ভারত-মিয়ানমার সীমান্ত বন্ধের বিরোধিতা নাগাল্যান্ডের এনএসসিএন-কের

ভারতের নাগাল্যান্ড ও মিজোরাম রাজ্য মিয়ানমার সীমান্তলাগোয়া
ফাইল ছবি: রয়টার্স

মিয়ানমারের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ার বিরোধিতা করেছে ভারতের নাগাল্যান্ড রাজ্যের প্রধান সশস্ত্র বিদ্রোহী সংগঠন ন্যাশনাল সোশ্যালিস্ট কাউন্সিল অব নাগাল্যান্ড-খাপলাং (এনএসসিএন-কে)। কয়েক দিন আগে নাগাল্যান্ডের প্রধান রাজনৈতিক এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী এনএসসিএন-আইএমও সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ার বিরোধিতা করেছিল।

গতকাল এক বিবৃতিতে বিদ্রোহী নেতা ইয়ুং অং-এর নেতৃত্বাধীন এনএসসিএন-কে বলেছে, ভারত-মিয়ানমার সীমান্তে বেড়া দেওয়া এবং ‘ফ্রি মুভমেন্ট রেজিম’(এফএমআর) বা অবাধ চলাচল চুক্তি বাতিল করতে ভারত সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ কোনো ইতিবাচক উদ্দেশ্য পূরণ করবে না।

এটিকে উসকানিমূলক পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করে এনএসসিএন-কে বলেছে, এর ফলে নাগা সার্বভৌমত্ব প্রসঙ্গ এবং সেই-সংক্রান্ত আলোচনার বিষয়টি আরও জটিল আকার ধারণ করবে। এই সশস্ত্র গোষ্ঠীর মতে, নিরাপত্তা ও মাদক নিয়ন্ত্রণের অজুহাতে অবিভক্ত নাগা পরিবারকে বিচ্ছিন্ন করার এই পদক্ষেপ ‘শুধু অযৌক্তিক এবং অগ্রহণযোগ্যই নয়, বরং সার্বভৌমত্বের জন্য নাগা জনগণের সংগ্রামের গুরুত্ব কমিয়ে দেয়।’

এর আগে মিজোরামের প্রধান সামাজিক সংগঠন ইয়ং মিজো অ্যাসোসিয়েশন (ওয়াইএমএ) বা সেন্ট্রাল ইয়াং মিজো অ্যাসোসিয়েশন, মণিপুর এবং মিজোরামে আদিবাসী কুকি সমাজের সর্ববৃহৎ সামাজিক সংগঠন কুকি-ইনপি এবং মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী লালদুহোমাও মিয়ানমারের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত বন্ধ করার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে।

নাগাল্যান্ডের মুখ্যমন্ত্রী মুখ্যমন্ত্রী নেইফিউ রিও ইঙ্গিত দিয়েছেন, সীমান্ত বন্ধ করলে তার ফল ভালো না-ও হতে পারে।

ভারত-মিয়ানমার সীমান্তের দুই পাশে বসবাসকারী ব্যক্তিদের ভিসা ছাড়াই দুই দেশের ১৬ কিলোমিটার পর্যন্ত যেতে দেওয়া হয়। ভারতের চারটি রাজ্য অরুণাচল, নাগাল্যান্ড, মণিপুর ও মিজোরাম প্রদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের ১ হাজার ৬৪৩ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে।

এই সীমান্তের ৫২০ কিলোমিটার রয়েছে অরুণাচল প্রদেশে, নাগাল্যান্ডে ২১৫, মণিপুরে ৩৯৮ ও মিজোরামে ৫১০ কিলোমিটার। এই ১ হাজার ৬৪৩ কিলোমিটার সীমান্তের মধ্যে ১ হাজার ৪৭২ কিলোমিটার চিহ্নিত করা হয়েছে। কিন্তু বেড়া দেওয়ার কাজ সম্পূর্ণ করা যায়নি। গত বছরে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

গত মাসের মাঝামাঝি আসাম পুলিশের কমান্ডো বাহিনীর ‘পাসিং ডে প্যারাডে’-তে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ গুয়াহাটিতে বলেছিলেন, উত্তর-পূর্ব ভারতে মিয়ানমারের সঙ্গে দীর্ঘ সীমান্ত বন্ধ করে দিতে যাচ্ছে ভারত। পুরো সীমান্ত বাংলাদেশের মতো বেড়া দিয়ে বন্ধ করা হবে।

অমিত শাহ আরও বলেছিলেন, মিয়ানমারের সঙ্গে ভারতের অবাধ যাতায়াতের চুক্তিও ভারত সরকার পুনর্বিবেচনা করবে। দুই দেশের মধ্যে আসা-যাওয়ার ব্যবস্থাও বন্ধ হবে।

এই বিবৃতির পরে প্রভাবশালী সংগঠন এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের অন্তত দুজন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন। এরপরে অবশ্য ভারত সরকারের তরফে এখন পর্যন্ত (গত দুই সপ্তাহে) আর কোনো বক্তব্য দেওয়া হয়নি।