‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ ও রাজ্যের সংগীত কী হবে, আলোচনা হলেও সিদ্ধান্ত হলো না
ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে তাদের রাজ্য নিয়ে একটি বিশেষ দিন পালন করা হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গে ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ পালনের জন্য কোনো নির্দিষ্ট দিন নেই। একটি নির্দিষ্ট দিনকে পশ্চিমবঙ্গ দিবস হিসেবে পালনের জন্য গতকাল মঙ্গলবার বৈঠক করেছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গতকাল বিকেলে রাজ্য সচিবালয় নবান্নের সভাঘরে এই বৈঠক ডাকেন। বৈঠকে রাজ্যের সংগীত নিয়েও আলোচনা হয়। তবে দিবস বা সংগীত কোনটি হবে, তার কোনোটিরই সুরাহা হয়নি।
বৈঠকে রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ক্রীড়াসহ বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিদের ডাকা হয়েছিল। তবে এই বৈঠকে যোগ দেননি কংগ্রেস, সিপিএমসহ বিজেপির প্রতিনিধিরা।
এই বৈঠকে আলোচনায় অংশ নেন কলকাতার বিশিষ্টজনেরা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বলেন, ‘আমাদেরও একটি নির্দিষ্ট দিন থাকা উচিত পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালনের। তা নিয়ে আমরা আলোচনায় বসেছি।’
এই আলোচনা সভায় কবি জয় গোস্বামী বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা যা সিদ্ধান্ত নেবেন, তাতে তাঁর সমর্থন থাকবে। চিত্রকর শুভাপ্রসন্নও একই কথা বলেন। একই মত প্রকাশ করেন ইন্ডিয়ান চেম্বার অব কমার্সের প্রতিনিধিও।
তবে কবি সুবোধ সরকার বলেন, পয়লা বৈশাখ দিনটি পালন হলে ভালো হয়। নেতাজির বংশধর অধ্যাপক সুগত বসুও পয়লা বৈশাখকে সমর্থন করেন। পয়লা বৈশাখকে আরও সমর্থ করেন সাহিত্যিক আবুল বাশার, প্রচেত গুপ্ত, আর্চ বিশপ টমাস ডি’সুজা, নাখোদা মসজিদের ইমাম, দলিত সাহিত্য একাডেমি ও কামতাপুরি ভাষা একাডেমি।
এ ছাড়া সংখ্যালঘু কমিশনের প্রতিনিধি আহমেদ হাসান ইমরান, মহিলা কমিশনের লীনা গঙ্গোপাধ্যায়, শিশু কমিশনের সুদেষ্ণা রায়, ওরিয়েন্টাল চেম্বার অব কমার্স, পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স গিল্ড, কলকাতা প্রেসক্লাবের সভাপতি স্নেহাশিস শূর, মোহনবাগান, ইস্ট বেঙ্গল, মোহামেডান ক্লাবও পয়লা বৈশাখের দিনটির দিকে সমর্থন প্রকাশ করে।
তবে এসইউসিআই ১২ ডিসেম্বর দিনটি পালনের প্রস্তাব দেয়। ওই দিন বঙ্গভঙ্গ রদ হয়েছিল। তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষ দিনটিকে বিশ্ব বাংলা দিবস হিসেবে পালনের প্রস্তাব রাখেন। তবে কেউ আবার বলেন, নেতাজির জন্মদিন ২৩ জানুয়ারিও পালিত হতে পারে পশ্চিমবঙ্গ দিবসের পরিবর্তে বিশ্ব বাংলা দিবস। চলচ্চিত্র পরিচালক গৌতম ঘোষ বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ না বলে ‘বিশ্ব বাংলা দিবস’ বলা হোক। রামকৃষ্ণ মিশন অবশ্য ১৫ আগস্ট দিনটি পালনের প্রস্তাব দেয়। দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দির কর্তৃপক্ষ অবশ্য পয়লা বৈশাখ দিনটি পালনের পক্ষে সায় দেয়।
যদিও বিজেপি ২০ জুন দিসবটি পালনের পক্ষে রয়েছে; এ নিয়ে রাজভবনে এবার দিনটি পালনও করেছে রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। ১৯৪৭ সালের ২০ জুন বঙ্গীয় প্রাদেশিক আইনসভায় ভোটাভুটিতে বাংলাভাগের বিষয় স্থির হয়েছিল। একভাগ পূর্ব পাকিস্তান ও অন্যভাগ পশ্চিমবঙ্গ। সেই দিনকে স্মরণে রেখে কেন্দ্রীয় সরকার ২০ জুন পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। গতকালের কলকাতার বিশিষ্টজনদের সভায় ২০ জুন পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালনের প্রস্তাব খারিজ করে দেওয়া হয়।
গতকালের সভায় পশ্চিমবঙ্গের নিজস্ব সংগীত কী হবে, তা নিয়ে আলোচনা হয়। দুটি সংগীতের প্রস্তাব আসে। একটি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বাংলার মাটি, বাংলার জল’ আর অন্যটি দ্বিজেন্দ্র লাল রায়ের ‘ধনধান্যে পুষ্পেভরা...’। মমতার অবশ্য সায় ছিল কবিগুরুর গানের প্রতি। কিন্তু এ নিয়ে এদিন কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আগামী ৭ সেপ্টেম্বর হতে পারে।