আসাম সরকার ভুয়া বন্দুকযুদ্ধে নিহতদের সম্পর্কে হলফনামা দিতে আবার ব্যর্থ

বন্দুকযুদ্ধপ্রতীকী ছবি

আসামে ভুয়া বন্দুকযুদ্ধে নিহত ব্যক্তিদের বিষয়ে হলফনামা দাখিল করতে আবারও ব্যর্থ হয়েছে আসাম সরকার। এ নিয়ে তিনবার আদালতে হলফনামা দাখিল করতে ব্যর্থ হলো রাজ্য সরকার। ২০২৩ সালের ১২ জুলাই আদালতে আবেদনের মাধ্যমে আসাম সরকারকে একটি নোটিশ জারি করা হয়। আসাম সরকারকে ২০২৩ সালের ৩১ আগস্টের মধ্যে হলফনামা জমা দিতে বলা হয়। তারা তা দিতে পারেনি। এরপর ২০২৪ সালের ৪ জানুয়ারি আসাম সরকার হলফনামা পেশের জন্য আবার চার সপ্তাহের সময় চায়। কিন্তু এ সময়েও সরকার হলফনামা জমা দিতে পারেনি। সর্বশেষ গত শুক্রবার আবার চার সপ্তাহের সময় চেয়েছে আসাম সরকার।

আসাম সরকারের এ আবেদন খারিজ করে দেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সূর্যকান্ত এবং বিচারপতি কে ভি বিশ্বনাথনের সমন্বয়ে গঠিত একটি ডিভিশন বেঞ্চ। ওই বেঞ্চ হলফনামা দাখিলের জন্য দুই সপ্তাহ সময় দেন। আদালত বলেন, এটি চূড়ান্ত। এরপর আর সময় দেওয়া যাবে না।

২০২১ সালের ১০ মে থেকে ভুয়া বন্দুকযুদ্ধে নিহত ব্যক্তিদের বিষয়টি নিয়ে আইনজীবী আরিফ জোয়ারদারের দায়ের করা এসএলপির (স্পেশাল লিভ পিটিশন) ভিত্তিতে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট শুনানি চালাচ্ছেন। কিন্তু গত তিন বছরে আসাম সরকারের বিবৃতি জোগাড় করতে পারেননি সুপ্রিম কোর্ট। আইনজীবী জোয়ারদার ও তাঁর প্রতিনিধিত্বকারী জ্যেষ্ঠ আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণের অভিযোগ, আসাম পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ২০২১ সাল থেকে ৮০ জনের বেশি নিহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ভুয়া বন্দুকযুদ্ধে কমপক্ষে ২৮ জন নিহত ও ৪৮ জন আহত হয়েছেন।

আসাম পুলিশের বিরুদ্ধে আবেদনকারীদের প্রধান অভিযোগ, ২০১৪ সালে ভুয়া বন্দুকযুদ্ধে নিহত ব্যক্তিদের বিষয়ে অভিযোগ দায়েরের ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট যে নির্দেশিকা দিয়েছিলেন, সেই মোতাবেক পুলিশ থানায় অভিযোগ দায়ের করেনি। এ বিষয়ে আসাম সরকারের কাছে হলফনামা চাওয়া হয়। কিন্তু তা দিতে সরকারপক্ষ এখন পর্যন্ত ব্যর্থ।

গত শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের দুই সদস্যের বেঞ্চ আসাম সরকারের কাছে জানতে চায়, কেন আরও সময় তাদের দেওয়া উচিত, যখন উত্তর দেওয়ার জন্য যথেষ্ট সময় তারা পেয়েছে।

আবেদনকারীর পক্ষে আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ বলেন, নিহত বা আহত ব্যক্তিরা ভয়ংকর অপরাধী ছিলেন না। সব বন্দুকযুদ্ধেই পুলিশের বক্তব্য প্রায় একই ছিল। মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে সংখ্যালঘু মুসলমানের সংখ্যা বেশি। প্রশান্ত ভূষণ আরও যুক্তি দেন, অতীতে গুয়াহাটি হাইকোর্টে যখন ভুয়া বন্দুকযুদ্ধ নিয়ে মামলা করা হয়েছিল, তখন সেখানে হলফনামা জমা দিয়েছিল রাজ্য পুলিশ। তাহলে সেই নথির ভিত্তিতে এখন কেন তারা সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা পেশ করে জবাব দিতে চাইছে না, তা একটি বিস্ময়। বিষয়টি নিয়ে ভারতের জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ইতিমধ্যেই সর্বোচ্চ আদালতে তাদের বক্তব্য জানিয়েছে।