দিল্লির সৌন্দর্যবর্ধনে সড়কের পাশে শিবলিঙ্গ, কে বানাল, তা নিয়ে বিতর্ক

জি-২০ সম্মেলন ঘিরে দিল্লির সৌন্দর্যবর্ধনে তৈরি শিবলিঙ্গসদৃশ ফোয়ারা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। আম আদমি পার্টির এক নেতার ‘এক্স’ হ্যান্ডেল (সাবেক টুইটার) থেকে নেওয়া।

জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের আগে ভারতের রাজধানী দিল্লির সৌন্দর্যবর্ধনকে ঘিরে অভাবিত এক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছে একগাদা শিবলিঙ্গ। রাস্তার পাশে সেই শিবলিঙ্গগুলো থেকে ফোয়ারার মতো গড়িয়ে পড়ছে জল। হিন্দু দেবতাকে রাস্তার ধারে এই পর্যায়ে নামিয়ে আনার জন্য দায়ী কে, কেন্দ্রীয় সরকার নাকি দিল্লি সরকার, তা নিয়ে শুরু হয়েছে তুমুল বিতর্ক।

এই রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বিতর্কে অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে শিবলিঙ্গগুলোর ভাগ্য। এখনো নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি, শিবলিঙ্গ ফোয়ারা কার মস্তিষ্ক থেকে এসেছে। কোন সংস্থাই-বা তা দিয়ে দিল্লির সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে। বিজেপি না আম আদমি পার্টি (আপ)—কে এর জন্য দায়ী।

দিল্লিতে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন বসতে চলেছে আগামী ৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংসহ সদস্য ও আমন্ত্রিত দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের এই সম্মেলনে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে। নরেন্দ্র মোদি এ উপলক্ষে ভারতের পাশাপাশি তাঁর নিজের ভাবমূর্তি উজ্জ্বলতর করে তুলতে সচেষ্ট। সে জন্য দিল্লিকে সাজিয়ে-গুছিয়ে ঝকঝকে তকতকে করে তুলতে চেষ্টার অন্ত নেই।

বিমানবন্দর থেকে যে পথ ধরে বিদেশি অতিথি-অভ্যাগতরা যাতায়াত করবেন, তার দুই পাশ নানাভাবে সাজানো হয়েছে। জায়গায় জায়গায় লাগানো হয়েছে জি-২০-এর লোগো। আলোর মালা, ফুলগাছ, স্থাপত্য, ম্যুরাল, ফোয়ারার বাহারের পাশাপাশি রাস্তার দুই ধারের দেয়ালে আঁকা হয়েছে নানা রকম ছবি। এই বিপুল সৌন্দর্যায়নেরই একটা অঙ্গ ওই শিবলিঙ্গ ফোয়ারা।

বিমানবন্দর থেকে মূল শহরের কেন্দ্রস্থলে আসার পথে ধলা কুঁয়ায় রাস্তার একপাশে সার সার বসানো হয়েছে কালো রঙের ওই শিবলিঙ্গগুলো। সেখান থেকে অবিরত বেরিয়ে আসছে জল। তাই দেখে হিন্দুত্ববাদী দক্ষিণপন্থী বিজেপি নেতারা বেজায় খেপে তুলোধুনো করছেন দিল্লির ‘আপ’ সরকারকে। বিজেপির অন্যতম মুখপাত্র চারু প্রজ্ঞা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’ হ্যান্ডেলে (সাবেক টুইটার) শিবলিঙ্গ ফোয়ারার ছবি দিয়ে আপ সরকারকে কটাক্ষ করে লিখেছেন, ‘শিবলিঙ্গ সাজানোর অঙ্গ নয়। শোপিস নয়। তা ছাড়া ধলা কুঁয়াও জ্ঞানবাপি নয়।’

কেউ কেউ আবার লিখেছেন, ‘বাহ্, জি-২০ আসরে শিবলিঙ্গ ফোয়ারা! ঠিক এভাবে হিন্দুদের ধর্মীয় বিষয়কে ঠাট্টা-তামাশার পর্যায়ে নামিয়ে আনা হয়েছে। নতুন ভারতে ধর্মনিরপেক্ষ সরকার হিন্দু তীর্থ ও ধর্মীয় প্রতীকগুলোকে হয় পর্যটককেন্দ্র করে তুলেছে, নতুবা কৌতুকের বিষয়। এখন থেকে হিন্দুরা তাঁদের বাগানে শিবলিঙ্গ দিয়ে ফোয়ারা তৈরি করবে। মুসলমানেরা ঠিক এমনটাই করেছিল জ্ঞানবাপি মসজিদে।’

কিন্তু কে বা কারা কাজটি করেছে, সেটা অজানা বলে কোনো কোনো দল বিজেপিরও সমালোচনায় নেমেছে। যেমন ভারত রাষ্ট্র সমিতি (সাবেক তেলেঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতি)। ওই দলের নেতা ওয়াই সতীশ রেড্ডি ‘এক্স’-এ লিখেছেন, ‘মোদি সরকার হিন্দুত্ববাদ নিয়ে যাচ্ছেতাই শুরু করেছে। হিন্দুধর্মকে উপহাসের পাত্র করে তুলেছে। শিবলিঙ্গ দিয়ে বিনোদনের ব্যবস্থা করেছে। ধিক। এখনই ওগুলো সরিয়ে ফেলা হোক।’

সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ওই শিবলিঙ্গ ফোয়ারাগুলো নাকি ওডিশা থেকে আনানো হয়েছে। কিন্তু কাজটা কাদের করা? বড় প্রশ্ন সেটাই। সেই রহস্য এখনো অনুদ্ঘাটিত।

এই বিতর্ক শুরুর আগে দিল্লির সৌন্দর্যায়নের কৃতিত্ব দাবি করেছিল বিজেপি ও আপ—দুই দলই। দিল্লির মন্ত্রী সৌরভ ভরদ্বাজ দাবি করেছিলেন, রাজধানী সাজানো হচ্ছে দিল্লির সরকারের টাকায়।

আপকে কৃতিত্বের ভাগ না দিয়ে বিজেপির দিল্লি প্রদেশের সভাপতি বীরেন্দ্র সচদেব আবার বলেছিলেন, দিল্লি সাজানোর কাজে যেসব সংস্থা রয়েছে, প্রতিটিই কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন। যেমন নিউ দিল্লি মিউনিপ্যাল করপোরেশন, দিল্লি উন্নয়ন পর্ষদ, ভারতীয় বিমানবাহিনী, দিল্লি ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট অথোরিটি, দিল্লি পুলিশ এবং পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এখানে দিল্লির আম আদমি সরকারের কোনো ভূমিকাই নেই। এখন বিতর্ক বাধায় দুই দলই একে অন্যের দিকে আঙুল তুলছে।

বিতর্কের অবসান কীভাবে ঘটে, সেটাই দেখার। শিবলিঙ্গ ফোয়ারাগুলো সরানো হবে কি না, সেটা একটা বিষয়। তবে আরও গুরুত্বপূর্ণ, এই সিদ্ধান্তের দায়ভার কার, সেই রহস্যের সমাধান হওয়া।