পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত নির্বাচনে ব্যাপক সন্ত্রাস, সমালোচনায় খোদ তৃণমূল নেতারাই

পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচন চলাকালে দুই দলের সংঘর্ষপ্রথম আলো ফাইল ছবি

পশ্চিমবঙ্গের ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত নির্বাচনে এবার ব্যাপক সন্ত্রাস হয়েছে। সর্বশেষ খবরে বলা হয়েছে, গত ৩৮ দিনে নির্বাচন এবং নির্বাচনোত্তর সংঘর্ষে মারা গেছেন ৫৪ জন। এর মধ্যে তৃণমূলের রয়েছেন ২২ জন। নির্বাচন নিয়ে এই ব্যাপক সন্ত্রাস এবং জীবনহানিকে মেনে নিতে পারেননি খোদ শাসক দলের অনেক নেতাও। তাঁরাও সমালোচনা করেছেন এই সন্ত্রাসের।

দমদমের শাসক দল তৃণমূলের সংসদ সদস্য সৌগত রায় বলেছেন, নির্বাচন হয়েছে সন্ত্রাসের আবহে।

সৌগত রায় আরও বলেছেন, ‘দলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় শান্তিপূর্ণ ভোটের কথা বলেছিলেন। কিন্তু পঞ্চায়েত নির্বাচনে অশান্তি হয়েছে। ভোটে এই রাজ্যে যত জীবন গেছে তার বেশির ভাগই আমাদের দলের।’

তৃণমূলের আরেক নেতা ও বিধায়ক তাপস রায় বলেছেন, ‘পঞ্চায়েত নির্বাচনে হিংসার জন্য দায়ী পুলিশ প্রশাসন। এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে আমাদের কর্মীরাই বেশি আক্রান্ত হয়েছেন। আমরা তাদের রক্ষা করতে পারিনি। এর দায় আমাদের। কিছু পুলিশ অকর্মণ্য, অপদার্থ, তাদের একটা অংশ নির্বাচন নিয়ে মজা দেখেছে। আমাদের দলকে হেয় করার জন্য।’

দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার ভাঙরের তৃণমূলের দাপুটে নেতা আরাবুল ইসলাম। ভাঙরে ব্যাপক সন্ত্রাসের সময় ভোট গণনাকালে তাঁকে ফেলে তৃণমূলের অন্য নেতারা পালিয়ে গেছেন বলে অভিযোগ করেছেন। অভিমানে আরাবুল বলেছেন, ‘আর দল নয়, এবার দল ছাড়ব। এখন আমি বাদে দলের দায়িত্ব অন্য কেউ নিলে আমি খুশি হব। আমি সবার জন্য কাজ করতে পরিনি। সবাই আমার পাশেও দাঁড়ায়নি।’

গতকাল অবশ্য এই ভাঙরে আবরাবুল ইসলাম এবং বিধায়ক শওকত মোল্লাকে ১৪৪ ধারার জারি থাকার কারণে ঢুকতে দেয়নি পুলিশ। শুধু তা-ই নয়, ভাঙরের আইএসএফ দলীয় বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকিকেও গতকাল ঢুকতে দেয়নি পুলিশ। এতে ক্ষুব্ধ হন তাঁরা।

আবার কলকাতার সাবেক মেয়র ও একসময়ের তৃণমূল নেতা এবং বর্তমানে দলহীন নেতা শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, রাজ্য বিরোধীশূন্য হওয়া শুভ নয়। গণতান্ত্রিক পদ্ধতির পক্ষেও সুখবর নয়।

শোভন চট্টোপাধ্যায় অবশ্য তৃণমূল থেকে বিজেপিতেও যোগ দিয়েছিলেন।

কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেছেন, ওরা তো পুলিশকে পুতুল করে রেখে রাজ্য চালাচ্ছে। মানুষ তা দেখছে।

তৃণমূলপন্থী কলকাতার প্রখ্যাত চিত্রকর শুভাপ্রসন্ন তাঁর আগের অবস্থান থেকে উল্টো ঘুরে গেছেন। সন্ত্রাসের জন্য তিনি শাসক দলকে দুষলেও এবার বলেছেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কড়া হাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছেন। এত লোকের মৃত্যু হয়নি। সবকিছু বাড়িয়ে দেখানো হচ্ছে। এটা উল্টো সুরের কথা নয়। আপনারা সব সুর বিশেষজ্ঞ হয়ে সোজা উল্টো ধরতে নেমেছেন। একটু রসিয়ে জমিয়ে টিআরপি বাড়াতে চাইছেন।’

যদিও শুভাপ্রসন্নের ওই মন্তব্যের পর তৃণমূল নেতা ও মুখপাত্র এবং দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলছিলেন, মাঝেমধ্যে ওর চুলকায়। মলম লাগানো দরকার।

আর গতকাল শুভাপ্রসন্নের ডিগবাজিতে কুণাল ঘোষ বললেন, শুভাদা এই কদিন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘রামের সুমতি’ পড়েছেন। তাই শুভাদারও সুমতি হয়েছে।