মোদির জন্মদিনে ভারত পাচ্ছে চিতা

নরেন্দ্র মোদি
ফাইল ছবি

ভারতের তেলেঙ্গানা রাজ্যের রাজধানী হায়দরাবাদের এমআইএম নেতা ও সংসদ সদস্য আসাউদ্দিন ওয়েইসি বিদ্রূপ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিতাবাঘের সঙ্গে তুলনা করেছেন। তিনি বলেছেন, দেশের গুরুতর সমস্যাগুলো এড়িয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী চিতাবাঘের চেয়েও দ্রুতগামী।

কথা নেই, বার্তা নেই, হঠাৎ এভাবে চিতার গতির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর তুলনা টানার কারণও আছে।  দীর্ঘ ৭৫ বছর পর ভারতে চিতাবাঘ ফিরে আসছে।  সেটা হতে চলেছে প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনের দিন। উজবেকিস্তানের সমরখন্দে আঞ্চলিক সম্মেলন থেকে দিল্লি ফিরেই তাই প্রধানমন্ত্রী রওনা হবেন মধ্যপ্রদেশ। সেখানে কুনো জাতীয় উদ্যানে চিতাবাঘের আনা উপলক্ষে এক অনুষ্ঠান হবে। ওই অনুষ্ঠানেই যোগ দিয়ে মোদি তাঁর ৭২তম জন্মবার্ষিকী উদ্‌যাপন করবেন।

আগামীকাল শনিবার ১৭ সেপ্টেম্বর নরেন্দ্র মোদির জন্মদিন। ওই দিনই আফ্রিকার নামিবিয়া থেকে ভারতে আসছে আটটি চিতা। আফ্রিকার অতিথিদের এ দেশে বসবাসের চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের দায়িত্বে যে বোয়িং বিমানটি বাছা হয়েছে, তার সম্মুখে আঁকা হয়েছে চিতার মুখ। এমন একটা হই হই রই রই ঘটনা ঘটবে অথচ প্রচারের আলোয় প্রধানমন্ত্রী উদ্ভাসিত হবেন না, তা কখনো হতে পারে? তার ওপর, যখন জন্মদিন থেকেই বিজেপি শুরু করছে ‘সেবা পক্ষ’? এক পক্ষকাল ধরে সারা দেশে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে যার মাধ্যমে পালিত হবে ‘বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য’। সেই বৈচিত্র্যের অন্যতম অঙ্গ হয়ে উঠতে চলেছে প্রধানমন্ত্রীর ‘চিতাসঙ্গ’।

আগে ঠিক ছিল, ৭৫তম স্বাধীনতা দিবসের অমৃতকাল উদ্‌যাপন উপলক্ষে ১৫ আগস্ট দেশে চিতা আগমন ঘটবে। শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন কারণে তা পেয়ে যায়। এখন তাদের বরণ করতে প্রস্তুত কুনো জাতীয় উদ্যান। বহুদিন থেকেই সেজেগুজে প্রস্তুত মধ্যপ্রদেশের কুনো বন্য প্রাণী অভয়ারণ্যের কমবেশি ৭৪০ বর্গকিলোমিটার অঞ্চল। নতুন অতিথিদের স্বাগত জানাবেন প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং। ৭৫ বছর পর তাঁর জন্মদিনের দিন থেকেই ভারতে শুরু হবে বন্য প্রাণী জীববৈচিত্র্যের এক নতুন অধ্যায়।

আজ থেকে ঠিক পৌনে এক শ বছর আগে, ১৯৪৭ সালে, আজকের ছত্তিশগড়ের অধুনালুপ্ত সরগুজা স্টেটের রাজা রামানুজ প্রতাপ সিং দেও দেশের শেষ তিনটি চিতা শিকার করেছিলেন। তার পাঁচ বছর পর ভারত সরকার দেশে চিতা নিঃশেষ হওয়ার কথা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছিল। দীর্ঘ ৭৫ বছর পর সেই শূন্যতা কাটতে চলেছে বিস্তর কাঠখড় পোড়ানোর পর। কাল শনিবার সেই মাহেন্দ্রক্ষণ।

সংসদ সদস্য ওয়েইসি কটাক্ষ করেছেন ঠিকই, তবে বিজেপির প্রচারযন্ত্র উদ্‌যাপনের ঢক্কা নিনাদে ঘাটতি রাখছে না। ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে জীববৈচিত্র্যের সংরক্ষণে প্রধানমন্ত্রীর সচেষ্ট হওয়ার প্রচার। চিতা আগমন দেশ-বিদেশের পর্যটকদের আকর্ষণ করবে। বেড়ে যাবে আয় ও কর্ম সংস্থানের সম্ভাবনা। শাসক দল বিজেপির ‘ডবল ইঞ্জিন’ তত্ত্বও প্রচারের অভিমুখ দখল করেছে। যদিও ১০০ দিনের কাজ কিংবা সরকারি ভর্তুকি সরাসরি গরিবদের ব্যাংক খাতায় জমা দেওয়ার মতো চিতার প্রত্যাবর্তনের মূল উদ্যোগও শুরু হয়েছিল কংগ্রেস আমলে।

মজার বিষয় এ ক্ষেত্রেও রয়েছে কেন্দ্র রাজ্য বিবাদ এবং রাজ্যস্তরীয় গরিমা সর্বজনীন করে না তোলার এক চিরায়ত কাহিনি। সেই কাহিনির কেন্দ্রেও রয়েছে নরেন্দ্র মোদির অবস্থান।

আরও পড়ুন

দেশে চিতার প্রত্যাবর্তনের প্রথম উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল সাতের দশকে। তখন ঠিক হয়েছিল  ইরান থেকে ভারতে আনা হবে এশিয়াটিক চিতা। কথাবার্তা অনেক দূর এগিয়ে যায় নতুন শতাব্দীতে। ইরান চিতা দিতে রাজি হয়, কিন্তু তার বদলে তারা ভারতের এশিয়াটিক সিংহ পাওয়ার দাবি জানায়। তাদের সেই ‘চিতা নাও, সিংহ দাও’ দাবিতে পানি ঢেলে দেন গুজরাটের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। শুধু ইরানকে সিংহ দিতে অরাজি হওয়াই নয়, গুজরাটের গির অভয়ারণ্য থেকে কিছু সিংহ কুনো অভয়ারণ্যের একাংশে নিয়ে আসার যে উদ্যোগ ২০০৯ সালে তৎকালীন কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশমন্ত্রী জয়রাম রমেশ নিয়েছিলেন, মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাতেও ভেটো দিয়েছিলেন। তাঁর যুক্তি ছিল, সিংহ গুজরাটের অনন্য ‘আইকন’। তার ওপর অন্য রাজ্যের অধিকার থাকতে পারে না।

আরও পড়ুন

নামিবিয়া থেকে আসছে আটটি চিতা। এর মধ্যে পাঁচটি পুরুষ, তিনটি নারী। ভারতে পাঠানোর বহু দিন আগে তাদের বিচ্ছিন্ন করা হয়। নিভৃতাবাসে রাখা হয়। রোগ–ভোগ আছে কি না, পরীক্ষা করা হয়। চিতাদের সঙ্গেই ভারতে আসছে নামিবিয়ার চিতা কনজারভেশন ফাউন্ডেশনের বিশেষজ্ঞেরা। ভারতে এনে তাদের প্রত্যেককে এক মাস নিভৃতাবাসে তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণের মধ্যে রাখা হবে। অভয়ারণ্যের আশপাশের ২৪টি গ্রামের বাসিন্দাদের অন্যত্র পুনর্বাসনের বন্দোবস্ত করা হয়েছে। চিতাদের শিকারের জন্য কুনো অভয়ারণ্যে বেশ কিছু দিন থেকেই ছাড়া হয়েছে কয়েকশ হরিণ ও বুনো শুয়োর। চিতার জন্য ভিনদেশি বন্য প্রাণী আমদানির ওপর যে নিষেধাজ্ঞা ছিল, দীর্ঘ প্রচেষ্টা শেষে চিতার জন্য সে বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের প্রয়োজনীয় অনুমতি আদায় করা হয়েছে। আগামী ৫ বছরে মোট ৫০টি চিতা আনার পরিকল্পনা রয়েছে ভারতের। নামিবিয়ার পর এই বছরেই দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে  আরও ১২টি চিতা আসার কথা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ গোটা দেশ এখন চিতাবরণে শনিবারের অপেক্ষায়।