পশ্চিমবঙ্গের সন্দেশখালীর ঘটনা তদন্তে ভারতের কেন্দ্রীয় মানবাধিকার কমিশন

ভারতের নারী কমিশনের সদস্যের সঙ্গে কথা বলছেন সন্দেশখালীর নারীফাইল ছবি: এএনআই

ভারতের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের একটি দল সন্দেশখালীর ঘটনার তদন্ত করবে। প্রচারমাধ্যমে প্রকাশিত নারীদের যৌন হয়রানির অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার সূত্রে স্বতঃপ্রণোদিতভাবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে আজ বুধবার কমিশনের এক বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়েছে।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন, তবে স্বশাসিত সংস্থা। তদন্ত দলের নেতৃত্বে কমিশনের একজন সদস্য থাকবেন। তাঁকে কমিশনের কর্মকর্তারা সহায়তা করবেন।

একই সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের মুখ্যসচিব এবং রাজ্য পুলিশের মহাপরিচালককে নোটিশ দিয়েছে কমিশন। চার সপ্তাহের মধ্যে তাঁদের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

কমিশন জানতে চেয়েছে, নির্যাতনের ঘটনা এবং পরবর্তী পর্যায়ে দুষ্কৃতকারীদের সাধারণ মানুষকে আক্রমণের বিষয়ে যে অভিযোগ সামনে এসেছে, সে বিষয়ে সরকারি আধিকারিকেরা কী পদক্ষেপ নিয়েছেন বা পদক্ষেপের প্রস্তাব করেছেন। ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে কি না বা দেওয়া হলেও কাদের দেওয়া হয়েছে, আইনি পদক্ষেপ কী নেওয়া হয়েছে এবং মানুষের নিরাপত্তা ও তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে কী পদক্ষেপ নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।

পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার সন্দেশখালীতে এক মাসের বেশি সময় ধরে নানা ঘটনা ঘটছে। শাহজাহান শেখ নামের প্রভাবশালী স্থানীয় এক তৃণমূল নেতাকে ভারতে আর্থিক অনিয়মের তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) কর্মকর্তারা গ্রেপ্তার করতে গেলে এই ঘটনাপ্রবাহের সূত্রপাত হয়। স্থানীয় মানুষ তাঁদের ওপর চড়াও হন এবং তাঁদের আক্রমণ করেন বলে অভিযোগ।

ওই ঘটনার জেরে রাজ্য রাজনীতিতে উত্তাপ দেখা দেয়। ধীরে ধীরে পুরো বিষয়টি একটি নাটকীয় রাজনৈতিক চেহারা নেয় এবং দিল্লি বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব রাজ্যের তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বিষয়টিকে একটি ইস্যু করে তোলে। তৃণমূল কংগ্রেসও তাদের জায়গায় দাঁড়িয়ে জানায়, রাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন সরকারকে অস্থিতিশীল করতেই সন্দেশখালীর ঘটনাকে রাজনৈতিক আকার দিয়েছে বিজেপি।

অতীতে নির্বাচনের আগে এ ধরনের ঘটনা পশ্চিমবঙ্গে মানুষ দেখেছেন। কখনো আসানসোল শিল্পাঞ্চলে আবার কখনো উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলারই ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে সেখানে বড় ধরনের সাম্প্রদায়িক সংঘাত তৈরি করানো হয়েছিল। সাধারণ মানুষের একাংশ এমনও মনে করেন, এই বছরের এপ্রিল-মে মাসে লোকসভা নির্বাচনের শেষে সন্দেশখালীর ঘটনা ধীরে ধীরে প্রচারমাধ্যম থেকে হারিয়ে যাবে। বিষয়টি রাজনৈতিক দল ও সাধারণ মানুষ ভুলে যাবেন।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশন জানিয়েছে, শুধু দরিদ্র নারী নন, শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিদের ওপরও যথেষ্ট অত্যাচার সন্দেশখালীতে হয়েছে বলে তারা জানতে পেরেছে। যাবতীয় অভিযোগের তদন্তে তাদের দল শিগগিরই পশ্চিমবঙ্গে পৌঁছাবে।