কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটিতে জায়গা পেলেন বিদ্রোহীরাও

বিজেপি ও কংগ্রেসের লোগো

ওয়ার্কিং কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে বেশ কয়েকটা বার্তা সংগঠনের সর্বস্তরে তো বটেই, বিরোধী জোটের শরিকদের মধ্যেও ছড়িয়ে দিলেন কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব। গতকাল রোববার ওই কমিটি গঠন করা হয়।

মল্লিকার্জুন খাড়গে গত বছরের অক্টোবরে কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর পুরোনো কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন ও আগামী বছরের লোকসভা ভোটের কথা মাথায় রেখে নতুন এই কমিটি গঠিত হয়েছে।

দল পরিচালনার ক্ষেত্রে সোনিয়া গান্ধী বরাবর যে দর্শনে বিশ্বাসী, খাড়গে তারই প্রতিফলন ঘটিয়েছেন নতুন কমিটিতে। সোনিয়া সব সময় সবাইকে নিয়ে চলার পক্ষপাতী। প্রতিহিংসাপরায়ণতা তাঁর চরিত্রে কখনো ছিল না। প্রবীণ খাড়গের রাজনৈতিক দর্শনও তেমনই। তাই তাঁর বিরুদ্ধে ভোটে প্রার্থী হওয়া কেরালার শশী থারুরকে তিনি মূল কমিটিতে স্থান দিয়েছেন।

গণতন্ত্রের স্বার্থে সোনিয়াকে চিঠি লিখে দলে সংস্কারের দাবি যাঁরা জানিয়েছিলেন, সেই ‘বিদ্রোহী’ জি-২৩ গোষ্ঠীর নেতাদেরও কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে রাজস্থানের তরুণ অসন্তুষ্ট নেতা শচীন পাইলটকেও। পাইলট এই প্রথম ওয়ার্কিং কমিটিতে এলেন। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চলার বার্তার পাশাপাশি যাতে গোষ্ঠী কলহ মাথাচাড়া না দেয়, সে জন্য রাজ্যস্তরীয় নির্বাচনগুলোর দিকেও জোর নজর দেওয়া হয়েছে।

বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র প্রতিও এটাই কংগ্রেসের বার্তা। বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিজেপির মোকাবিলা করতে হবে।

মূল ওয়ার্কিং কমিটির মোট সদস্যসংখ্যা ৩৯। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন দল সভাপতি খাড়গে, সাবেক সভানেত্রী সোনিয়া ও রাহুল গান্ধী। আছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এবং পদাধিকারবলে লোকসভার বিরোধী নেতা অধীর চৌধুরী। জি-২৩-এর মূল হোতা ছিলেন গুলাম নবী আজাদ। তিনি দল ছেড়েছেন। দল ছেড়েছেন আইনজীবী কপিল সিব্বালও। কিন্তু মূল কমিটিতে জায়গা পেয়েছেন ওই গোষ্ঠীরই মুকুল ওয়াসনিক, আনন্দ শর্মা ও শশী থারুর।

আসামের তরুণ নেতা তরুণ গগৈ ও পশ্চিমবঙ্গের সাবেক সংসদ সদস্য দীপা দাশমুন্সিকে মূল কমিটিতে নেওয়া হয়েছে। সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পি চিদাম্বরম, আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি ও সালমান খুরশিদ, দুই মুখপাত্র জয়রাম রমেশ ও রনদীপ সিং সুরযেওয়ালা ছাড়াও স্থান হয়েছে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর। তবে উত্তর প্রদেশের নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব থেকে প্রিয়াঙ্কাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

ওয়ার্কিং কমিটির মোট স্থায়ী সদস্য ৩২ জন। এখানেও জি-২৩ গোষ্ঠীর নেতা বলে পরিচিত লোকসভা সদস্য মণীশ তিওয়ারির সঙ্গে জায়গা পেয়েছেন ত্রিপুরার কংগ্রেস নেতা সুদীপ রায়বর্মন। বিশেষ আমন্ত্রিতের সংখ্যা ১৩।

গত বছর রাজস্থানের উদয়পুরে বসেছিল কংগ্রেস শীর্ষ নেতাদের ‘চিন্তন শিবির’। তারপর গত ফেব্রুয়ারি মাসে ছত্তিশগড় রাজ্যের রাজধানী রায়পুরে বসেছিল কংগ্রেসের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন। দুই জায়গাতেই সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত ছিল, ওয়ার্কিং কমিটির মোট সদস্যের ৫০ শতাংশের বয়স ৫০ বছরের কম হতে হবে। সেই সিদ্ধান্ত অবশ্য পালিত হয়নি।

মূল কমিটির মোট ৩৯ সদস্যের মধ্যে ৫০ বছরের কম বয়সী রয়েছেন মাত্র তিনজন। রাজস্থানের শচীন পাইলট, আসামের গৌরব গগৈ ও মধ্যপ্রদেশের কমলেশ্বর প্যাটেল। অবশ্য স্থায়ী সদস্য ও বিশেষ আমন্ত্রিত ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকেরই বয়স ৫০ বছরের কম। সব মিলিয়ে ওয়ার্কিং কমিটির মোট সদস্যসংখ্যা ৮৪। তাঁদের মধ্যে প্রাধান্য পেয়েছেন দলিত, অনগ্রসর, সংখ্যালঘু, আদিবাসী ও নারীরা।