মোদি সরকারই গঠন করলেন না, তার আগেই শরিকদের চাপ

বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (ডানে)ফাইল ছবি: এএনআই

নরেন্দ্র মোদিও এখনো শপথ নেননি, মন্ত্রিসভা গঠিত হয়নি, অথচ এখনই শুরু হয়ে গেল চাপের রাজনীতি। সৌজন্যে জেডি–ইউ নেতা ও বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। তাঁরা চান, আগের মোদি সরকারের আনা ‘অগ্নিবীর’ প্রকল্পটির পুনর্বিচার। পাশাপাশি জেডি–ইউ চায়, দেশজুড়ে জাত গণনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক। বিহারকে দেওয়া হোক বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা।

বৃহস্পতিবার দিল্লিতে সংবাদ সম্মেলন করেন সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদবও। সেখানে তিনিও বলেন, বিরোধী দল হিসেবে তাঁদের প্রথম কাজ হবে অগ্নিবীর প্রকল্প বন্ধ করতে সরকারকে বাধ্য করা। তাঁর মতে, এতে সেনাবাহিনীর বিন্দুমাত্র মঙ্গল হচ্ছে না; বরং ক্ষতি হচ্ছে। জওয়ানদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে।

নরেন্দ্র মোদির সরকার দ্বিতীয় দফার শাসনে সেনাবাহিনীতে পুরোনো নিয়োগ নীতি বদলে ‘অগ্নিবীর’ প্রকল্প শুরু করেছিল। এ নিয়ে জনমনে জমা হয় বিপুল অশান্তি ও অসন্তোষ। নির্বাচনের ফলে তার প্রভাব পড়েছে। জেডি–ইউ চায়, যে কারণে ক্ষোভ, তা দূর করা হোক। প্রকল্পটি পুনর্বিবেচনা করা হোক।

নতুন সরকারের শরিক হিসেবে তাঁদের প্রত্যাশা কী, জনতা দল ইউনাইটেডের (জেডিইউ) মুখপাত্র কে সি ত্যাগী বৃহস্পতিবার তার একটা ঝলক দেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অগ্নিবীর প্রকল্প বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। তাঁরা চান, সরকার সেদিকে নজর দিক। তাঁরা এ প্রকল্প বাতিলের দাবি জানাচ্ছেন কি না, জানতে চাওয়া হলে ত্যাগী বলেন, ভোটারদের মনে ওই প্রকল্প এক বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। অসন্তোষ জমা হয়েছে। তা কীভাবে দূর করা যায়, সরকারকে তা দেখতে হবে। সবাই মিলে আলোচনার মধ্য দিয়ে ঠিক করতে হবে প্রকল্পটির ভাগ্য।

আরও পড়ুন

প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং নির্বাচনী প্রচার চালানোর সময় অগ্নিবীর প্রকল্প নিয়ে মানুষের অশান্তির আঁচ পেয়েছিলেন। তখনই তিনি বলেছিলেন, বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে দেখা হবে। শরিকদের চাপে মোদি সরকার তা করে কি না, দেখার। ভোটের প্রচারে কংগ্রেস জোরালোভাবে জানিয়েছিল, তারা ক্ষমতায় এলে ওই নিয়োগপ্রথা তুলে দেবে। পুরোনো প্রথায় সেনাবাহিনীতে নিয়োগ চালু করবে।

শুধু অগ্নিবীর প্রকল্পই নয়, জেডি–ইউ চায়, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি প্রণয়নের সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে মোদি সরকার সবার সঙ্গে যেন কথা বলে। কে সি ত্যাগী এ প্রসঙ্গে বলেন, নীতীশ কুমার আগেই আইন কমিশনকে জানিয়েছেন, ওই আইনে তিনি অসম্মত নন। কিন্তু সেটা যেন সবার মতামত নিয়েই করা হয়। কোনো একতরফা সিদ্ধান্ত যেন না নেওয়া হয়।

ত্যাগী আরও জানান, নতুন সরকারের উচিত, দেশব্যাপী জাত গণনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। কোনো দলই এর বিরোধিতা করেনি। বিহার এ বিষয়ে পথিকৃৎ। সর্বদলীয় বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নিজেও এর বিরোধিতা করেননি। সরকারের উচিত দ্রুত এ বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেওয়া।

জেডি–ইউ মুখপাত্র মনে করিয়ে দেন, সরকারকে তাঁরা নিঃশর্ত সমর্থন দিচ্ছেন। বিহারকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়ার দাবি তাঁদের বহুদিনের। অথচ এখনো কেন্দ্র তা মানেনি। তাঁরা চান, অবিলম্বে সেই মর্যাদা সরকার দিক।

মোদি সরকার ২০২২ সালে ‘অগ্নিবীর’ প্রকল্প চালু করেছিল। এ প্রকল্পে সাড়ে ১৭ বছরের যুবাদের সংক্ষিপ্ত ট্রেনিংয়ের পর সেনাবাহিনীতে ভর্তি করা হয়। চুক্তিভিত্তিক সেই চাকরির মেয়াদ চার বছরের। ওই সময়ের পর এক–চতুর্থাংশকে পাকাপাকিভাবে বাহিনীতে রেখে বাকিদের ১১ লাখ টাকাসহ ফেরত পাঠানো হয়। এর বাইরে আর কোনো সুযোগ–সুবিধা তাঁদের দেওয়া হয় না। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর অভিযোগ, এর মাধ্যমে সরকার সেনাবাহিনীতে দুই ধরনের শ্রেণি সৃষ্টি করেছে, যা খারাপ প্রভাব ফেলেছে। মনোবল ভেঙে দিচ্ছে।

সূত্রের খবর অনুযায়ী, নীতীশ কুমার নতুন মন্ত্রিসভায় গুরুত্বপূর্ণ তিন পূর্ণ মন্ত্রীর দাবি জানিয়েছেন। একই দাবি জানিয়েছেন টিডিপি নেতা চন্দ্রবাবু নাইডুসহ অন্য শরিক নেতারাও।

আরও পড়ুন