মেঘালয়ে নরেন্দ্র মোদির রাজনৈতিক সভার অনুমতি বাতিল

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি
ফাইল ছবি: রয়টার্স

ভারতের মেঘালয় রাজ্য বিধান সভা নির্বাচন ২৭ ফেব্রুয়ারি। ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী—সব পক্ষই নির্বাচনী প্রচারে ব্যস্ত। নির্বাচনী প্রচারের জন্য আগামী শুক্রবার রাজ্যের তুরাসহ কয়েকটি এলাকায় বড় জনসভা করতে চেয়েছিলেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কিন্তু মেঘালয় সরকার সেই নির্বাচনী সভার অনুমতি বাতিল করেছে। স্বাভাবিকভাবেই এটা নিয়ে অসন্তুষ্ট বিজেপি। গেরুয়া শিবির বলেছে, এভাবে প্রধানমন্ত্রী মোদিকে থামানো যাবে না।

কেন প্রধানমন্ত্রীকে তুরায় সভা করার অনুমতি দেওয়া হলো না, তা-ও জানিয়ে দিয়েছে মেঘালয়ের ক্রীড়া বিভাগ। ওই স্টেডিয়াম ক্রীড়া বিভাগের অধীন। পিএ সাংমা স্টেডিয়ামে নির্মাণকাজ চলছে। তাই এই অনুমতি দেওয়া হয়নি।

রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমার নিজের নির্বাচনী এলাকা পশ্চিম গারো পাহাড়ে দক্ষিণ তুরা এলাকায় ওই স্টেডিয়াম। বিজেপির রাজ্য সভাপতি আর্নেস্ট মাওরি এ ঘটনা অপমানজনক বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘এ স্টেডিয়াম তৈরি করতে বিজেপিশাসিত কেন্দ্রীয় সরকার অর্থ দিয়েছিল। সেই স্টেডিয়ামে প্রধানমন্ত্রীর সভার অনুমতি বাতিল করা হয়েছে। এটা নিন্দনীয় কাজ।’

বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ঋতুরাজ সিনহা এএনআইকে বলেছেন, ‘আমরা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে শিলং, তুরা ও গারো পাহাড়ে জনসভা করার জন্য অনুরোধ করেছিলাম। আমরা পিএ সাংমা স্টেডিয়ামে প্রধানমন্ত্রীর সমাবেশ আয়োজনের অনুমতি চেয়েছিলাম। কিন্তু আমরা অবাক হয়েছি, স্টেডিয়াম নির্মাণাধীন এবং প্রস্তুত নয় বলে আমাদের অনুমতি দেওয়া হয়নি। রাজ্য কর্তৃপক্ষ চিঠি পাঠিয়েছে, সেখানে প্রধানমন্ত্রীর সমাবেশ করা যাবে না। সারা দেশ ও মেঘালয়ের মানুষ জানে যে পিএ সাংমা স্টেডিয়ামটি গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর উদ্বোধন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা।’

ঋতুরাজ সিনহা বলেন, যে স্টেডিয়াম ১৬ ডিসেম্বর উদ্বোধন করা হলো, ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে এটি কীভাবে আবার নির্মাণাধীন হয়? কেন সেখানে প্রধানমন্ত্রীর সমাবেশ করা যাবে না। কারণটি রাজনৈতিক। এনপিপি, তৃণমূল কংগ্রেস ও কংগ্রেসের মতো বিরোধী দলগুলো ভয় পাচ্ছে। এখানে মোদির ঢেউ চলছে। মেঘালয়ের মানুষ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অন্যান্য রাজ্যের মতো বিজেপি সরকার চায়।

গত সোমবার কনরাড সাংমা বিজেপির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, এতে সরকারের কোনোও হাত নেই। কারণ, ক্রীড়া দপ্তর ওই অনুমতি বাতিল করেছে। তাঁর দাবি, ‘নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে সভা বাতিলের সুপারিশ আসে। তার ভিত্তিতে জেলা প্রশাসন ব্যবস্থা নেয়। তাই এনপিপি বা আমার কিছু করার নেই। আমাদের নাম টেনে আনার কোনোও যুক্তি নেই। এমনকি আমারও অনেক সভার অনুমতি বাতিল হয়েছে।’

মেঘালয়ের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমার বাবা পিএ সাংমার নামে এ স্টেডিয়াম তৈরি করতে খরচ পড়েছে ১২৭ কোটি রুপি। আর গত বছর ১৬ ডিসেম্বরে এটি উদ্বোধন করেন কনরাড সাংমা। এই ফুটবল স্টেডিয়াম ভারতের প্রথম আন্তর্জাতিক মানের প্রাকৃতিক স্টেডিয়াম। কনরাড বলছেন, ‘বিজেপি শুধু শুধু এটাকে ইস্যু করছে। কিন্তু আমরা আগেই বলেছি, মাঠের দুটি ভাগ রয়েছে। প্রথমটি ফুটবলের জন্য, যেটা উদ্বোধনের পর ব্যবহারযোগ্য। বাকিটা ইন্ডোর স্টেডিয়াম, সেখানে সুইমিংপুলও রয়েছে। সেটা এখনো তৈরি হয়নি। সেটাই সমস্যার। আর প্রধানমন্ত্রী সভায় অনেক লোকের জনসমাগম হয়। যদি অনেক লোক আসেন, তাহলে স্টেডিয়ামের প্রাকৃতিক টার্ফ নষ্ট হতে পারে। এ ছাড়া এখানে পার্কিংয়েরও ব্যবস্থা নেই।’

২৭ ফেব্রুয়ারি মেঘালয়ের ৬০ বিধানসভা আসনে ভোট গ্রহণ করা হবে। তারপর ২ মার্চ ত্রিপুরা এবং নাগাল্যান্ডের সঙ্গেই মেঘালয়ের নির্বাচনের ফলাফলও ঘোষণা করা হবে।

২০১৮ সালের নির্বাচনের পর মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমার দল ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) এবং বিজেপি জোট সরকার গঠন করেছিল। তবে আসন্ন নির্বাচনের আগে শাসক জোট ভেঙে গেছে। জোট ভাঙার পর থেকে দুই দলের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। এনপিপির বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছে বিজেপি। এবার প্রধানমন্ত্রীর সভার অনুমতি না দেওয়াকে কেন্দ্র করে সেই বিরোধ আরও তীব্র হলো বলে মনে করা হচ্ছে। তথ্য সূত্র: দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ও ডেকান ক্রনিকল