বিলকিস বানুর ধর্ষকদের পক্ষে বিজেপির মন্ত্রীর সাফাই
ভারতে ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গার সময় বিলকিস বানুকে দলবদ্ধ ধর্ষণে দোষী সাব্যস্ত হওয়া ১১ জনকে আগাম মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্তের পক্ষে সাফাই গাইলেন একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। দেশটির কেন্দ্রীয় পার্লামেন্টারি অ্যাফেয়ার্স মন্ত্রী ও বিজেপি নেতা প্রহ্ললাদ জোসি ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে বলেন, ‘সরকার এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা যখন এই সিদ্ধান্ত নেয়, তখন আমি এতে ভুল কিছু পাই না। কারণ, এটি একটি আইনি প্রক্রিয়া।’
চলতি বছরের শেষে গুজরাট বিধানসভার নির্বাচন। এ উপলক্ষে বিজেপির হয়ে নির্বাচনী প্রচার চালাতে প্রহ্ললাদ এখন গুজরাটে রয়েছেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘কারাগারে বেশ কিছু সময় কাটিয়ে আসা আসামিদের মুক্তির জন্য একটি বিধান রয়েছে। আইন অনুযায়ীই এটি হয়েছে।’
কেন্দ্রীয় সংস্থা সিবিআই এ ঘটনাকে ‘জঘন্য, বর্বর ও গুরুতর’ অপরাধ বলে অভিহিত করেছিল। সেই অপরাধের সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীদের আগাম মুক্তির জন্য ‘আইন’ প্রয়োগের কারণে সৃষ্ট ক্ষোভের প্রতিক্রিয়ায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর গলায়ও গুজরাট সরকারের ‘ভালো আচরণ’ যুক্তির প্রতিধ্বনি শোনা গেল।
গতকাল সোমবার গুজরাট সরকার এক নোটিশের জবাবে উচ্চ আদালতকে জানান, ২০০২ সালে গুজরাট দাঙ্গার সময় বিলকিস বানুকে দলবদ্ধ ধর্ষণে দোষী সাব্যস্ত হওয়া ব্যক্তিরা ‘১৪ বছর কারা ভোগ করেছেন, পাশাপাশি সেখানে তাঁদের আচরণ ভালো ছিল’। একই সঙ্গে শীর্ষ আদালতে দাখিল করা একটি হলফনামায় গুজরাট সরকার জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত ১১ জুলাই একটি চিঠির মাধ্যমে দণ্ডিত এসব ব্যক্তির সাজা পূর্ণ হওয়ার আগেই আগাম মুক্তির অনুমোদন দিয়েছিল।
এ বিষয়ে প্রহ্ললাদ জোসি আরও বলেন, ‘কিছুদিন কারাগারে থাকার পর, যদি তাদের আচরণ...অনেক ঘটনা আছে, আমি তাতে ঢুকতে চাই না।’
পাতিদার নেতা হার্দিক পাটেলও দণ্ডিতদের মুক্তির পক্ষে বলেছেন। তিনি গত জুনে কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন। তিনি বলেন, ‘ভালো আচরণের কারণে কর্তৃপক্ষ কয়েদিদের মুক্তি দিতে পারে। আমি মনে করি, যা হয়েছে তা ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। অবশ্যই অপরাধী তার কর্মকাণ্ডের জন্য শাস্তি পাওয়ার যোগ্য।’
তবে ভিন্ন সুরে মন্তব্য করেছেন বিজেপির আরেক নেতা অলপেশ ঠাকুর। গুজরাটে নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছেন তিনিও। সেখানে তিনি বলেন, ‘দলবদ্ধ ধর্ষণ ও হত্যার দায়ে দণ্ডিত ব্যক্তিদের মুক্তি অগ্রহণযোগ্য। আমি এটা মানি না। তাঁদের ছেড়ে দেওয়ার জন্য ভালো ব্যবহার যথেষ্ট কারণ হতে পারে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘দণ্ডিত ব্যক্তিরা কারাগার থেকে বের হওয়ার পর তাঁদের মিষ্টি খাইয়ে বরণ করে নেওয়া হয়, যা লজ্জাজনক।’
গতকাল সোমবারের শুনানিতে গুজরাট সরকার সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দিয়ে জানায়, তারা এ বিষয়ে ২৮ জুন কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদন চেয়েছিল। ১১ জুলাই অমিত শাহর নেতৃত্বাধীন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কোনো কারণ উল্লেখ না করেই ওই অনুমোদন দেয়।
২০০২ সালে গুজরাট দাঙ্গার সময় বিলকিস বানু ধর্ষণের শিকার হন। পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা বিলকিসকে ধর্ষণ করার পাশাপাশি তাঁর তিন বছরের মেয়েসহ পরিবারের সাত সদস্যকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় ২০০৮ সালে মুম্বাইয়ের বিশেষ সিবিআই আদালত ১১ অপরাধীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। মুম্বাই হাইকোর্টও সেই সাজা বহাল রাখেন।
গত ১৫ আগস্ট ভারতের স্বাধীনতার ৭৫তম বার্ষিকী উদ্যাপন উপলক্ষে ১৪ বছর সাজাপ্রাপ্ত ওই ১১ অপরাধীকে গুজরাট সরকার ক্ষমা প্রদর্শন করে মুক্তি দেয়। গুজরাটের গোধরা জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তাঁদের ফুলের মালা পরিয়ে, কপালে তিলক কেটে ও মিষ্টি খাইয়ে বরণ করা হয়। এ ঘটনা ভারতজুড়ে বিক্ষোভের জন্ম দেয়।
দণ্ডিত ব্যক্তিরা মুক্তি পাওয়ার পর ২৩ আগস্ট গুজরাট সরকারের ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যান সিপিএম নেত্রী সুভাষিণী আলী, তৃণমূল কংগ্রেসের সংসদ সদস্য মহুয়া মৈত্র, সাংবাদিক রেবতী লাল ও অধ্যাপক রূপরেখা ভার্মা। প্রধান বিচারপতি এন ভি রমনা, বিচারপতি অজয় রাস্তোগি ও বিচারপতি বিক্রম নাথের যৌথ বেঞ্চ ২৫ আগস্ট গুজরাট সরকারকে নোটিশ পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এর জবাবে গতকাল সোমবার ২০০২ সালে গুজরাট দাঙ্গার সময় বিলকিস বানুকে দলবদ্ধ ধর্ষণে দোষী সাব্যস্ত হওয়া ব্যক্তিরা ‘১৪ বছর কারা ভোগ করেছেন, পাশাপাশি সেখানে তাঁদের আচরণ ভালো ছিল’ মর্মে জবাব দেয় রাজ্য সরকার। তবে ইতিমধ্যে এসব অপরাধীকে মুক্তিদানের বিষয়টিতে রাজনৈতিক রং লেগেছে। এ বছরের শেষে গুজরাট বিধানসভার নির্বাচন। অপরাধীরা সবাই ব্রাহ্মণ। অভিযোগ রয়েছে, নির্বাচনে ব্রাহ্মণদের সমর্থন পেতে শাসক দল বিজেপি এমনটা করেছে।