আসামে কথিত বন্দুকযুদ্ধ চলছেই

বন্দুকযুদ্ধ
প্রতীকী ছবি

ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে হতাহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। গত ফেব্রুয়ারির ২৫ তারিখে নিম্ন আসামের বাকসা জেলায় ডিম্বেশ্বর মুসাহারি (৪০) নামের বোড়ো জাতিসত্তার এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করে আসাম পুলিশ। এই হত্যার ঘটনা আসাম পুলিশ স্বীকার করেছে। তবে তারা প্রথমে জানিয়েছিল যে মৃত ব্যক্তির নাম ডিম্বেশ্বর মুসাহারি নয়, কেনারাম বসুমাতারি।

কেনারাম নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট অব বোড়োল্যান্ডের আত্মসমর্পণ করা এক জঙ্গি। এই বক্তব্য ভ্রান্ত প্রমাণিত হয়েছে।

আসাম পুলিশের মহানির্দেশক জি পি সিংয়ের বক্তব্য অনুসারে, কেনারাম ও ডিম্বেশ্বর দুজনই অপরাধজগতের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ঘটনাটিকে ভুয়া বন্দুকযুদ্ধ আখ্যা দিতে অস্বীকার করেন সিং।

তবে যেহেতু জনজাতি–অধ্যুষিত এলাকায় হত্যার ঘটনা ঘটেছে, এর ফলে বাধ্য হয়েই আসাম পুলিশকে অভ্যন্তরীণ সিআইডি (ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট) দিয়ে ঘটনার তদন্ত করাতে হয়েছে। আর সেই তদন্ত কমিটি জানিয়েছে, ভুল ব্যক্তিকে হত্যা করেছে আসাম পুলিশ।

এটি অবশ্য কোনো বিক্ষিপ্ত ঘটনা নয়। আসামে বন্দুকযুদ্ধ, ভুয়া সংঘর্ষ এবং পুলিশের গুলিতে মৃত্যুর ঘটনা বেড়েই চলেছে। আসামে ২০২১ সালের শুরুতে হিমন্ত বিশ্বশর্মার নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পরে মাত্র দুই বছরের কম সময়ের মধ্যে পুলিশের গুলিতে ৬৬ জন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন ১৫৮ জন।

অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (এআইইউডিএফ) এমএলএ আশরাফুল হুসেনের এক প্রশ্নের উত্তরে লিখিতভাবে আসাম বিধানসভায় এ তথ্য জানান আসামের মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন।

তাঁর লিখিত উত্তরে বিশ্বশর্মা বলেছেন, ২০২১ সালের ১০ মে এবং ২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে আসামে ৩৫ জন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন ১২ জন।

এ ছাড়া পুলিশের সরাসরি গুলি চালানোর ফলে মারা গেছেন আরও ২৬ জন, আহত হয়েছেন ১৪৬ জন। বিশ্বশর্মা বলেন, আরও পাঁচ ব্যক্তি পুলিশের গুলিতে মারা যান, যখন তাঁরা পুলিশি হেফাজত থেকে পালানোর চেষ্টা করেন। পুলিশ গুলি চালায় এবং তাঁদের মৃত্যু হয়।

এআইইউডিএফের জ্যেষ্ঠ এমএলএ আমিনুল ইসলাম বলেছেন, বিষয়টা এখন আর অস্বীকার করার উপায় নেই যে কথিত বন্দুকযুদ্ধে আসামে পুলিশ সাধারণ মানুষকে হত্যা করছে।

আমিনুল ইসলাম বলেন, কেনারাম বসুমাতারি ও কিরীটি কমল বোরার (ছাত্রনেতা, যাঁর ওপর গুলি চালানো হয়েছিল ২০২২ সালের শুরুতে) ওপরে গুলি চালানোর পরে এনকাউন্টারের বিষয়টি আর অস্বীকার করা যায় না। বিষয়টি সম্পর্কে রাজ্যপালের অবহিত থাকা উচিত।

মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ রয়েছেন বলে জানা গেছে।