সন্ধি করার চাপ দিচ্ছে বিজেপি, অভিযোগ কেজরিওয়ালের

অরবিন্দ কেজরিওয়ালফাইল ছবি: এএনআই

গ্রেপ্তারের শঙ্কা নিয়ে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল বলেছেন, বিজেপির সঙ্গে সন্ধি করলে তাঁর বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ তুলে নেওয়া হবে। সে জন্য কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা দিয়ে তাঁর ওপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। কিন্তু তিনি বলেছেন, শত চাপের মুখেও মাথা নোয়াবেন না।

আবগারি মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) কেজরিওয়ালকে পাঁচবার সমন জারি করেছে। ওই সমন ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে তিনি সাড়া দেননি। বারবার সমন এড়ানোর প্রতিকারের আশায় ইডি দিল্লির আদালতে আবেদন জানিয়েছে। আগামী বুধবার তার শুনানি হওয়ার কথা। কেজরিওয়াল ও আম আদমি পার্টির (আপ) শীর্ষ নেতাদের দৃঢ় ধারণা, ইডি আদালতের শরণাপন্ন হয়েছে তাঁকে গ্রেপ্তারের জন্য।

আবগারি মামলায় তদন্তের জন্য ইডি আগেই গ্রেপ্তার করেছে ‘আপ’-এর দুই শীর্ষ নেতা মণীশ সিসোদিয়া ও সঞ্জয় সিংকে। অনেক দিন হলো দুজনের কেউই জামিন পাননি। কেজরিওয়ালকেও এর আগে সিবিআই দীর্ঘ সময় জেরা করেছে। এখন জেরা করতে সমন জারি করে চলেছে ইডি। সেই উদ্যোগ শুরু হওয়ামাত্র দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী বিজেপির বিরুদ্ধে তোপ দেগে বলেছেন, ‘লোকসভা ভোটের আগে বিজেপি চাইছে তাঁকে জেলে ঢোকাতে। সে জন্য এত তৎপরতা।’

তাঁকে জেলে ঢোকানোর জন্য বিজেপির ছক নিয়ে কেজরিওয়াল কিছুদিন আগে বলেছিলেন, ওরা চাইছে আপ ভাঙিয়ে দিল্লি সরকার দখল করতে। সে জন্য বিজেপি আপের সাতজন বিধায়ককে টার্গেট করেছে। প্রত্যেককে ২৫ কোটি রুপি দেওয়ার টোপ দিয়েছে। দিল্লি সরকারের শিক্ষামন্ত্রী আতিশীও সেই অভিযোগে গলা মিলিয়েছিলেন। সেই অভিযোগ খতিয়ে দেখতে দিল্লি পুলিশ হঠাৎ সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তারা কেজরিওয়াল ও আতিশীর সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলতে চাইছে। গত রোববার দিল্লি পুলিশের একটি দল আতিশীর বাসভবনে যায়। কিন্তু সে সময় তিনি সেখানে ছিলেন না। ছিলেন দিল্লিতে এক স্কুলের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়ালও উপস্থিত ছিলেন।

ওই অনুষ্ঠানেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বিজেপিতে যাতে তিনি যোগ দেন বা ওদের সঙ্গে হাত মেলান, তা হলে নাকি তাঁর ‘সাত খুন মাফ’ হয়ে যাবে। সব অভিযোগ তুলে নেওয়া হবে। কিন্তু কেজরিওয়াল বলেন, মাথা তিনি নোয়াবেন না। কারণ, কোনো অপরাধ তিনি করেননি। তিনি বলেন, ‘দিল্লিতে আমি স্কুল তৈরি করেছি। হাসপাতাল তৈরি করেছি। রাস্তাঘাট বানিয়েছি। কোনো অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হইনি।’

বিজেপির বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের রাস্তা দেশের শাসক দলই কিন্তু প্রস্তুত করে দিয়েছে। বিরোধী দল ভেঙে সরকার গড়তে তারা ‘দুর্নীতিগ্রস্তদের’ দলে টেনেছে। মহারাষ্ট্রে যাঁদের বিরুদ্ধে খোদ প্রধানমন্ত্রী ৭০ হাজার কোটি রুপির দুর্নীতির অভিযোগ এনেছিলেন, যাঁদের একমাত্র স্থান জেলখানা বলে জাহির করেছিলেন, তাঁদের দলত্যাগ করিয়ে ওই রাজ্যে তারা সরকার গড়েছে। আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার বিরুদ্ধে চলা দুর্নীতির সব তদন্ত বন্ধ হয়ে গেছে। পশ্চিমবঙ্গের যেসব তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছিল, তাঁদের কেউ কেউ বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন।

তদন্তও বন্ধ হয়ে গেছে। বিরোধীদের চোখে বিজেপি ‘ওয়াশিং মেশিন’। কেজরিওয়ালের অভিযোগ উড়িয়ে বিজেপির মুখপাত্র শেহজাদ পুনাওয়ালা অবশ্য বলেছেন, তদন্ত এড়াতেই এসব কথা কেজরিওয়াল বলছেন। কিন্তু জেনে রাখুন, কোনোভাবেই তিনি বাঁচতে পারবেন না। পুনাওয়ালার কথায়, ঝাড়খন্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন জেলযাত্রা ঠেকাতে পারেননি। কেজরিওয়ালও পারবেন না।

আপাতত সবার নজর বুধবারের দিকে। আদালতকে দিয়ে ইডিতে হাজিরা দেওয়া নিশ্চিত করা গেলে কেজরিওয়ালের গ্রেপ্তার অবধারিত বলে বিজেপি মনে করছে। একই শঙ্কা আম আদমি পার্টিরও। লোকসভা ভোটের আগেই কেজরিওয়ালকে জেলে ঢোকাতে বিজেপি তৎপর। দিল্লিতে লোকসভার আসন সাতটি। গত ভোটে সব কটি আসনই পেয়েছিল বিজেপি। এবার সমঝোতা করে ভোটে লড়ার আগ্রহ আপ ও কংগ্রেস দুই দলই দেখিয়েছে। বিজেপি কোনো ঝুঁকি নিতে চাইছে না।