ধর্ষকদের মুক্তির বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে গেলেন বিলকিস বানু

গুজরাট দাঙ্গায় বিলকিস বানুকে দলবদ্ধ ধর্ষণ ও তাঁর পরিবারের সাত সদস্যকে হত্যা করা হয়
ফাইল ছবি: এএফপি

তাঁর ধর্ষকদের মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে এবার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হলেন বিলকিস বানু। সুপ্রিম কোর্টের কাছে বুধবার এক আবেদনে তিনি গুজরাট সরকারের ওই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি জানান। বিলকিসের আইনজীবী শোভা গুপ্ত প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের এজলাসে এই আবেদন জানিয়ে বলেন, আবেদনের শুনানি যেন প্রকাশ্য আদালতে করা হয়।

প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বলেন, শুনানি প্রকাশ্যে না গোপনে হবে, তা আদালতই ঠিক করবেন। আবেদনটি করতে হবে বিচারপতি অজয় রাস্তোগির এজলাসেই, যেহেতু তিনিই মুক্তির বিষয়টি বিবেচনার জন্য গুজরাট সরকারের কাছে পাঠিয়েছিলেন। বিচারপতি রাস্তোগি বর্তমানে এক সাংবিধানিক বেঞ্চের সদস্য। এই আবেদন তিনি শুনতে পারবেন কি না, সে বিষয়ে বিলকিসের আইনজীবী সংশয় প্রকাশ করলে প্রধান বিচারপতি ওই মন্তব্য করেন।

২০০২ সালে গুজরাট দাঙ্গার সময় অন্তঃসত্ত্বা বিলকিস বানুকে ধর্ষণ করেছিলেন মুক্তিপ্রাপ্ত ১১ অপরাধী। বিলকিসের শিশুকন্যাসহ পরিবারের ৭ সদস্যকে তাঁর চোখের সামনে খুন করা হয়েছিল। দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় ওই ১১ জনের সাজা হয়েছিল। গত ১৫ আগস্ট স্বাধীনতার ৭৫ বর্ষ পূর্তি উপলক্ষে গুজরাট সরকার ওই ১১ জনকে মুক্তি দেয়। যুক্তি হিসেবে বলা হয়েছিল, অপরাধীরা ১৪ বছর কারাবাস করেছেন। জেলাখানায় থাকাকালে তাঁদের আচরণও ভালো ছিল।

মুক্তি পাওয়ার পর ১১ অপরাধীকে ফুল-মালা দিয়ে বরণ করা হয়। সামাজিক ও গণমাধ্যমে সেই ছবি ও খবর প্রকাশিত হয়। ১১ জনই ব্রাহ্মণ। রাজ্যের শাসক দল বিজেপির কোনো কোনো নেতা এমন মন্তব্যও করেন যে ব্রাহ্মণেরা ধর্ষণের মতো কাজ করতে পারেন না। অভিযোগ উঠেছে, ব্রাহ্মণদের ভোট পেতেই রাজ্য সরকার এই অপরাধীদের মুক্তি দিয়েছে।

রাজ্য সরকার অপরাধীদের মুক্তি দেওয়া প্রসঙ্গে ১৯৯২ সালের সাজা মওকুফ নীতিরও উল্লেখ করেছে। কিন্তু ২০১৪ সালে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তৈরি সাজা মওকুফ নীতিতে বলা হয়েছিল, ধর্ষণ ও খুনের আসামিদের সাজা কোনোভাবে মওকুফ করা যাবে না। সেই নীতির প্রয়োগ করা হলে ১১ অপরাধী ছাড়া পেতেন না। সুপ্রিম কোর্টের কাছে বিলকিস বানুর আবেদন, গুজরাট সরকারের ওই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার নির্দেশ দেওয়া হোক। অপরাধীদের সাজা মওকুফের সিদ্ধান্ত খারিজ করা হোক। তিনি এই আবেদনও করেন, ওই অপরাধীদের মুক্তিদানের সিদ্ধান্ত মহারাষ্ট্র সরকারের এখতিয়ার, গুজরাট সরকারের নয়, যেহেতু মামলাটি গুজরাট থেকে সরিয়ে মহারাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

আরও পড়ুন

২০১৪ সালে সাজা মওকুফ নীতি গ্রহণ করা সত্ত্বেও গুজরাট সরকারের আবেদনে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কোন যুক্তিতে দুই সপ্তাহের মধ্যেই সম্মতি দিয়েছিল, তা নিয়ে দেশজুড়ে তুমুল আলোচনা শুরু হয়। সুপ্রিম কোর্টে একাধিক জনস্বার্থ মামলা করা হয়। মামলাকারীদের মধ্যে ছিলেন সিপিএম নেত্রী সুভাষিনী আলি ও তৃণমূল কংগ্রেস সংসদ সদস্য মহুয়া মৈত্র। সাবেক সরকারি আমলাদের সঙ্গে বিভিন্ন মানবাধিকার রক্ষা সংগঠনও সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানায়। এবার আবেদন করলেন বিলকিস বানু নিজেই।

আরও পড়ুন