পশ্চিমবঙ্গে ৭ দফায় ভোট, খুশি বিরোধীরা তবে নাখোশ তৃণমূল

তৃণমূল, বিজেপি ও কংগ্রেসের লোগো

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ৪৪ দিন ধরে লোকসভা চলবে রাজ্যের ৮০ হাজার ভোটকেন্দ্রে। শুরু আগামী ১৯ এপ্রিল। শেষ ১ জুন। আর ফলাফল প্রকাশিত হবে ৪ জুন। গতকাল শনিবার ভারতের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার ঘোষণা করেছেন আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের ৫৪৩ লোকসভা আসনের নির্বাচনী তফসিল।

সাত দফায় ভোট করা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলগুলো খুশি হলেও এ বিষয়ে সমালোচনায় মুখর হয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা।

ভারতের লোকসভার ৫৪৩ আসনের মধ্যে ৪২টি আসন রয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। এই ৪২ আসনের মধ্যে রয়েছে সাধারণ শ্রেণিভুক্ত ৩০ আসন। তফসিলি জাতির জন্য রয়েছে ১০টি আসন। তফসিলি জনজাতির জন্য রয়েছে ২টি আসন।

রাজ্যের ২২ জেলার ৮০ হাজার ৫৩০ কেন্দ্রে ভোট হবে। একেক কেন্দ্রে গড় ভোটার সংখ্যা ৯৪৩। এর মধ্যে নারী পরিচালিত ভোটকেন্দ্র থাকছে ৫ হাজার ৯৪২টি। আর বিশেষভাবে সক্ষম পরিচালিত ভোটকেন্দ্র থাকছে ২৪টি। ওয়েব কাস্ট হবে ৪২ হাজার ভোটকেন্দ্রে।

পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলগুলো নির্বাচনে শাসক দল তৃণমূলের সন্ত্রাসের আশঙ্কা করছে বেশ আগে থেকেই। এর মধ্যে সাত দফায় ভোট গ্রহণের ঘোষণায় খুশি হয়েছেন বিরোধী দলের অনেক নেতাই। নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন রাজ্যের কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। তিনি বলেছেন, সাত দফায় ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়ে ভালো করেছে নির্বাচন কমিশন। এ রাজ্যে যেভাবে সন্ত্রাস চলে তাতে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে একাধিক দফায় কড়া পাহারায় ভোট করানো দরকার। ভোটের দিনের অনেক আগেই যেন ভোটকেন্দ্রে কেন্দ্রীয় বাহিনী পৌঁছে যায়, সেটা নির্বাচন কমিশনকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।

পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার সাত দফার ভোটের ঘোষণায় খুশি। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আশা করি গতবারের চেয়ে এবার আরও বেশিসংখ্যক কেন্দ্রীয় বাহিনী ব্যবহার করা হবে বাংলার ভোটে।’

আইএসএফের বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি নির্বাচনী তফসিলকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘ভোটের তফসিল শুনেছি। যেভাবে এবার নির্বাচন কমিশন ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে পক্ষপাতহীন ভোট করানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তাতে ভরসা পাচ্ছি।’

তবে সাত দফার ভোটের ঘোষণায় নাখোশ তৃণমূল। তারা বিবৃতি দিয়ে বলেছে, এই তফসিলের ফলে ভোটারদের অসুবিধা হবে। এতে সুবিধা পাবে আর্থিকভাবে ক্ষমতাবান দলগুলো। কারণ, এসব ধনবান দল তাদের টাকা কাজে লাগিয়ে ভোটের ফল নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।

পশ্চিমবঙ্গের মোট ভোটার রয়েছেন ৭ কোটি ৫৯ লাখ ১৯ হাজার ৮৯১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৩ কোটি ৮৫ লাখ ৬৯ হাজার ৬১০ জন আর নারী ভোটার ৩ কোটি ৭৩ লাখ ৪৮ হাজার ৫১১ জন। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ১ হাজার ৭৭০ জন। বিশেষভাবে সক্ষম ভোটার হলেন ৫ লাখ ৪ হাজার ৯২০ জন। ৮৫ বছরের ঊর্ধ্বের ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৮৩ হাজার ১৯৭। শতবর্ষের ভোটার ৩ হাজার ৫৯৬ জন। ১৮ থেকে ১৯ বছরের ভোটার ১৫ লাখ ৭২ হাজার ৪৫৫ জন। ২০ থেকে ২৯ বছরের ভোটার ১ কোটি ৬৬ লাখ ৩৯ হাজার ৮১ জন। আর চাকরিজীবী ভোটার ১ লাখ ১৩ হাজার ৮০৬ জন।

এই রাজ্যে ভোট নেওয়া হবে সাত দফায়। ১৯ এপ্রিল, ২৬ এপ্রিল, ৭ মে, ১৩ মে, ২০ মে, ২৫ মে ও ১ জুন। ভোট গণনা করা হবে ১ জুন।

প্রথম দফায় ১৯ এপ্রিল ভোট নেওয়া হবে কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়ি আসনে।

দ্বিতীয় দফায় ২৬ এপ্রিল ভোট নেওয়া হবে রায়গঞ্জ, বালুরঘাট ও দর্জিলিং আসনে।

তৃতীয় দফায় ৭ মে ভোট নেওয়া হবে মালদা উত্তর, মালদা দক্ষিণ, মুর্শিদাবাদ ও জঙ্গিপুর আসনে।

চতুর্থ দফায় ১ মে ভোট নেওয়া হবে বহরমপুর, কৃষ্ণনগর, রানাঘাট, বোলপুর, বীরভূম, আসানসোল, বর্ধমান পূর্ব ও বর্ধমান-দুর্গাপুর আসনে।

২০ মে পঞ্চম দফায় ভোট নেওয়া হবে বনগাঁ, বারাকপুর, হাওড়া, উলবেড়িয়া, শ্রীরামপুর, হুগলি ও আরামবাগ।

২৫ মে ষষ্ঠ দফায় ভোট নেওয়া হবে তমলুক, কাঁথি, ঘাটাল, ঝাড়গ্রাম, মেদিনীপুর, পুরুলিয়া, বাঁকুরা ও বিষ্ণুপুর আসনে।

১ জুন সপ্তম দফা বা শেষ দফায় ভোট নেওয়া হবে উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতা, দমদম, বারাসাত, বসিরহাট, জয়নগর, ডায়মন্ডহারবার, মথুরাপুর ও যাদবপুর আসনে।

আর ৪ জুন হবে ভোট গণনা ও ফলাফল ঘোষণা।