দুই মুখ্যমন্ত্রী ভারত-মিয়ানমার সীমান্তের বিরোধিতা করলেও পক্ষে আসামের মুখ্যমন্ত্রী

আসামের বিজেপিদলীয় মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মাছবি: এএনআই

উত্তর-পূর্ব ভারতের দুটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীসহ তিন রাজ্যের আদিবাসী সামাজিক সংগঠন ভারত-মিয়ানামার সীমান্ত বন্ধের কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করলেও আরেক রাজ্য আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা এই সিদ্ধান্তের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ আবারও সীমান্ত বন্ধের সিদ্ধান্তের কথা জানানোর পর হিমন্ত এই বক্তব্য দিলেন।

আসামের বিজেপিদলীয় মুখ্যমন্ত্রী ভারত-মিয়ানমার সীমান্তে বেড়া দেওয়ার সিদ্ধান্তের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে ধন্যবাদ জানান। তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তের প্রশংসা করে গতকাল বলেন, এই ‘সাহসী সিদ্ধান্ত’ উত্তর-পূর্ব ভারতে বিরাট স্থিতিশীল প্রভাব ফেলবে।

হিমন্ত বলেন, অত্যাধুনিক বেড়া ও আরও উন্নত নজরদারি ব্যবস্থার মাধ্যমে সীমান্তের বিদ্রোহ এবং অনুপ্রবেশের ঘটনা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।

এর আগে গতকাল অমিত শাহ দ্বিতীয়বারের মতো বলেন, ভারতের পুরো সীমান্ত সিল করার বিষয়ে নরেন্দ্র মোদি সরকার ‘প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’।

গত ২০ জানুয়ারি প্রথম ভারত-মিয়ানামার সীমান্ত বন্ধের বিষয়ে নির্দিষ্টভাবে ভারত সরকারের মনোভাব প্রকাশ্যে এনেছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার উত্তর-পূর্ব ভারতে মিয়ানমারের সঙ্গে থাকা ১ হাজার ৬৪৩ কিলোমিটার সীমান্তে বেড়া দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

অমিত শাহ বলেন, উন্নত নজরদারির সুবিধার্থে সীমান্তে টহল দিতে সড়কও প্রশস্ত করা হবে।’ মণিপুরের টেংনুপাল জেলার মোরেতে ১০ কিলোমিটার অঞ্চলে ইতিমধ্যেই বেড়া দেওয়া হয়েছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ ছাড়া হাইব্রিড সার্ভিল্যান্স সিস্টেমের (মিশ্র নজরদারি ব্যবস্থার প্রযুক্তি) মাধ্যমে বেড়া দেওয়ার দুটি পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শেষ করা হবে। সরকার অরুণাচল প্রদেশ এবং মণিপুরে এক কিলোমিটার করে বেড়া দেবে।

অমিত শাহ বলেন, মণিপুরে প্রায় ২০ কিলোমিটার বেড়া দেওয়ার কাজের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্পও শিগগিরই শুরু হবে।

এর আগে গত শনিবার বিদ্রোহী নেতা ইয়ুং অং-এর নেতৃত্বাধীন নাগাল্যান্ড রাজ্যের প্রধান সশস্ত্র বিদ্রোহী সংগঠন ন্যাশনাল সোশ্যালিস্ট কাউন্সিল অব নাগাল্যান্ড-খাপলাং (এনএসসিএন-কে) গোষ্ঠী এক বিবৃতিতে বলেছিল, ভারত-মিয়ানমার সীমান্তে বেড়া দেওয়া এবং ‘ফ্রি মুভমেন্ট রেজিম’ (এফএমআর) বা অবাধ চলাচল চুক্তি বাতিল করার ভারত সরকারের সিদ্ধান্ত ইতিবাচক হবে না।

সীমান্তে বেড়া দেওয়ার সিদ্ধান্তকে ‘উসকানিমূলক’ উল্লেখ করে এনএসসিএন–কে বলেছিল, এতে নাগা সার্বভৌমত্বের ইস্যু এবং সে–সংক্রান্ত আলোচনা আরও জটিল হবে। নিরাপত্তা ও মাদক নিয়ন্ত্রণের অজুহাতে নাগা পরিবারগুলোকে শারীরিকভাবে বিভক্ত করার এই পদক্ষেপ শুধু অযৌক্তিক ও অগ্রহণযোগ্যই নয়, বরং সার্বভৌমত্বের জন্য নাগা জনগণের সংগ্রামের পরিপন্থী।

এনএসসিএনের দুটি গোষ্ঠীই (একটি বৈধ ও স্বীকৃত এনএসসিএন-আইএম এবং অন্যটি সশস্ত্র ও নিষিদ্ধ এনএসসিএন-কে) সীমান্ত বেড়া দিয়ে বন্ধ করার বিরোধিতা করেছে।

গত ২০ জানুয়ারি আসামে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সীমান্ত বন্ধের সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর মিজোরামের প্রধান সামাজিক সংগঠন ইয়ং মিজো অ্যাসোসিয়েশন (ওয়াইএমএ) বা সেন্ট্রাল ইয়াং মিজো অ্যাসোসিয়েশন, মণিপুর ও মিজোরামে আদিবাসী কুকি সমাজের সামাজিক সংগঠন কুকি-ইনপি এবং মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী লালদুহোমাও মিয়ানমারের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত বন্ধের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন। নাগাল্যান্ডের মুখ্যমন্ত্রীও ইঙ্গিত দেন, সীমান্ত বন্ধ করলে তার ফল ভালো না–ও হতে পারে।

ভারত-মিয়ানমার সীমান্তের দুপাশে বসবাসকারী ব্যক্তিদের ভিসা ছাড়াই একে অন্যের অঞ্চলে ১৬ কিলোমিটার পর্যন্ত যেতে দেওয়া হয়। ভারতের চার রাজ্য অরুণাচল প্রদেশ, নাগাল্যান্ড, মণিপুর ও মিজোরামের মিয়ানমারের সঙ্গে ১ হাজার ৬৪৩ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে।