রাজনীতি থেকে অবসরের বার্তা সোনিয়ার

ভারত জোড়ো যাত্রার সঙ্গে শেষ হতে পারে সোনিয়া গান্ধীর রাজনৈতিক যাত্রা
ফাইল ছবি: রয়টার্স

রাজনীতি থেকে অবসরের ইঙ্গিত দিলেন ভারতের কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী। ছত্তিশগড়ের রাজধানী রায়পুরে কংগ্রেসের ৮৫তম পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনের দ্বিতীয় দিনে আজ শনিবার ভাষণে সেই ইঙ্গিত দিয়ে দলের সাবেক সভানেত্রী বললেন, ‘আমার কাছে সবচেয়ে তৃপ্তিদায়ক ভারত জোড়ো যাত্রার সঙ্গে আমার যাত্রাও শেষ হতে পারে।’

প্রায় পাঁচ মাসের ভারত জোড়ো যাত্রা দলের কাছে একটা মাইলফলক বর্ণনা করে সোনিয়া বলেন, ‘এই যাত্রা এক সন্ধিক্ষণ। এই যাত্রা বুঝিয়ে দিয়েছে দেশের বেশির ভাগ মানুষ শান্তিতে থাকতে চায়। তারা সহনশীল ও সাম্যে বিশ্বাসী। এই যাত্রার সঙ্গে সঙ্গে শেষ হতে পারে আমার যাত্রাও।’ তিনি বলেন, দেশবাসীর সঙ্গে দলের নিরন্তর সম্পর্ক এই যাত্রা নতুনভাবে দৃঢ় করেছে। এই যাত্রা দেখিয়েছে, কংগ্রেস সব সময় দেশের মানুষের জন্য তাদের পাশে রয়েছে। তাদের জন্য লড়াইয়ে প্রস্তুত।

ভারত জোড়ো যাত্রাকে যাঁরা সফল করেছেন, যাঁরা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন, সোনিয়া তাঁদের অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি ছেলে রাহুলেরও প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, রাহুলের একাগ্রতা ও নেতৃত্ব এই যাত্রার সাফল্যের অন্যতম প্রধান কারণ।

সোনিয়ার এই ইঙ্গিতের মধ্য দিয়েই উঠে আসছে আগামী লোকসভা নির্বাচনে উত্তর প্রদেশের রায়বেরিলি কেন্দ্র থেকে ৭৬ বছর বয়সী এই নেত্রী আরও একবার দাঁড়াবেন, নাকি কেন্দ্রটি ছেড়ে দেবেন কন্যা প্রিয়াঙ্কার জন্য, সেই প্রশ্ন।

সোনিয়া তাঁর ভাষণে শাসক বিজেপি ও রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের (আরএসএস) প্রবল সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, দেশের আজকের পরিস্থিতি অত্যন্ত সঙ্গিন। কংগ্রেস তো বটেই, গোটা দেশকেই বিজেপি ও আরএসএস এক গভীর চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করিয়ে রেখেছে। তারা দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান কবজা করে ফেলছে। বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করছে নির্দয়ভাবে। পছন্দের গুটিকয় শিল্পপতির হাতে সব তুলে দিয়ে দেশের অর্থনীতির বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, সবচেয়ে খারাপ হলো তারা ভারতীয়দের মনে ভয় ও ঘৃণার জন্ম দিয়েছে। দেশের মানুষদের একে অন্যকে ঘৃণা করতে শিখিয়েছে। সংখ্যালঘু, দলিত, আদিবাসী ও নারীদের বিরুদ্ধে ঘৃণার আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ঘটা অপরাধ ও অপরাধীদের উপেক্ষা করে চলেছে।

সোনিয়া বলেন, বিজেপি–আরএসএস গান্ধীজির নাম নিয়ে মশকরা করে। সংবিধান ও মূল্যবোধকে তারা কীভাবে ধ্বংস করে চলেছে, তাদের কাজকর্মের মধ্য দিয়েই তা প্রতিফলিত।

রাজনীতিতে ঢোকার সময়ের কথা উল্লেখ করে ১৫ হাজার কংগ্রেস প্রতিনিধির উদ্দেশে সোনিয়া বলেন, ‘রাজনীতিতে প্রবেশের সেই সময়টাও ছিল খুব চ্যালেঞ্জের। সেটা ছিল কঠিন সময়। আজকের মতোই। এর মোকাবিলায় আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব রয়েছে। দেশ ও দলের প্রতি সেই বিশেষ দায়িত্ব আমাদের পালন করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘কংগ্রেস শুধু এক রাজনৈতিক দল নয়। আমাদের আঁকড়েই দেশের মানুষ স্বাধীনতা, সাম্য, সৌভ্রাতৃত্ব ও ন্যায়বিচারের লড়াইয়ে অবতীর্ণ। লড়াই খুবই কঠিন। কিন্তু আমার অভিজ্ঞতা বলছে, এই লড়াইয়ে আমাদের জয় হবেই।’

কংগ্রেসের তিন দিনের অধিবেশন শেষ হবে আগামীকাল রোববার। আগামী বছর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে হারাতে বিরোধী ঐক্য স্থাপনসংক্রান্ত বিভিন্ন সম্ভাবনা ও প্রশ্নের জবাব এই অধিবেশন থেকেই কংগ্রেস দিতে পারবে বলে মনে করা হচ্ছে।