মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
ফাইল ছবি

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও পুরোহিতদের ভাতা ৫০০ রুপি করে বাড়িয়েছেন। রাজ্যের বিরোধী দলগুলো মনে করছে, আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেই মাসিক এই ভাতা বাড়িয়েছেন ক্ষমতাসীন তৃণমূল নেত্রী।

এ সিদ্ধান্তের ফলে ইমামদের ভাতা বেড়ে তিন হাজার রুপিতে দাঁড়াবে। মুয়াজ্জিনরা পাবেন দেড় হাজার রুপি। এত দিন হিন্দু পুরোহিতরা পেতেন এক হাজার রুপি। এবার সেটা বেড়ে দেড় হাজার রুপি হবে।

এ ছাড়া গতকাল সোমবার কলকাতায় ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের এক সভায় তাঁদের ঋণ দেওয়ার পরিকল্পনার কথাও ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘যদি কোনো ইমাম বা মুয়াজ্জিন “ভবিষ্যৎ ক্রেডিট কার্ডের” অধীন পাঁচ লাখ রুপি ঋণ চান, রাজ্য সরকার গ্যারান্টার হবে। এই অর্থ দিয়ে আপনারা নিজ নিজ এলাকায় দর্জির দোকান বা ছোট কারখানা করতে পারেন।’

হরিয়ানা রাজ্যের নুহতে সাম্প্রতিক দাঙ্গায় প্রধানত মুসলিম পরিবারগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের অনেকেই রাজ্যে ফিরেছে। তাদেরও ঋণ দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে মমতা বলেছেন, যারা হরিয়ানা থেকে ফিরেছে এবং এখানে ব্যবসা করতে চায়, তাদের জন্য পাঁচ লাখ রুপি পর্যন্ত ঋণের ব্যবস্থা করা হবে।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনো নিরাপত্তা নেই। আমি জনগণকে রাজ্য ত্যাগ না করার আহ্বান জানাই।’ একই সঙ্গে মুসলিম সমাজ যাতে কোনো প্ররোচনায় পা না দেয়, সেদিকেও নজর রাখতে ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের আহ্বান জানান মুখ্যমন্ত্রী।

ভাতা বাড়ানোর যত কারণ

গত জুলাইয়ে পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত নির্বাচনে মুসলিম প্রধান দল ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট (আইএসএফ) ত্রিস্তরীয় গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে তিন শ’র বেশি আসন পেয়েছে। এর আগে চলতি বছরেই মুর্শিদাবাদ বিধানসভা উপনির্বাচনে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ সাগরদিঘী আসনে পরাজিত হয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস।

এ ছাড়া পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম সমাজের একাংশ খোলাখুলিভাবেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে কথা বলতে শুরু করেছে। তাদের একাংশের ভোট বামফ্রন্ট পেয়ে থাকে। অপর অংশ ধীরে কিন্তু নিয়মিতভাবে গত এক বছর তৃণমূল থেকে সরে যাচ্ছে। স্থানীয় ও জেলা পর্যায়ে নির্বাচন থেকে বিষয়টি পরিষ্কার হয়। সম্ভবত এই কারণেই ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের ভাতা বাড়ালেন মমতা।

ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের সুবিধা দেওয়ার ঘোষণার পাশাপাশি মমতা পুরোহিতদের ভাতাও বাড়িয়েছেন। কারণ, অতীতে ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের ভাতা ঘোষণা করার পর হিন্দু ভোটে প্রভাব পড়েছিল। এতে অনেকটাই সুবিধা পেয়েছিল বিজেপি। লোকসভা ভোটে একই প্রভাব যাতে না পড়ে, সেটা মাথায় রেখে পুরোহিতদের ভাতাও বাড়ানো হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

বিরোধীদের কড়া সমালোচনা

সংখ্যালঘু সমাজের পক্ষ নিয়ে কথা বলায় কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপি তাঁকে আক্রমণ করে বলে অভিযোগ করেন মমতা। তিনি বলেন, ‘লোকেরা আমার বিশ্বাসের জন্য আমাকে অপমান করেছে। আমি যখন রমজান মাসে ইফতার অনুষ্ঠানে উপস্থিত হই, আমার ছবি প্রকাশ্যে এনে উপহাস করা হয়। বিজেপি আমার নাম বদলানোর চেষ্টা করে (বিজেপি নেতারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘মমতাজ বেগম’ বলে সম্বোধন করে থাকেন)।’

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘যা–ই বলুক, আমি এসবকে গুরুত্ব দিই না। কারণ, শেষ পর্যন্ত আমারই এটা দেখার দায়িত্ব যে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ যাতে পরস্পরের সঙ্গে সংঘাতে লিপ্ত না হয়।’

২১ জুলাই তৃণমূল কংগ্রেসের শহীদ স্মরণের অনুষ্ঠানে কংগ্রেস ও সিপিআই (এম) কে আক্রমণ না করলেও গতকাল উভয়কে নিশানা করেন মমতা। তিনি বলেন, বিজেপির কিছু নেতা সংখ্যালঘুদের মধ্যে বিভাজন তৈরি করতে অর্থ ব্যবহার করছে। একই সঙ্গে দেখা যাচ্ছে সিপিআই (এম)-এর লজ্জা নেই। সিপিআই (এম)-বিজেপি-কংগ্রেস একসঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিভিন্ন জেলায় বোর্ড গঠন করছে। একসঙ্গে রাজনীতি করছে।

জুলাইয়ে বামফ্রন্ট, কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেসকে নিয়ে ‘ইন্ডিয়া’ জোট গঠিত হওয়ার পরে এই প্রথম এত জোরালো ভাষায় সিপিআই (এম) ও কংগ্রেসকে আক্রমণ করলেন মমতা।