মোদি বোঝালেন, অপারেশন সিঁদুর নিয়ে সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকতে তিনি নারাজ
ভারতের নরেন্দ্র মোদির সরকার বুঝিয়ে দিল, পেহেলগামকাণ্ড বা অপারেশন সিঁদুর নিয়ে আলোচনার জন্য সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকার কোনো আগ্রহ তাদের নেই। গতকাল বুধবার সংসদীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজু সংসদের বর্ষাকালীন অধিবেশনের দিনক্ষণ ঘোষণা করেন। ২১ জুলাই শুরু হয়ে সেই অধিবেশন চলবে আগামী ১২ আগস্ট পর্যন্ত।
এত দিন ধরে বিরোধীরা বিশেষ অধিবেশন ডাকার দাবি জানাচ্ছিলেন। বিভিন্ন দল নিজেদের মতো সেই দাবি তুলেছে। দুই দিন আগে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের পক্ষেও ১৬টি দল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে এ বিষয়ে চিঠি দেয়। কিন্তু তা নিয়ে কোনো মন্তব্য না করে সরকার বর্ষাকালীন অধিবেশনের তারিখ জানিয়ে দিল। স্পষ্টতই এর মধ্য দিয়ে সরকার বোঝাতে চেয়েছে, বিশেষ অধিবেশন ডাকার কোনো বাসনা তাদের নেই।
সংসদীয় ভারতের ইতিহাসে এত দিন আগে অধিবেশনের দিনক্ষণ জানানোর নজির নেই। সরকার এ ঘোষণা করল ৪৭ দিন আগে।
দুই বা তিন দিনের জন্য সংসদের উভয় কক্ষের বিশেষ অধিবেশন ডাকা হলে সদস্যরা শুধু পেহেলগামকাণ্ড ও অপারেশন সিঁদুর নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার সুযোগ পেতেন। পূর্ণ অধিবেশনে সেই সুযোগ ততটা থাকে না।
শুধু বিশেষ অধিবেশনই নয়, প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার দাবিও সরকার মানেনি। পেহেলগামকাণ্ডের পর দুবার সর্বদলীয় বৈঠক ডাকা হয়। দুই বৈঠকের একটিতেও প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন না। প্রথমবার বৈঠক ডেকেও তিনি চলে যান বিহার। দ্বিতীয়বার দিল্লিতে থাকা সত্ত্বেও তিনি বৈঠকে অনুপস্থিত থাকেন। তাঁকে প্রশ্ন করার কোনো সুযোগ বিরোধী নেতাদের তিনি দেননি।
অথচ এ দুই ঘটনা নিয়ে বহু প্রশ্ন বিরোধীদের মধ্যে রয়েছে। কাদের ব্যর্থতায় পেহেলগামকাণ্ড ঘটল, আজ পর্যন্ত জানা যায়নি। আততায়ীরা কেন এখনো অধরা, সে প্রশ্নের জবাব মেলেনি। অপারেশন সিঁদুরে ভারতের ক্ষয়ক্ষতির খতিয়ান এখনো প্রকাশ করা হয়নি। যুদ্ধবিরতি ঘোষণায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভূমিকা নিয়ে এখনো কোনো স্বচ্ছতা নেই। সরকারের দাবি অনুযায়ী ভারতের আক্রমণে পাকিস্তান দিশাহারা হয়ে গিয়েছিল। তা হলে সুবিধাজনক অবস্থানে থেকেও ভারত কেন আচমকা যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে সায় দিল—এমন বহু প্রশ্ন তোলার সুযোগ পেতে বিরোধী নেতারা বিশেষ অধিবেশন ডাকার দাবি জানিয়েছিলেন। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেছিলেন, বিদেশি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া ভারতের সেনা সর্বাধিনায়ক অনিল চৌহানের সাক্ষাৎকার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকা হলে সেসব প্রশ্ন উত্থাপনের সুযোগ পাওয়া যাবে। খাড়গে বলেছিলেন, সব দল সংকটের সময় সরকারের পাশে থেকেছে। কিন্তু তার সুযোগ নিয়ে মোদি সরকার দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করছে।
বর্ষাকালীন অধিবেশনের দিন ঘোষণার পর কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ এক্সে লেখেন, বিরোধীদের দাবি থেকে পালানোর জন্যই এত আগেভাগে সংসদের পরবর্তী অধিবেশনের তারিখ জানানো হলো। অধিবেশন শুরুর যে ঘোষণা সাধারণত কিছুদিন আগে করা হয়, এবার তা করা হলো ৪৭ দিন আগে। যেসব প্রশ্নের জবাব প্রধানমন্ত্রী এখনো দেননি, ছয় সপ্তাহ পর সংসদের অধিবেশনে সেগুলোর জবাব তাঁকে দিতে হবে।