জম্মু-কাশ্মীরে ভোটার তালিকা নিয়ে প্রশাসনের সাফাই

ফারুক আবদুল্লাহ
ফাইল ছবি : এএফপি

নতুন ভোটার তালিকা নিয়ে বিজেপি ছাড়া জম্মু-কাশ্মীরের সব রাজনৈতিক দলের প্রবল আপত্তি ও প্রতিরোধের মুখে প্রশাসন জানাল, ২৫ লাখ নতুন ভোটার হওয়ার বিষয়টি স্বার্থান্বেষী মহলের অপপ্রচার। জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসনের পক্ষ থেকে শনিবার বিভিন্ন সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়ে বলা হয়েছে, কেন্দ্রশাসিত এই অঞ্চলের ভোটার তালিকার সংশোধন গত তিন বছরে হয়নি। এই সময়ে যাঁরা ভোটাধিকার প্রাপ্ত হয়েছেন, নতুন তালিকায় তাঁদের নাম তোলা হচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষে এই সাফাই দেওয়া হলেও অস্থানীয়দের ভোটাধিকার নিয়ে কিছু বলা হয়নি। কাজেই বিরোধীদের ধারণা অপরিবর্তিত থাকছে।

এদিকে প্রশাসনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কর্মপন্থা স্থির করতে জম্মু-কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বর্ষীয়ান রাজনীতিক ফারুক আবদুল্লাহ সোমবার সর্বদলীয় বৈঠক ডেকেছেন। পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতি এই বৈঠক ডাকার জন্য ফারুক আবদুল্লাহকে অনুরোধ করেছিলেন। এর আগেই প্রশাসনের এই বিজ্ঞাপন।

গত বুধবার জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক হৃদেশ কুমার সিং সংবাদ সম্মেলন করে নতুন ভোটার তালিকা প্রস্তুতির কথা জানিয়েছিলেন। সেখানেই তিনি জানিয়েছিলেন, নতুন তালিকায় ২৫ লাখের মতো নতুন নাম সংযোজিত হবে। এ কথাও বলেছিলেন, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের অস্থায়ী বাসিন্দারাও ভোটার হতে পারবেন। অর্থাৎ যাঁরা চাকরি, লেখাপড়া, ব্যবসার কাজে অস্থায়ীভাবে বসবাস করছেন, যাঁরা শ্রমিক এবং যাঁরা নিরাপত্তারক্ষী, তাঁরাও ভোটার হতে পারবেন। তবে আগে অন্য রাজ্যের ভোটার থাকলে সেখান থেকে নাম কাটতে হবে। এই প্রচেষ্টার বিরোধিতা করে উপত্যকার সব রাজনৈতিক দল। একমাত্র সমর্থন করেছে বিজেপি। এই পরিস্থিতিতে বিরোধীদের ভূমিকা কী হবে, তা সোমবারের বৈঠকে স্থির হবে।

বিজ্ঞাপন দিয়ে ‘স্বার্থান্বেষী মহলকে’ দোষারোপ করা হলেও অস্থায়ী বাসিন্দাদের ভোটার হওয়া প্রসঙ্গে সরাসরি কিছু বলা হয়নি। বলা হয়েছে, যাঁরা বাসস্থান বদলেছেন, তাঁরা পুরোনো বাসস্থানের জায়গার পরিবর্তে নতুন এলাকার ভোটার হতে পারবেন। বিজ্ঞাপনে বলা হয়, গত তিন বছরে যাঁরা ১৮ বছর বয়সী হয়েছেন, তাঁদের নাম সংশোধিত তালিকায় তোলা হবে। এই নতুন ভোটারদের সংখ্যা হবে প্রায় ১০ লাখ। প্রশাসনিক দাবি, ২৫ লাখ সংখ্যা স্বার্থান্বেষী মহলের প্রচার।

প্রশাসন যা-ই দাবি করুক, অস্থায়ী বাসিন্দাদের ভোটাধিকার দেওয়ার বিষয়টি উপত্যকার দলগুলো মানতে পারছে না। নেতারা মনে করছেন, অস্থায়ী শ্রমিক, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী ও নিরাপত্তারক্ষীদের ভোটার করে বিজেপি ও সরকারপন্থীদের ক্ষমতায় আনার চেষ্টা কেন্দ্রীয় সরকার চালিয়ে যাচ্ছে। ন্যাশনাল কনফারেন্স, পিডিপি, পিপলস কনফারেন্স, সিপিএম ইতিমধ্যে বিরোধিতা করেছে। বিজেপিপন্থী দল আপনা পার্টিকেও এতে শামিল করানোর চেষ্টা চলছে। সোমবারের বৈঠকেই বোঝা যাবে বিরোধিতার রূপ ঠিক কী হতে চলেছে।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসন জানিয়েছে, নানা কারণে উপত্যকায় বিচ্ছিন্নতাকামীদের সক্রিয়তা বেড়েছে। হিন্দু পণ্ডিত ও ভিন প্রদেশের শ্রমিকদের ওপর আক্রমণও বেড়েছে। ভোটার তালিকায় অস্থানীয়দের নাম তোলাকে কেন্দ্র করে এই অশান্তি আরও বাড়বে বলে গোয়েন্দাদের আশঙ্কা। বিধানসভার কেন্দ্র পুনর্বিন্যাসকে কেন্দ্র করেও অশান্তি অব্যাহত। জম্মু ও কাশ্মীরের মধ্যে আসনবিন্যাস কমিয়ে দেওয়া উপত্যকা মেনে নেয়নি। মুসলমানপ্রধান উপত্যকা মনে করছে, এভাবে বিজেপি হিন্দুপ্রধান জম্মুর আধিপত্য বাড়াতে চাইছে। তাদের লক্ষ্য, জম্মু-কাশ্মীরের রাজনৈতিক অধিকার হিন্দুদের হাতে তুলে দিতে। আজ পর্যন্ত কখনো জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী কোনো হিন্দু হননি।