রামমন্দির থেকে প্যারিসের ডিজনিল্যান্ড—কলকাতার পূজামণ্ডপ সেজেছে নানা সাজে

কলকাতার বিখ্যাত সন্তোষমিত্র স্কয়ারের পূজামণ্ডপ
ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

উত্তর প্রদেশের অযোধ্যার রামমন্দির এখন কলকাতায়। আসছে জানুয়ারি মাসে অযোধ্যায় এই রামমন্দির উদ্বোধনের কথা। নির্মাণকাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। কিন্তু সেই মন্দিরের আদলে কলকাতার সন্তোষ মিত্র স্কয়ারের দুর্গাপূজার মন্দির করা হয়েছে। শুধু রামমন্দির নয়, প্যারিসের ডিজনিল্যান্ড, জয়পুরের অ্যালবার্ট জাদুঘর, মহিশূরের রাজপ্রাসাদ—কলকাতার দুর্গামণ্ডপ সেজেছে এমন নানা সাজে। কলকাতার পূজা মানে এক এলাহি ব্যাপার। চোখ ঝলসানো মণ্ডপ, নানা সাজের প্রতিমা, লাখো মানুষের ভিড়—এসবের কারণেই তো এ পূজা এখন ইউনেসকোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ। আগামীকাল বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজার মহাষষ্ঠী। তার আগেই সেজে উঠেছে আনন্দনগরী কলকাতা।

ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে বিভিন্ন পূজামণ্ডপ উদ্বোধনের অনুষ্ঠান। আর এই উদ্বোধনের উদ্বোধকের তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভার্চ্যুয়ালি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিমধ্যে কয়েক শ পূজামণ্ডপের উদ্বোধন করেছেন।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পূজা উদ্বোধনের সঙ্গে পাল্লা শুরু করেছে বিজেপি।  বিজেপির নেতা ও ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ ১৬ অক্টোবর বিকেলে কলকাতার ঐতিহ্যবাহী সন্তোষ মিত্র স্কয়ারের পূজামণ্ডপের উদ্বোধন করেছেন সন্তোষ মিত্র স্কয়ারে।

উদ্বোধন করে অমিত শাহ বলেছেন, আগামী জানুয়ারি মাসে অযোধ্যার রামমন্দির উদ্বোধন হওয়ার কথা থাকলেও এবার কলকাতায় জানুয়ারি মাসের আগে নতুন রামমন্দিরের  উদ্বোধন হলো। এই গর্ব এই বাংলার।

পুরো পশ্চিমবঙ্গে এবার পূজার সংখ্যা ৪৩ হাজার।

যোধপুর পার্কের মণ্ডপে দর্শনার্থীদের ভিড়
ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

এবার কলকাতার সবচেয়ে সাড়াজাগানো পূজামণ্ডপ লেকটাউনের শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবে। এ মণ্ডপ তৈরি হয়েছে প্যারিসের ডিজনিল্যান্ডের আদলে। দক্ষিণ কলকাতার বেহালার নতুন সংঘ দেবীর মূর্তি বানিয়েছে দাবার ঘুঁটির আদলে। আর এই মূর্তি নির্মাণ করেছেন বাংলাদেশের পাঁচ শিল্পী।

কলকাতার বাগবাজার সর্বজনীনের মণ্ডপ তৈরি হয়েছে জয়পুরের অ্যালবার্ট মিউজিয়ামের আদলে। কলকাতার কুমারটুলি পার্ক মণ্ডপের থিম করেছে চেয়ারের জন্য লড়াইকে কেন্দ্র করে। কলেজ স্কয়ার সর্বজনীন মণ্ডপ করেছে মহিশূরের রাজপ্রাসাদকে। মানব মস্তিষ্কের আদলে মণ্ডপ করেছে কলকাতার নলিন সরকার স্ট্রিট সর্বজনীন। পালকির আদলে মণ্ডপ বানিয়েছে পাথুরিয়া ঘাটার ৫-এর পল্লি। ডিগবাজিকে নিয়ে মণ্ডপ তৈরি করেছে শ্যামবাজার ফ্রেন্ডস ইউনিয়ন। দক্ষিণ কলকাতার সুরুচি সংঘ মা-কে নিয়ে থিম করেছে। একডালিয়া এভারগ্রিন মণ্ডপ করেছে জৈন মন্দিরের আদলে। ত্রিধারা সম্মিলনীর থিম এবার উৎসব। হরিদেবপুর অজয় সংহতির থিম এবার ইচ্ছে ডানা। বেহালা ক্লাবের থিম ভাত কাপড়। হিন্দুস্তান পার্কের থিম প্রাণ। সিংহী পার্কের থিম নকশি ঘরে পুতুল রাজ। বোসপুকুর শীতলা বাড়ি মণ্ডপ বানিয়েছে পুরোনো সব চেয়ার দিয়ে। চক্রবেড়িয়া সর্বজনীনের থিম বাক্স বদল। লোহা ও অ্যালুমিনিয়াম দিয়ে মণ্ডপ বানিয়েছে সেলিমপুর পল্লি। বাবুবাগান সর্বজনীনের থিম আগামীর বাংলা। যোধপুর গার্ডেন সর্বজনীন থিম করেছে চন্দ্রযান-৩-এর সফল অভিযানকে।

কালীঘাটের দুর্গাপূজার মণ্ডপ
ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

সল্ট লেকের সি-ই ব্লক থিম করেছে সুন্দরবনের পরিবেশ বাঁচানো নিয়ে। সল্ট লেকের এফ-সি ব্লক থিম করেছে মণিপুরের সহিংসতাকে নিয়ে। নাম দেওয়া হয়েছে মণিপুরের মা। কলকাতার ৩৩ পল্লি থিম করেছে পাহাড়ের বিপর্যয় নিয়ে। অশোকনগর সর্বজনীন থিম করেছে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ নিয়ে। রামবাগানের থিম এবার  মশা। অশোকনগরের চারের পল্লির থিম এবার সিন্ধু সভ্যতা। মিসরের পিরামিডকে থিম করেছে বেলঘরিয়া অমৃতনগর সর্বজনীন। ইলোরা ও কেদারনাথকে থিম করেছে বারইপুর সর্বজনীন। জাহাজকে থিম করেছে বরাহনগর লোল্যান্ড সর্বজনীন। নরেন্দ্রপুরের মিলন সংঘ এবার থিম করেছে ‘ভূতের রাজা দিল বর।’