হরিয়ানায় সহিংসতায় নিহত ৫, দোকানপাটে আগুন, লুটপাট
দিল্লির লাগোয়া হরিয়ানা রাজ্যের গুরুগ্রামের দুই পক্ষের সংঘর্ষের আগুন রাজ্যের অন্যত্র ছড়িয়ে পড়েছে। গতকাল সোমবার দফায় দফায় সংঘর্ষে পাঁচজন নিহত হন। আহত হয়েছেন প্রায় ১০০। হরিয়ানার নুহ জেলায় এক ধর্মীয় শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে যে সংঘর্ষের শুরু, আজ মঙ্গলবার তা পার্শ্ববর্তী কয়েকটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।
নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে দুজন নিরাপত্তারক্ষী, দুজন সাধারণ মানুষ ও একজন মসজিদের ইমাম রয়েছেন।
রাজ্য পুলিশ হিংসা বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া সত্ত্বেও নতুন নতুন এলাকায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ছে। ভাঙচুর, লুটপাট করা হয়েছে বহু দোকানপাটে। আগুন লাগানো হয়েছে বহু ব্যবসায়িক স্থাপনা ও গাড়িতে। গুজব রুখতে সাময়িকভাবে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে ইন্টারনেট ব্যবস্থা। জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা।
সংঘর্ষের শুরু গতকাল নুহ জেলায় এক ধর্মীয় শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে। বিশ্ব হিন্দু পরিষদসহ কয়েকটি উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন এক ধর্মীয় শোভাযাত্রা বের করে। কয়েক দিন আগে থেকেই এ শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে সামাজিক মাধ্যমে প্রচার চালানো হচ্ছিল। মনু মানেসর নামের এক উগ্র হিন্দুত্ববাদী যুব নেতা ওই শোভাযাত্রায় থাকবেন বলে প্রচার চালানো হচ্ছিল। এ যুব নেতার বিরুদ্ধে রাজস্থানে মামলা চলছে। রাজ্য পুলিশ তাঁকে খুঁজছে। অভিযোগ, তিনি সেই রাজ্যে গোহত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে দুই মুসলমান যুবককে পুড়িয়ে মেরেছিলেন।
ধর্মীয় শোভাযাত্রা ঘিরে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও বজরং দলের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল। শোভাযাত্রাটি নুহ জেলার কাছে এলে তা থামাতে ব্যাপক ইটবৃষ্টি শুরু হয়। এ সময় বহু গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। শোভাযাত্রাকারীরা প্রাণভয়ে স্থানীয় এক মন্দির প্রাঙ্গণে আশ্রয় নেন।
এ সংঘর্ষের রেশ চলে রাতভর এবং তা রাজ্যের আশপাশের জেলাতেও ছড়িয়ে পড়ে। গতকাল রাতেই গুরুগ্রাম জেলার একটি মসজিদে দুষ্কৃতকারীরা আক্রমণ চালায়। তারা মসজিদে আগুন ধরিয়ে দেয়। গুলিও চালায়। গুলিবিদ্ধ হয়ে ওই মসজিদের ইমাম মারা যান বলে পুলিশ সূত্রের খবর। কয়েকজন আহতও হন।
আজ হিংসা ছড়িয়ে পড়ে ওই জেলারই বাদশাহপুরে। পুলিশ সূত্রের খবর, প্রায় ২০০ জনের এক সশস্ত্র দল এলাকার বিভিন্ন দোকানে হামলা চালায়। আগুন ধরিয়ে দেয়। মাংস ও বিরিয়ানি বিক্রি হয়, এমন ১৪টি দোকানে হামলা চালানো হয়।
একটি যাত্রীবোঝাই বাস ছিনতাই করে কিছু দুষ্কৃতকারী নুহ জেলায় একটি থানার পাঁচিলে ধাক্কা মারে। তারা থানায় ঢুকে ভাঙচুর চালায়। বেশ কিছু নথি নষ্ট করে। পুলিশের অভিযোগ, দুষ্কৃতকারীরা সম্ভবত কিছু রেকর্ড নষ্ট করতে চেয়েছিল। ওই জেলায় সাইবার অপরাধের সংখ্যা খুব বেশি।
দিল্লির একেবারে লাগোয়া গুরুগ্রাম। সেখানকার পুলিশের এক কর্মকর্তা আজ পিটিআইকে বলেন, বিক্ষিপ্ত কয়েকটি ঘটনা ঘটলেও পরিস্থিতি মোটের ওপর শান্ত ও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তিনি জানান, স্পর্শকাতর এলাকায় পুলিশ ফ্ল্যাগ মার্চ করছে। ১৪৪ ধারা জারি করা আছে। সাবধানতামূলক ধরপাকড় চালানো হচ্ছে। শান্তি রক্ষায় প্রচার চালানো হচ্ছে।
গতকালের ঘটনার পর থেকে নুহ, পালওয়াল, ফরিদাবাদ, গুরুগ্রামসহ বেশ কিছু জেলায় স্কুল–কলেজ বন্ধ রাখা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খাট্টার, বিরোধী কংগ্রেস নেতা সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ভূপিন্দর সিং হুডাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা সবার প্রতি শান্তি বজায় রাখার আবেদন জানিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী দফায় দফায় বৈঠক করেছেন। তাঁর শঙ্কা, কোনো স্বার্থন্বেষী মহল অশান্তি সৃষ্টির চক্রান্ত করছে।
রাজস্থান পুলিশ যাঁকে হন্যে হয়ে খুঁজছে, সেই মনু মানেসর কী করে হরিয়ানায় লুকিয়ে থাকেন, সেই প্রশ্ন উঠছে। কয়েক দিন ধরে ওই ধর্মীয় শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে সামাজিক মাধ্যমে যে প্রচার চালানো হয়েছে, তা রুখতেই বা রাজ্য পুলিশ কী করেছে, সেই প্রশ্নও উঠছে। হরিয়ানার ক্ষমতায় রয়েছে বিজেপি। সেখানকার বিধানসভার ভোট ২০২৪ সালের দ্বিতীয়ার্ধে। কেউ কেউ ধারণা করছেন, লোকসভা ভোটের সঙ্গেই রাজ্যের বিধানসভা ভোট করানো হতে পারে।