ভারতে কংগ্রেসের ব্যাংক হিসাব জব্দ, পরে আবার মুক্ত

নির্বাচনী বন্ড অবৈধ ও অসাংবিধানিক ঘোষণার পরদিনই কংগ্রেস জানাল, তাদের চারটি ব্যাংক হিসাব জব্দ বা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। আজ শুক্রবার সংবাদ সম্মেলন করে কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে কংগ্রেস কোষাধ্যক্ষ অজয় মাকেন বলেন, দেশে গণতন্ত্রের জলাঞ্জলি সম্পূর্ণ। দেশের প্রধান বিরোধী দলের সব ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে।

মাকেন বলেন, গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে তাঁরা জানতে পারেন, ব্যাংকগুলো দলের চেক নিচ্ছে না। ভাঙাচ্ছে না। পরে দেখা যায়, ব্যাংক হিসাবগুলো জব্দ করা হয়েছে। বিজেপি সরকার কংগ্রেসের ব্যাংক হিসাব শুধু জব্দ করেনি, তারা দেশের গণতন্ত্রেই তালা মেরে দিয়েছে। দল কোনো অর্থ খরচ করতে পারছে না। দলীয় কার্যালয়ের বিদ্যুতের বিল দিতে পারছে না। কর্মীদের বেতন দিতে পারছে না। ফলে ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রাসহ দলের সব কর্মসূচি ব্যাহত হবে।

কংগ্রেস জানায়, এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তারা আয়কর অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালে (আইটিএটি) আবেদন করেছে।

মাকেনের সংবাদ সম্মেলনের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই অবশ্য জানা যায়, আইটিএটি সেই জব্দ ব্যাংক হিসাবগুলো খুলে দিয়েছে। দলের আইনজীবী বিবেক তনখা সেই খবর জানিয়ে গণমাধ্যমকে বলেন, আপাতত হিসাবগুলোয় লেনদেন করা যাবে। ট্রাইব্যুনাল পরের বুধবার এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।

তনখা বলেন, ট্রাইব্যুনালকে তিনি বলেছেন, অ্যাকাউন্ট ‘জব্দ’ করে দেওয়া হলে কংগ্রেস নির্বাচনী উৎসবে অংশ নিতে পারবে না।

অজয় মাকেনের অভিযোগের সঙ্গে সঙ্গে আক্রমণাত্মক হন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গেও। আজ শুক্রবার ‘এক্স’ হ্যান্ডেলে তিনি লেখেন, ‘ক্ষমতায় অন্ধ মোদি সরকার নির্বাচনের ঠিক আগে দেশের বৃহত্তম বিরোধী দলের সব ব্যাংক হিসাব বন্ধ করে দিয়েছে। এটা দেশের গণতন্ত্রের প্রতি জঘন্য আক্রমণ।’

সরকারের এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে খাড়গে নির্বাচনী বন্ড-সংক্রান্ত সুপ্রিম কোর্টের রায়ও জুড়ে দেন। লেখেন, ‘অসাংবিধানিক উপায়ে সংগৃহীত অর্থ বিজেপি নির্বাচনে খরচ করবে। অথচ জনগণের কাছ থেকে চাঁদা নিয়ে ক্রাউডফান্ডিং মারফত কংগ্রেস যে অর্থ সংগ্রহ করেছে, তা জব্দ করেছে। এই কারণেই আমি বলেছিলাম, ভবিষ্যতে এ দেশে কোনো ভোটই হবে না।’

খাড়গে বলেন, বিচার বিভাগের কাছে তাঁরা আবেদন জানিয়েছেন, যাতে দেশের বহুদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থা রক্ষিত হয়। গণতন্ত্র যাতে রক্ষা করা যায়।

ব্যাংক হিসাব বাজেয়াপ্ত করা হয় যুব কংগ্রেসেরও। মোট চারটি হিসাব। তা করেছে আয়কর বিভাগ। আয়কর বিভাগের বক্তব্য, ২০১৮-১৯ সালের নির্বাচনী বছরে খরচের হিসাব জমা দিতে দল ৪৫ দিন দেরি করেছিল। সে জন্য যুব কংগ্রেসসহ অন্য শাখা সংগঠনের বিরুদ্ধে আয়কর ফাঁকির অভিযোগ এনে আয়কর বিভাগ ২১০ কোটি রুপি জরিমানা ধার্য করেছিল। তা নিয়ে দুই পক্ষে আলোচনা চলছে। বিষয়টি আয়কর ট্রাইব্যুনালে বিবেচনাধীন। তা সত্ত্বেও বেআইনিভাবে হিসাবগুলো জব্দ করা হয় বলে কংগ্রেসের অভিযোগ।

জব্দ করা এসব হিসাবে দলের তহবিলে দেওয়া কংগ্রেসের বিধায়ক ও সংসদ সদস্যদের ভাতার অংশও জমা হতো। সেই দাবি জানিয়ে কোষাধ্যক্ষ বলেন, কে কত টাকা পার্টিকে দিয়েছেন, তার পূর্ণ হিসাব দলের কাছে রয়েছে। অথচ তা সত্ত্বেও ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। গণতন্ত্রের বদলে দেশে যে স্বৈরাচার চলছে, এটাই তার প্রমাণ।

এই অভিযোগর কিছু সময় পরই অবশ্য হিসাব মুক্ত করে দেওয়ার খবর আসে।

নির্বাচনী বন্ড মারফত যত আয়, তার অধিকাংশই গেছে বিজেপির তহবিলে, মোট আদায়ের প্রায় ৬০ শতাংশ। দলীয় তহবিল বাড়াতে গত ২৮ ডিসেম্বর দলের ১৩৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিন থেকে কংগ্রেস জনতার কাছে থেকে চাঁদা নেওয়া শুরু করে। ১৩৮তম বছর উপলক্ষে সাধারণের কাছ থেকে ১৩৮ অথবা তার গুণিতকে ১ হাজার ৩৮০ অথবা ১৩ হাজার ৮০০ রুপি করে চাঁদা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সেই অভিযানের নাম ছিল ‘ডোনেট ফর দেশ’। মাকেনের দাবি, ওই অর্থও জব্দ করা হিসাবে জমা ছিল।

ট্রাইব্যুনালের চূড়ান্ত শুনানি কংগ্রেসের বিরুদ্ধে গেলে লোকসভা নির্বাচনে প্রচারে কংগ্রেসকে বিপাকে পড়তে হবে। দলের কারও কারও ধারণা, নির্বাচনী বন্ডে ধাক্কা খাওয়ার পর বিজেপি আয়কর বিভাগ মারফত কংগ্রেসকে এভাবে ‘শিক্ষা’ দিতে চাইছে।