কমলাকে নিজেদের মনে করেন ভারতের ছোট্ট একটি গ্রামের বাসিন্দারা

লাসেনথ্রাপুরাম গ্রামে কমলা হ্যারিসের ব্যানার, ২৩ জুলাইছবি : এএফপি

দক্ষিণ ভারতের ছোট্ট একটি গ্রাম থুলাসেনথ্রাপুরাম। চেন্নাই থেকে প্রায় ৩০০ কিলোমিটার দূরে এ গ্রামের অবস্থান। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসি থেকে গ্রামটিতে যেতে পাড়ি দিতে হবে ১৪ হাজার কিলোমিটার। এবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থী কমলা হ্যারিসের মায়ের দিকের বংশধরেরা ছিলেন এই গ্রামেরই বাসিন্দা।

গ্রামটির একেবারে মাঝখানে বর্তমানে শোভা পাচ্ছে ৫৯ বছর বয়সী কমলা হ্যারিসের বড়সড় একটি ব্যানার।

কমলার সাফল্যের জন্য স্থানীয় দেবতাদের উদ্দেশে গ্রামে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে। গ্রামের মন্দিরের দাতাদের তালিকায় উঠে এসেছে হ্যারিস ও তাঁর নানা-নানিদের নাম। এরই মধ্যে ঘরে ঘরে মিষ্টি বিতরণ করা হয়েছে।

জো বাইডেনের সরে দাঁড়ানো এবং সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে কমলা হ্যারিসের নাম উঠে আসার পর থেকেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করছেন থুলাসেনথ্রাপুরাম গ্রামের বাসিন্দারা।

কৃষ্ণমূর্তি নামের সাবেক এক ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, ‘বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশে তিনি (কমলা হ্যারিস) যত দূর গিয়েছেন, তা মোটেও সহজ নয়। আমরা তাঁকে নিয়ে গর্বিত। একসময় ভিনদেশিরা ভারতীয়দের শাসন করেছে। আর এখন ভারতীয়রাই শক্তিশালী দেশগুলোর নেতৃত্ব দিচ্ছে।’

বিশেষ করে নারীরা কমলাকে নিয়ে গর্বিত। নারীর পক্ষে সর্বক্ষেত্রে কী করা সম্ভব, তার প্রতীক হিসেবে তাঁরা কমলা হ্যারিসকে নিজেদের একজন হিসেবে দেখছেন।

গ্রাম সরকারের প্রতিনিধি অরুলমজি সুধাকর বলেন, সবাই তাঁকে চেনেন। এমনকি শিশুরাও। ‘আমার মা, আমার বোন’—এভাবেই সবাই তাঁকে সম্বোধন করছে। আমরা আনন্দিত যে তিনি তাঁর শিকড় ভুলে যাননি।

কমলা হ্যারিস যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর সড়কে আতশবাজি ফুটিয়ে, পোস্টার লাগিয়ে ও ক্যালেন্ডারে তাঁর ছবি ছেপে উদ্‌যাপন করেছিলেন গ্রামের বাসিন্দারা। এবারের উৎসাহ-উদ্দীপনা সে কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছে।

ওই গ্রামে বড়সড় একটি ভূরিভোজের আয়োজন করা হয়েছে। যেখানে ইডলি, সাম্বারসহ ছিল দক্ষিণ ভারতের ঐতিহ্যবাহী নানা পদের খাবার। হাজারো মানুষ এই ভোজে অংশ নিয়ে এসব খাবারের স্বাদ নিয়েছেন। হ্যারিসের এক আত্মীয় বলেন, কমলা হ্যারিসের পছন্দের খাবারগুলোর মধ্যে আছে ইডলি ও সাম্বার।

কমলা হ্যারিসের জন্য লাসেনথ্রাপুরাম গ্রামে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়, ২৩ জুলাই
ছবি: এএফপি

কমলা হ্যারিসের মা শ্যামলা গোপালানের জন্ম ভারতের তামিলনাড়ুতে। তিনি স্তন ক্যানসার–গবেষক। ১৯৫৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান শ্যামলা। তাঁর পিতা-মাতার নিবাস ছিল থুলাসেনথ্রাপুরাম গ্রামে।

গত বছর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে কমলা হ্যারিস লেখেন, ‘আমার মা শ্যামলা ভারত থেকে ১৯ বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্রে চলে আসেন। তিনি ছিলেন একাধারে একজন বিজ্ঞানী, নাগরিক অধিকারকর্মী এবং দুই কন্যাসন্তানের গর্বিত মা।’

দ্য হিন্দুর এক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, মায়ের মৃত্যুর পর বোন মায়াকে সঙ্গে নিয়ে চেন্নাই গিয়েছিলেন কমলা হ্যারিস। এ সময় মায়ের মরদেহের ছাই সাগরে ভাসিয়ে হিন্দুধর্মীয় রীতিও পালন করেন তিনি।

কমলা হ্যারিস এমন একটি পরিবার থেকে উঠে এসেছেন, যার সদস্যরা নিজেদের সাফল্যের সর্বোচ্চ শিখরে নিয়ে গেছেন। তাঁর মামা গোপালান বালাচন্দ্রান একজন শিক্ষাবিদ। তাঁর নানা পিভি গোপালান ছিলেন ভারতীয় আমলা। তিনি ছিলেন শরণার্থী পুনর্বাসন–বিশেষজ্ঞ। ১৯৬০–এর দশকে তিনি জাম্বিয়ার প্রথম প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টার দায়িত্বও পালন করেছেন।

থুলাসেনথ্রাপুরাম গ্রামের বাসিন্দারা প্রত্যাশা করছেন, কমলা হ্যারিসকেই ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হবে।

কমলা হ্যারিসের মায়ের ছোট বোন সরলা নিয়মিত মন্দিরে যান। কমলা হ্যারিসের পক্ষে তিনি ২০১৪ সালে ওই মন্দিরে ৫ হাজার রুপি দান করেছিলেন বলে জানান পুরোহিত নাটারঞ্জন। তাঁদের প্রার্থনা কমলাকে নির্বাচনে জয় লাভ করতে সহায়তা করবে বলে আত্মবিশ্বাসী নাটারঞ্জন।

গ্রামের বাসিন্দারা বলেন, তাঁরা যুক্তরাষ্ট্র থেকে হাজার মাইল দূরে থাকতে পারেন। কিন্তু হ্যারিসের এই যাত্রায় নিজেদের তাঁর সঙ্গী বলেই মনে করছেন তাঁরা। কমলা হ্যারিস কোনো একদিন তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে আসবেন অথবা বক্তব্যে তাঁদের গ্রামের নাম নেবেন বলে আশাবাদী সেখানকার বাসিন্দারা।