বরাকে বাঙালিদের পৃথক রাজ্যের আন্দোলন পূজার পর, কলকাতায় জানালেন নেতারা

বাঙালিদের জন্য আসামের বরাকে পৃথক রাজ্যের দাবিতে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (বিডিএফ) মুখ্য আহ্বায়ক প্রদীপ দত্ত রায়। কলকাতা প্রেসক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলন হয়। ২৭ সেপ্টেম্বর
ছবি: প্রথম আলো

আসন্ন দুর্গাপূজার পর আসামের বরাকে বাঙালিদের পৃথক রাজ্যের দাবিতে বড় আন্দোলন হবে। আজ বুধবার কলকাতা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে দক্ষিণ আসামের বরাক উপত্যকার নাগরিক সংগঠন বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (বিডিএফ) এ ঘোষণা দেয়। সংগঠনের মুখ্য আহ্বায়ক প্রদীপ দত্ত রায় বলেন, বিডিএফ এক লাখ প্রচারপত্র ও পুস্তিকা বিলি করবে পূজার পরই।

প্রদীপ দত্ত রায় বলেন, ‘সেখানে আমরা সবিস্তার ব্যাখ্যা করব, কেন রাজ্য আলাদা করা প্রয়োজন। আমরা ব্যাখ্যা করব, কেন রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে এই নতুন রাজ্য লাভবান হবে। তার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা ব্যাখ্যা করব, কেন আসামও এ প্রক্রিয়ার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, বরং লাভবানই হবে।’

বরাক উপত্যকার তিন জেলা কাছাড়, করিমগঞ্জ ও হাইলাকান্দি নিয়ে পৃথক বাংলাভাষী রাজ্য গঠনের দাবি সম্প্রতি জোরালো হয়েছে। কারণ, ভারতের নির্বাচন কমিশন জুলাই মাসে আসামের ১২৬ সদস্যের বিধানসভা এবং ১৪টি লোকসভা আসনের সীমানা নির্ধারণের প্রক্রিয়া যাকে ‘ডিলিমিটেশন’ বলা হয়, চূড়ান্ত করেছে। এর ফলে বরাক উপত্যকার তিন জেলায় বিধানসভা আসন ১৫ থেকে ১৩ হয়ে গেছে। প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস, বাম দল এমনকি আসামে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির নেতারাও আসন কমানোর বিরোধিতা করেছেন বলে দাবি বিডিএফের।

তবে আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা কিছুদিন আগে বলেছেন, রাজ্য সরকার নতুন রাজ্য গঠনের বিরোধিতা করবে না, যদি বরাক উপত্যকার অধিকাংশ মানুষ এ দাবি মেনে নেন। তিনি বলেন, তবে এ দাবি অঞ্চলের কিছু নেতা ও বামপন্থীদের। সমাজের সব অংশের মানুষ এ দাবি সমর্থন করেন না।

এদিন হিমন্ত বিশ্বশর্মার বক্তব্যের বিরোধিতা করেন প্রদীপ দত্ত রায়। তিনি বলেন, ‘এ মন্তব্যকে আমি অজ্ঞতা বলব। কারণ, তাঁরা হয়তো জানেন না যে বামপন্থীরা আদর্শগতভাবে কোনো দিনই পৃথক রাজ্যের আন্দোলন সমর্থন করেননি এবং করবেন না। আর এ অঞ্চলের মানুষ সমর্থন করেন কি না, তা জানতে হলে কয়েক দিন আগে আমরা যে হরতাল ডেকেছিলাম, সে সম্পর্কে একটু জানতে হবে। স্বতঃস্ফূর্তভাবে মানুষ ধর্মঘটের দিন রাস্তায় বের হননি এবং আমরা নিশ্চিত যে তাঁরা আমাদের দাবি সমর্থন করবেন। এরপরও পৃথক রাজ্যের দাবি নিয়ে যদি কোনো সন্দেহ থাকে, তাহলে গণভোট করা উচিত, যা থেকে প্রমাণিত হয়ে যাবে যে বরাক উপত্যকার ৪৫ লাখ মানুষ কী চান।’

বিডিএফের নেতাদের একাংশ মনে করেন, পৃথক রাজ্যের আন্দোলনে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার আসামবাসীর সমর্থন রয়েছে। এর কারণ ব্যাখ্যা করে তাঁরা বলেন, বাঙালির জন্য যদি পৃথক রাষ্ট্র হয়, তাহলে আসামবাসীরই সুবিধা।

আজকের সংবাদ সম্মেলনের পর বিডিএফের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আসামের মানুষ সংখ্যালঘু হয়ে পড়ছেন। বাঙালিরা যদি নিজের রাজ্য নিয়ে বেরিয়ে যান, তাহলে অসমীয়া মানুষের সংখ্যা আবারও বেড়ে যাবে। তাঁরা আবারও সংখ্যাগরিষ্ঠ হবেন। এটা তাঁদের একটা বড় প্রাপ্তি এবং সে কারণেই তাঁরা বরাক উপত্যকার আলাদা হয়ে যাওয়া সমর্থন করেন।

তবে ভূরাজনীতির প্রশ্নে বরাক উপত্যকা অত্যন্ত স্পর্শকাতর জায়গায় রয়েছে। তার এক দিকে মিজোরাম, অপর দিকে বাংলাদেশ আর এক দিকে মনিপুর ও মেঘালয়। তার পাশেই রয়েছে মিয়ানমার। এ অবস্থায় অঞ্চলে আরেকটি পৃথক রাজ্য, যা অন্তত গোড়ার দিকে নিরাপত্তার দৃষ্টিকোণ থেকে দুর্বল অবস্থায় থাকবে, সে রকম এক রাজ্য কি আসাম বা ভারত সরকার মেনে নিতে রাজি হবে, বিশেষত উত্তর-পূর্ব ভারতে?

এ প্রশ্নের উত্তরে প্রদীপ দত্ত রায় প্রথম আলোকে জানান, এতে অঞ্চলের অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে। কারণ, বরাক উপত্যকা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার গেটওয়ে বা দ্বারে পরিণত হবে। এতে অঞ্চলের মানুষের পাশাপাশি উপকৃত হবে ভারত রাষ্ট্রও।

বাঙালিদের পৃথক রাজ্যের দাবিতে আন্দোলন আগামী দিনে আরও গতি পাবে বলে জানিয়ে বিডিএফ নেতারা বলেন, ভবিষ্যতে তাঁদের ওপর রাজনৈতিক চাপ বাড়লেও সে চাপ নেওয়ার মতো অবস্থায় তাঁরা রয়েছেন।