সন্দেশখালীর ‘শক্তিস্বরূপা’ আর কৃষ্ণনগরের রাজবধূ, ভোটের মাঠে বিজেপির নতুন চমক

রানি মা অমৃতা রায় ও সন্দেশখালীর প্রতিবাদী নারীকণ্ঠ রেখা পাত্রছবি: ভাস্কর মুখার্জি

তিনি পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরের রাজবাড়ির বধূ অমৃতা রায়। রানি মা হিসেবে আজও তিনি পরিচিত রাজ্যজুড়ে। সেই রানি মা এবার প্রথা ভেঙে লোকসভা নির্বাচনে পা দিলেন। কৃষ্ণনগর লোকসভা আসনে। বিজেপির টিকিটে।

উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালীর সন্ত্রাসের বিরুদ্ধের আর এক প্রতিবাদী কণ্ঠ রেখা পাত্র। তিনিও নামলেন বিজেপির টিকিটে বসিরহাট লোকসভা আসনে। এই বসিরহাটের অন্তর্গতই সন্দেশখালী। সন্দেশখালীতে ইডির কর্মকর্তাদের হেনস্তা করার মূল কারিগর শেখ শাজাহানের বিরুদ্ধের এক প্রতিবাদী কণ্ঠ হলেন রেখা পাত্র। রাজনীতির সঙ্গে রেখারও কোনো সংস্রব ছিল না।

অমৃতা রায় এবং রেখা পাত্র—এমন দুই নতুন প্রার্থী দিয়ে ভোটের মাঠে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে বিজেপি।

গত রোববার রাতে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির দ্বিতীয় পর্বের মনোনয়নতালিকা প্রকাশ করা হয়।  এরপর ৪৮ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গতকাল মঙ্গলবার কথা বললেন রেখা পাত্রের সঙ্গে। কুশল বিনিময় করে অভয় দিয়ে বললেন, ‘আমি আপনার কথা শুনেছি। আশীর্বাদ করছি আপনি এবারের লোকসভা নির্বাচনে বিজয়ী হবেন। নারী মুক্তি আন্দোলন, সন্ত্রাস এবং নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার  হয়েছে, তা দেশবাসী দেখেছে। অভিনন্দন জানিয়েছে। আমি আশীর্বাদ করছি আপনি সফল হবেন।’

প্রধানমন্ত্রী মোদি রেখা পাত্রকে আরও বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গকে সন্ত্রাসমুক্ত করার জন্য বলিষ্ঠ ভূমিকা নেবেন।

প্রধানমন্ত্রী রেখা পাত্রের সঙ্গে প্রথমে বাংলায় শুভেচ্ছা জানান। তারপরে হিন্দিতে বলেন। রেখা পাত্রও হিন্দি ভাষায় কথা বলেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। অভিযোগও জানান সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে, নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে। প্রধানমন্ত্রী সব কথা শুনে অভয় দেন রেখা পাত্রকে। তাঁকে প্রধানমন্ত্রী ‘শক্তিস্বরূপা’ হিসেবে সম্বোধন করেন। এই রেখা পাত্রই তাঁর কন্যাসন্তানকে কোলে নিয়ে সন্দেশখালীতে সন্ত্রাসবিরোধী আন্দোলনে শরিক হন।

প্রধানমন্ত্রীকে রেখা পাত্র আরও বলেন, ‘আমি আপনার আশীর্বাদ নিয়ে আপনার ছোট মেয়ে হয়ে কাজ করতে চাই।’ রেখা পাত্র প্রধানমন্ত্রীকে এ কথাও বলেছেন, তাঁর স্বামী তামিলনাড়ুতে কাজ করেন। গরিবের সংসার। তিনি চান এই রাজ্যে আরও কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করা হোক, যাতে এই রাজ্যের কাউকে ভিন রাজ্যে যেতে না হয়।

এদিকে রেখা পাত্রকে বসিরহাট আসনে মনোনয়ন দেওয়ার পর সন্দেশখালী তাঁর মনোনয়নের বিরুদ্ধে পোস্টার লাগানো হয়। সেখানে দাবি তোলা হয়, ‘রেখা পাত্রকে এই আসনে চাই না।’ এই প্রসঙ্গে রেখা পাত্র বলেছেন, তিনি জানেন কারা এই পোস্টার লাগিয়েছে। তারা তৃণমূলের একটি অংশ। তারা এখন ভুল বুঝতে পেরেছে। ফিরে এসেছে তাদের কাছে।  

রেখা পাত্রকে এখন বিজেপির নেতারা তালিম দিচ্ছেন কীভাবে নির্বাচনে কথা বলতে হবে, জনসংযোগ করতে হবে, কী হবে তাদের দাবিদাওয়া। কীভাবে ভোটারদের দ্বারে গিয়ে ভোট চাইতে হবে এসব বিষয়েও তাঁকে তালিম দেওয়া হচ্ছে।

রেখা পাত্রের এই আসনে তৃণমূলের প্রার্থী হলেন হাজি নুরুল ইসলাম। পশ্চিমবঙ্গের কৃষ্ণনগর আসনে বিজেপি প্রার্থী রানি মা অমৃতা রায়ও এই প্রথম নেমেছেন  নির্বাচনে। রানি মা একজন ফ্যাশন ডিজাইনার হিসেবে সুখ্যাতি অর্জন করেছেন। তাঁর পোশাকের নাম অমৃতা’জ। এই আসনে তৃণমূলের প্রার্থী হলেন মহুয়া মৈত্র। তিনিও শক্তিশালী প্রার্থী। রাজনীতিকেরা মনে করছেন, রানি মা অমৃতা রায় বিজেপির প্রার্থী হওয়ায় কিছুটা হলেও তৃণমূল চাপে রয়েছে। রানি মা সাংবাদিকদের এ কথাও বলেছেন, ‘আমার কোনো দিন স্বপ্ন ছিল না রাজনীতিতে পা দেব। কিন্তু দিলাম, মানুষের সঙ্গে কাজ করার জন্য।’

অমৃতা রায় হুগলির চন্দননগরের মেয়ে। সেই হুগলি নদীর পাড়ের মেয়ের বিয়ে হয়েছিল জলঙ্গী নদীর পাড়ের রাজবাড়িতে। দাদু, বাবা সবাই ছিলেন বিচারপতি। বাবা ছিলেন কিশোর মুখোপাধ্যায় আর দাদু ছিলেন সুধাংশু মুখোপাধ্যায়। সুধাংশু মুখোপাধ্যায়কে সে সময় বলা হতো ‘টাইগার অব ক্রিমিনাল ল’। জানা গেছে, ভারতের সংবিধান রচনাকালে তাঁর পরামর্শও নেওয়া হয়েছিল। রানি মার স্বামী সৌমিশ চন্দ্র রায়।

১৯৬১ সালে জন্ম রানি অমৃতার। বিয়ে ১৯৮১ সালে। পড়েছেন কলকাতার লা মার্টিনিয়ার স্কুল, বিড়লা কলেজে। স্নাতকোত্তর পাঠ নেন কলকাতার লরেটো হাউস থেকে। টিচার্স ট্রেনিং কোর্সও করেছেন। রানি অমৃতার ছেলে মণীশ চন্দ্র রায় কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী।