খায়। বহু স্থানে বিদ্যুৎ নেই, রাস্তাঘাট পাকা হয়নি, মাটির ঘরে বাস করে মানুষ। দুর্নীতি আর স্বজনপ্রীতির জাঁতাকলে এখনো পিষ্ট হচ্ছে এলাকার সাধারণ মানুষ। বহু মানুষ আবাস যোজনায় বাড়ি পায়নি। শুধু কি তা–ই, এ সরকারের শিক্ষাক্ষেত্রের মতো পবিত্র স্থানে ছড়িয়ে রেখেছে দুর্নীতির জাল। এটা কি ভাবা যায়?

প্রথম আলো: আপনারা তো বাম দলকে নিয়ে জোট করেছেন, এই জোট কি টিকে থাকতে পারবে?

বায়রন বিশ্বাস: অবশ্যই। আমরা আগামী সব নির্বাচন এ জোটের ব্যানারে করব। এবার সাগরদিঘিতে বাম দল কাজ করেছে নিজেদের উজাড় করে, প্রাণ দিয়ে, ভালোবাসা দিয়ে। আমরা এ নিয়ে পঞ্চায়েত ও লোকসভা নির্বাচনে লড়ে যাব। আমরা জানি, মানুষ আমাদের পাশে আছে। তাই তো বলছি, মানুষ এবার এক হয়েছে তৃণমূলকে তাড়ানোর জন্য। আমরা এবং বাম দল ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ নিয়ে চলি। সেই আদর্শ নিয়েই চলব আমরা আগামী দিনেও।

প্রথম আলো: বিজেপিকে কীভাবে দেখছেন?

বায়রন বিশ্বাস: ওরা তো ধর্মান্ধ দল। ওদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক নেই। দেখবেন, ক্ষমতায় থাকতে শেষ পর্যন্ত তৃণমূল আবার ঝুঁকে না পড়ে বিজেপির দিকে। অতীতে তো বিজেপির সঙ্গে জোট করে তাদের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় যোগ দেওয়ার ইতিহাস আছে। দেখবেন সেই পথে আবার না যায় তৃণমূল।

প্রথম আলো: পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?

বায়রন বিশ্বাস: তৃণমূলের পতন শুরু হয়ে গেছে। সাগরদিঘি সেই পথ দেখিয়ে দিল। এ রাজ্যের মানুষ তৃণমূলের ঘুষ, দুর্নীতি ও অপশাসনের বিরুদ্ধে জেগে উঠছে। হয়তো এমন দিন অপেক্ষা করছে, তৃণমূলই মুছে যাবে এ রাজ্যপাট থেকে। কারণ, এ রাজ্যের মানুষ ঘুষ–দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয় না। তারা ধর্মনিরপেক্ষ ও দুর্নীতিমুক্ত পশ্চিমবাংলা চায়।