বাংলাদেশের ইলিশ পেতে অপেক্ষায় কলকাতাবাসী

কলকাতার গড়িয়াহাট বাজারের একটি ইলিশের দোকান। সম্প্রতি তোলা।
ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

সবকিছু ঠিক থাকলে কলকাতায় এ মৌসুমে প্রথম বাংলাদেশের ইলিশ ঢুকবে আজ বৃহস্পতিবার। কলকাতার ইলিশ আমদানিকারক সংস্থা ফিশ ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আনোয়ার মকসুদ গতকাল বুধবার রাতে প্রথম আলোকে এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, গতকালই বাংলাদেশের ইলিশ নিয়ে কয়েকটি ইলিশবোঝাই ট্রাক বেনাপোল সীমান্তে এসেছে। এর পরিমাণ ৮০ থেকে ১০০ মেট্রিক টন হতে পারে। রপ্তানিসংক্রান্ত কাগজপত্র বেনাপোলের শুল্ক দপ্তরে না পৌঁছানোর কারণে গতকাল বিকেলে এই মাছ রপ্তানি সম্ভব হয়নি।

তবে আনোয়ার মকসুদ আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, কাগজপত্র এলেই বেনাপোল থেকে ভারতে ঢোকার ছাড়পত্র পেয়ে যাবে। এই ইলিশ বেনাপোল-হরিদাসপুর (পেট্রাপোল) সীমান্ত পার হয়ে সোজা চলে যাবে হাওড়ার পাইকারি বাজারে। সেখানেই পরবর্তীকালে নিলামে বিক্রি হবে। তারপর তা ছড়িয়ে যাবে কলকাতার বিভিন্ন বাজারে।

গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে কলকাতায় সরকারিভাবে আসা শুরু করেছিল বাংলাদেশের ইলিশ। আনোয়ার মকসুদ এ কথাও বলেন, এবারও গত বছরের ন্যায় ইলিশ রপ্তানির সময় কমে গেছে। ফলে এ সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ এই বিপুল পরিমাণ ইলিশ রপ্তানি করতে পারবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। গত বছর একই ঘটনা ঘটেছিল। গত বছর ২ হাজার ৯০০ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হলেও ভারতে ইলিশ রপ্তানি হয়েছিল ১ হাজার ৩০০ মেট্রিক টন।

আসন্ন দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে এ বছরও ভোজনপ্রিয় বাঙালিদের রসনা তৃপ্তি করতে বাঙালিদের প্রিয় পদ্মার ইলিশ কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। গতকাল বাংলাদেশ সরকার জানিয়ে দিয়েছে, বাংলাদেশ সরকার এ বছর ৩ হাজার ৯৫০ টন ইলিশ ভারতে রপ্তানি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার ৭৯ জন রপ্তানিকারককে ভারতে ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে। প্রতি রপ্তানিকারককে ৫০ মেট্রিক টন করে ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে। নির্দেশে বলা হয়েছে, আগামী ৩০ অক্টোবরের মধ্যে এই রপ্তানিকার্য সম্পন্ন করতে হবে।

বাংলাদেশ সরকার কলকাতার ইলিশপ্রিয় বাঙালিদের কথা মাথায় রেখে চার বছর ধরে দুর্গাপূজার মৌসুমে বিশেষ ব্যবস্থায় ইলিশ রপ্তানি করে আসছে। এ বছরের পূজা শুরু ২১ অক্টোবর থেকে। তাই এ বছরও যাতে কলকাতার ইলিশপ্রিয় মানুষ বাংলাদেশের ইলিশ থেকে বঞ্চিত না হয়, সে জন্য ১ সেপ্টেম্বর কলকাতায় যাতে ইলিশ রপ্তানি হয় সেই লক্ষ্যে আবেদন করে কলকাতার ইলিশ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ফিশ ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন। এ আবদেন করা হয় বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির কাছে, কলকাতার বাংলাদেশ উপহাইকমিশনের মাধ্যমে।

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায় ৪ সেপ্টেম্বর। ফিশ ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আনোয়ার মকসুদ প্রথম আলোকে আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকারের এই  ইলিশ রপ্তানির সিদ্ধান্তে আমরা খুশি। খুশি কলকাতার ইলিশপ্রিয় বাঙালিরা। কারণ, কলকাতার সাধারণ মানুষ প্রতিবছরই পদ্মার ইলিশ খাওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকেন বাংলাদেশের দিকে।’

আনোয়র মকসুদ আরও জানান, ২০১৯ সালে এই রাজ্যে ইলিশ এসেছিল ৫০০ টন, ২০২০ সালে ১৮৫০ টন, ২০২১ সালে ১২০০ টন এবং ২০২২ সালে বাংলাদেশ থেকে ১৩০০ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানি হয়ে এসেছিল কলকাতাসহ এই রাজ্যে।

২০১২ সাল থেকে বাংলাদেশ সরকার ভারতে ইলিশ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। এর পর থেকে পশ্চিমবঙ্গের ইলিশপ্রিয় বাঙালিরা বঞ্চিত হয়ে আসছিল বাংলাদেশের পদ্মার ইলিশ থেকে। ২০১৯ সালের পূজার সময় বাংলাদেশ সরকার পশ্চিমবঙ্গে ৫০০ টন ইলিশ রপ্তানির ব্যবস্থা করেছিল। এর পর থেকেই বাংলাদেশের ইলিশ পাচ্ছেন কলকাতাবাসী।