২০ রুপির জন্য ২২ বছর ধরে মামলা লড়ে জয়

তুগনাথ চতুর্বেদী ২২ বছর ধরে মামলা লড়েছেন
ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

ট্রেনের টিকিট কাটার সময় অতিরিক্ত ২০ রুপি নিয়েছিলেন বুকিং কাউন্টারের কর্মী। সেই ঘটনায় ২২ বছর আগে দায়ের করা মামলা লড়ে জিতেছেন এক ব্যক্তি। ক্ষতিপূরণ হিসেবে ওই ব্যক্তিকে ৩০ দিনের মধ্যে ১৫ হাজার টাকা দিতে বলেছেন আদালত। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ক্ষতিপূরণ না দিলে জরিমানার অঙ্ক বেড়ে বলে রায়ে বলা হয়েছে। খবর বিবিসির

ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের উত্তর প্রদেশে। দীর্ঘদিন ধরে মামলা লড়ে জয়লাভ করা তুগনাথ চতুর্বেদী পেশায় একজন আইনজীবী। ১৯৯৯ সালে মথুরা ক্যান্টনমেন্ট রেলস্টেশন থেকে ট্রেনের দুটি টিকিট কেনেন তিনি। ওই সময় ৩৫ রুপি করে দুটি টিকিটের দাম হয় ৭০ রুপি। এজন্য তিনি টিকিট কাউন্টারে থাকা বুকিং কর্মীকে ১০০ রুপি দেন। কিন্তু রেলওয়ে কর্মী তাকে ১০ রুপি ফেরত দেন। বাড়তি ২০ টাকা ফেরত চেয়েও পাননি তিনি।

তুগনাথ চতুর্বেদী উত্তর প্রদেশের মথুরা থেকে মোরাদাবাদে যাচ্ছিলেন। বাড়তি টাকা রাখার বিষয়টি রেলওয়ে কর্মীকে বললেও টাকা ফেরত দেনন তিনি। পরে উত্তর পূর্ব রেলওয়ে (গোরখপুর) এবং মথুরার একটি ভোক্তা আদালতে বুকিং কাউন্টারের কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেন।

ভারতে ভোক্তা আদালত পরিষেবা সম্পর্কিত অভিযোগগুলো নিয়ে দেখাশোনা করে। কিন্তু আদালতগুলোতে বছরের পর বছর ধরে মামলা জট লেগে থাকে। এজন্য সাধারণ মামলাগুলো সমাধান করতেও দীর্ঘ সময় লেগে যায়।

এই মামলায় এক শরও বেশি শুনানিতে অংশ নিয়েছেন তুগনাথ চতুর্বেদী। তিনি বলেন, ‘এই মামলা লড়তে গিয়ে আমি যে শক্তি ও সময় হারিয়েছি তার মূল্য কেউ দিতে পারবে না।’

চতুর্বেদী বলেন, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ মামলাটি খারিজ করার চেষ্টা করেছিল। তারা বলেছিল, রেলওয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো একটি রেলওয়ে ট্রাইব্যুনালে মীমাংসা করা উচিত, ভোক্তা আদালতে নয়। এ অবস্থায় ২০২১ সালে সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়কে উদাহরণ হিসেবে নিয়ে প্রমাণ করা হয় যে, বিষয়টি নিয়ে ভোক্তা আদালতে শুনানি হতে পারে।

দীর্ঘ লড়াইয়ের পরে, আদালত ১৯৯৯ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর ১২ শতাংশ সুদে টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেন রেলওয়েকে। এজন্য রেলওয়েকে ১৫ হাজার জরিমানা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। রায়ে আরও বলা হয় ৩০ দিনের মধ্যে জরিমানার অর্থ প্রদান না করলে সুদের হার ১৫ শতাংশ বাড়ানো হবে।

চতুর্বেদী বলেন, তিনি যে ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন তা খুবই নগণ্য। কারণ মামলার কারণে যে মানসিক যন্ত্রণা তিনি ভোগ করেছেন তার কোনো ক্ষতিপূরণ হয় না। পরিবারের সদস্যরা সময় নষ্ট না করে অসংখ্যবার মামলা চালানো থেকে নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা করলেও তিনি থেমে যাননি। তিনি আরও বলেন, এখানে টাকা গুরুত্বপূর্ণ নয়। এটি ন্যায়বিচারের জন্য দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই। নিজে আইনজীবী হওয়ায় মামলা লড়তে কাউকে কোনো টাকা দিতে হয়নি। মামলায় কোনো আইনজীবী নিয়োগ দিতে হলে সেটি বেশ ব্যয়বহুল হত।