পুরস্কার পেয়ে ‘অসম্মানিত’ ভারতের সেই ১২ কয়লাশ্রমিক

উদ্ধারকারী সেই ১২ কয়লাশ্রমিকের হাতে চেক তুলে দেন উত্তরাখন্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি। ২১ ডিসেম্বরছবি: এএনআই

‘অসম্মানিত’ বোধ করছেন ভারতের উত্তরাখন্ড রাজ্যের সুড়ঙ্গে আটকে পড়া শ্রমিকদের উদ্ধারকারী সেই ১২ ‘র‌্যাট হোল মাইনার’। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামির দেওয়া ৫০ হাজার রুপির চেক তাঁরা অনিচ্ছা সত্ত্বেও শর্ত সাপেক্ষে গ্রহণ করেছেন।

উত্তরাখন্ড সরকারের কর্তাদের এই খনিশ্রমিকেরা জানিয়ে দিয়েছেন, চেক তাঁরা নিচ্ছেন, তবে ভাঙাবেন না। রাজ্য সরকার বিমাতাসুলভ আচরণ বন্ধ না করলে ওই চেক তাঁরা ফিরিয়ে দেবেন। কী করবে বিজেপি–শাসিত উত্তরাখন্ড সরকার? এ প্রশ্নের উত্তর এখনো অজানা।

গতকাল শুক্রবার উত্তরাখন্ড রাজ্যের রাজধানী দেরাদুনে এক অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ধামি উত্তর প্রদেশের ওই ১২ শ্রমিককে পুরস্কৃত করেন ও তাঁদের প্রত্যেকের হাতে ৫০ হাজার রুপির চেক তুলে দেন। শ্রমিকেরা অসন্তোষ সত্ত্বেও তা গ্রহণ করেন।

মুখ্যমন্ত্রী শ্রমিকদের বলেন, তাঁরা তাঁদের দাবি নিয়ে সরকারি কর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করুন। তিনি তা খতিয়ে দেখবেন। শ্রমিকেরা তখন তাঁকে জানান, সরকারের সিদ্ধান্ত পর্যন্ত তাঁরা অপেক্ষা করবেন। তত দিন পর্যন্ত চেক ভাঙাবেন না।

সুড়ঙ্গধসে আটকে পড়া ৪১ শ্রমিককে উদ্ধারের সব প্রচেষ্টা যখন বিফল হয়, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আনা যন্ত্র যখন বিকল হয়ে পড়ে, বিশেষজ্ঞ বিদেশি উদ্ধারকর্তারা যখন জানিয়ে দেন আটক শ্রমিকদের উদ্ধার করতে অন্তত এক মাস সময় লাগবে, তখন মুশকিল আসান হিসেবে হাজির হন ওই ১২ শ্রমিক।

কয়লাখনিতে দু–আড়াই ফুট সুড়ঙ্গ কেটে কয়লা বের করার পদ্ধতি আয়ত্ত করা ওই শ্রমিকদের নিযুক্ত করে উদ্ধারকারী দল। ইঁদুরের গর্তের মতো সুড়ঙ্গ কাটার কায়দা রপ্ত করার দরুন তাঁদের ‘র‌্যাট হোল মাইনার’ নামে ডাকা হয়। কয়লাখনিতে এভাবে সুড়ঙ্গ কেটে কয়লা বের করার পদ্ধতি ভারতে বেআইনি ঘোষণা করা হয়েছে। ওই শ্রমিকদের দক্ষতা অবশ্য অন্যত্র এ ধরনের কাজে ব্যবহার করা হয়।

দিল্লির সংস্থা রকওয়েল এন্টারপ্রাইজেসকে দায়িত্ব দেওয়া হলে প্রতিষ্ঠানটির মালিক ওয়াকিল হাসান ওই ১২ শ্রমিককে দায়িত্ব দেন। বিশেষজ্ঞরা যে কাজ এক মাস লাগবে বলেছিলেন, ওই শ্রমিকেরা তা দুই দিনে শেষ করেন। উদ্ধার পান আটক ৪১ শ্রমিক। তারপর তাঁরা নানাভাবে সম্মানিত হলেও রাজ্য সরকারের দেওয়া পুরস্কারমূল্য তাঁদের অখুশি করে। তাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও চেক গ্রহণের সিদ্ধান্ত।

শ্রমিকদের হয়ে গণমাধ্যমকে ওয়াকিল হাসান বলেন, আটকে পড়া শ্রমিকদের প্রত্যেককে রাজ্য সরকার দিয়েছে ১ লাখ রুপি। অথচ তাঁদের ক্ষেত্রে ৫০ হাজার রুপি! যাঁরা উদ্ধার পেলেন, তাঁদের বেশি অর্থ দেওয়া হলো, অথচ যাঁরা উদ্ধার করলেন, তাঁরা পেলেন অর্ধেক।

ওয়াকিল হাসান বলেন, শ্রমিকেরা কেউ টাকা চাননি। তাঁরা চেয়েছিলেন সরকার এমন কিছু একটা করুক, যাতে চিরকাল তাঁদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ইঁদুর–সুড়ঙ্গ খুঁড়ে যেতে না হয়। এমন কিছু নিশ্চয়তা দিক, যাতে তাঁদের পরবর্তী প্রজন্ম সম্মানজনক অন্য কিছু করতে পারে। অথচ সরকার তা তো করলই না, বরং বিমাতাসুলভ আচরণ করল।

হাসান বলেন, এ ধরনের কাজ সবাই করতে পারেন না। তা ছাড়া এ কাজের একটা পরম্পরাও আছে। এ কাজের দক্ষ শ্রমিকদের খনি খোঁড়া ছাড়াও বহু কাজে লাগানো হয়। যেমন এ ক্ষেত্রে হলো। সেসব কাজের জন্য তাঁদের সরকারি সংস্থাগুলোয় নিয়োগ করা যেতে পারে। তা হলে তাঁদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত হয়। তা না করা গেলে এমন আর্থিক সহায়তা দেওয়া যেতে পারে, যাতে তাঁরা ভবিষ্যৎ অন্যভাবে তৈরি করতে পারেন।

হাসান বলেন, এটা মনে রাখা দরকার, এই অনামী শ্রমিকেরা দেশকে গর্বিত করেছেন। সরকারের উচিত তার প্রতিদান দেওয়া।