কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে ত্রিপুরা থেকে পৃথক রাজ্যের দাবি জানাল টিপ্রা মোথা

ত্রিপুরার মানচিত্র

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ত্রিপুরা রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে লড়েছিল ত্রিপুরার প্রধান আদিবাসী দল টিপ্রা মোথা। পৃথক রাজ্যের দাবিকে সামনে রেখে তখন তারা নির্বাচনী প্রচার চালিয়েছিল। আজ মঙ্গলবার আগরতলায় ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি এ কে মিশ্রর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে বৈঠক হয়েছে টিপ্রা মোথার সাবেক চেয়ারম্যান ও প্রতিষ্ঠাতা প্রদ্যুৎ দেববর্মার। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন টিপ্রা মোথার নেতৃত্ব।

বৈঠকে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ উঠেছিল বলেও উত্তর-পূর্ব ভারতের গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন ত্রিপুরা মোথার অন্যতম শীর্ষ নেতা অনিমেষ দেববর্মা।

দেববর্মা বলেন, ‘বাংলাদেশে অস্থির পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে তার প্রভাব ত্রিপুরায়ও পড়বে। ইতিমধ্যেই মানব পাচার, মাদক পাচারের কারণে ত্রিপুরা যথেষ্ট চাপের মধ্যে রয়েছে। এসব বিষয় আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিকে জানিয়েছি। বলেছি, আমাদের দাবিকে সমাধানের রাস্তায় নিয়ে যেতে হবে। আমরা চাই না, ত্রিপুরায় মণিপুরের মতো সহিংসতার বাতাবরণ তৈরি হোক বা নাগাল্যান্ডের মতো অনির্দিষ্টকাল আলোচনা চলুক। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে।’

ত্রিপুরায় ক্ষমতাসীন বিজেপির পরই সবচেয়ে বেশি আসন পেয়ে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে টিপ্রা মোথা।

বৈঠকের পরে দলের প্রধান প্রদ্যুৎ দেববর্মা গণমাধ্যমকে বলেন, বৃহত্তর টিপ্রাল্যান্ডের জন্য তাঁদের যে প্রাথমিক দাবি, সে বিষয়ে কোনো আপসরফা হয়নি।

প্রদ্যুৎ দেববর্মা  বলেন, ‘আমরা এ কে মিশ্রকে দৃঢ়ভাবে আমাদের অবস্থান জানিয়েছি। এখন আমাদের দাবিগুলো মূল্যায়ন করা কেন্দ্রীয় সরকারের দায়িত্ব। আমরা একটি পৃথক প্রশাসনসহ চূড়ান্ত সমাধান হিসেবে বৃহত্তর টিপ্রাল্যান্ড প্রতিষ্ঠার জন্য সুনির্দিষ্ট আহ্বান জানিয়েছি। সরকারের বিকল্প প্রস্তাব থাকলে সেই প্রস্তাব লিখিতভাবে আমাদের কাছে জমা দেওয়ার অনুরোধ করব। আমরা সেগুলো যথাযথভাবে বিবেচনাও করব।’

ত্রিপুরায় পৃথক আদিবাসী রাজ্যের দাবি খতিয়ে দেখতে কেন্দ্রের নিযুক্ত এ কে মিশ্র একজন জ্যেষ্ঠ পুলিশ অফিসার। অবসরে যাওয়ার পর তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উত্তর–পূর্ব ভারতের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছেন।

আদিবাসীদের দীর্ঘদিনের প্রান্তিকতার কথা তুলে ধরে টিপ্রা মোথার নেতৃত্ব এ কে মিশ্রকে বলেছেন, বৃহত্তর টিপ্রাল্যান্ডের দাবিটি দৃঢ়ভাবে ভারতের সাংবিধানিক অধিকারের মধ্যে নিহিত।

প্রদ্যুৎ দেববর্মা বলেন, তাঁরা বিষয়টি শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের লক্ষ্যে কাজ করছেন। তবে তাঁদের পৃথক রাজ্যের দাবির ব্যাপারে কোনো আপস করতে তাঁরা ইচ্ছুক নন। ত্রিপুরার আদিবাসীদের জন্য সমান প্রতিনিধিত্ব ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার দায়িত্ব এখন কেন্দ্রীয় সরকারের।

এ কে মিশ্র ধৈর্য ধরে দুই ঘণ্টা আদিবাসী নেতাদের বক্তব্য শুনেছেন বলে জানান টিপ্রা মোথার নেতৃত্ব। মিশ্র গতকাল সোমবার ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহার সঙ্গেও বৈঠক করেন। মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, আদিবাসী উন্নয়নসহ রাজ্যের সার্বিক উন্নয়নের বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিকে বিস্তারিত জানানো হয়েছে। তবে পৃথক রাজ্যের বিষয়টি নিয়ে মিশ্রর সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি।

পূর্ব ত্রিপুরাঘেঁষা দক্ষিণ আসামের বাঙালি–অধ্যুষিত বরাক উপত্যকার তিন জেলায় পৃথক রাজ্যের আন্দোলন সবে শুরু হয়েছে। এই একই আন্দোলন আদিবাসী অঞ্চলে ত্রিপুরায় শুরু করেছে টিপ্রা মোথা। পর্যবেক্ষকেরা মনে করছেন, এই অঞ্চলে এ ধরনের পৃথক রাজ্যের আন্দোলন ভবিষ্যতে উত্তর-পূর্ব ভারতে অস্থিরতা বাড়াবে।