মিয়ানমারের সঙ্গে সীমান্ত বেড়া দিয়ে বন্ধ করছে ভারত

অমিত শাহছবি: এএনআই

বেড়া দিয়ে ভারত-মিয়ানমার সীমান্ত বন্ধ করতে যাচ্ছে দিল্লি। এ বিষয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে চুক্তিও পুনর্বিবেচনা করা হবে। ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এ ঘোষণা দিয়েছেন।

আসাম পুলিশের কমান্ডো বাহিনীর ‘পাসিং আউট প্যারেড’-এ দেওয়া বক্তৃতা আজ শনিবার অমিত শাহ এ ঘোষণা দেন।

অমিত শাহ বলেন, ‘মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের সীমান্ত বেড়া দিয়ে সুরক্ষিত করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। পুরো সীমান্ত বাংলাদেশের মতো বেড়া দিয়ে বন্ধ করার কাজ সম্পন্ন করা হবে। মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের যে অবাধ যাতায়াতের চুক্তি আছে, সেই চুক্তি ভারত সরকার পুনর্বিবেচনা করবে। দুই দেশের মধ্যে আসা-যাওয়ার এই ব্যবস্থা বন্ধ হতে চলেছে।’

ভারত-মিয়ানমারের মধ্যে সীমান্ত বন্ধ করা হতে পারে এই মর্মে গত কয়েক বছর ধরে জল্পনা চলছিল। আজ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ঘোষণায় নির্দিষ্টভাবে জানা গেল, ভারত ১ হাজার ৬৪৩ কিলোমিটার সীমান্ত বন্ধ করতে যাচ্ছে।

অনুষ্ঠানে আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার কাজের ভূয়সী প্রশংসা করেন অমিত শাহ। তিনি বলেন, আসামে কংগ্রেসের পদযাত্রায় মানুষ বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন বলে মন্তব্য করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

কেন বন্ধ হয়নি এত দিন

ভারত-মিয়ানমারের ১ হাজার ৬৪৩ কিলোমিটার সীমান্তের মধ্যে ১ হাজার ৪৭২ কিলোমিটার চিহ্নিত করা হয়েছে। গত বছর ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মণিপুরের মোরেতে ১০ দশমিক ০২৩ কিলোমিটার সীমান্তে বেড়া দেওয়ার জন্য ভারত সরকারের সীমান্তে রাস্তা নির্মাণের সংস্থা বর্ডার রোডস অর্গানাইজেশনকে (বিআরও) দায়িত্ব দেওয়া হয়। তার মধ্যে ৬ দশমিক ৮১২ কিলোমিটার সীমান্তে বেড়া নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। যদিও ২০২৩ সালে বেড়া দেওয়ার কাজ শেষ করার কথা ছিল।

অতীতে বিভিন্ন সময়ে সীমান্ত বন্ধের কাজ করার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু কাজ বন্ধ হয়ে যায় প্রধানত উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের বিরোধিতার কারণে। ভারত মিয়ানমারের সীমান্তের ৫২০ কিলোমিটার রয়েছে অরুণাচল প্রদেশে, নাগাল্যান্ডে রয়েছে ২১৫ কিলোমিটার, মণিপুরে ৩৯৮ এবং মিজোরামে ৫১০ কিলোমিটার।

বিরোধিতার কারণ হলো ভারত ও মিয়ানমারের মধ্যে ষাটের দশকে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির কারণ হলো, উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের সঙ্গে মিয়ানমারের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের রক্তের এবং সামাজিক যোগাযোগ রয়েছে। এই চুক্তির ফলে দুই দেশের মানুষ অবাধে অন্য দেশের ভেতরে ১৬ কিলোমিটার পর্যন্ত যাতায়াত করতে পারেন। এই চুক্তি ২০১৬ সালে নবায়ন করা হয়।

এই চুক্তি খারিজ করে সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে মিজোরাম এবং নাগাল্যান্ডের দুটি প্রধান সামাজিক সংগঠন। অতীতেও তারা এ ধরনের উদ্যোগের বিরোধিতা করেছে। মিজোরামের রাজ্য সরকারও ধারাবাহিকভাবে এই চুক্তি খারিজ করা ও সীমান্ত বন্ধ করার বিরোধিতা করেছে। সেই কারণেই অমিত শাহ বলেছেন যে বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা হচ্ছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সূত্রকে উদ্ধৃত করে ভারতের প্রচারমাধ্যমগুলো অতীতে জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক সীমান্ত বন্ধ হবে কি হবে না, তা নিয়ে কথা বলার অধিকার রাজ্য সরকারগুলোর নেই। অতএব রাজ্যস্তরে এর বিরোধিতা হলে ভারত সরকার তার মোকাবিলা করবে। ভারত সরকার ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে কথাবার্তা বলছে বলেও অতীতে জানানো হয়েছে।

এদিকে মণিপুর সরকার ২০২০ সাল থেকে মিয়ানমারের সঙ্গে অবাধ যাতায়াত বন্ধ করেছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিরেন সিং গত সেপ্টেম্বরে প্রচারমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, অবাধ যাতায়াত বন্ধ করতে তিনি ইতিমধ্যেই ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছেন। তাঁর বক্তব্য ছিল, মিয়ানমারের সঙ্গে অবাধ যাতায়াতের কারণে মণিপুরে জাতিগত হিংসা রোধ করা যাচ্ছে না। ভারত সরকারেরও একই রকম বক্তব্য ছিল।

জঙ্গিরা মিয়ানমারকে ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে ভারতে এসে সহিংসতা চালাচ্ছে বলেও অতীতে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা জানিয়েছিলেন। বর্তমানে মিয়ানমার সীমান্তবর্তী মোরেতে প্রবল সংঘাত চলছে এবং গত বুধবার থেকে ৯৬ ঘণ্টায় অন্তত সাতজনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে অন্তত দুজন ভারতের নিরাপত্তা কর্মী।
এই অবস্থায় আজ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানিয়ে দিলেন যে ভারত সীমান্ত বন্ধ করে দিতে যাচ্ছে। এর জেরে মিজোরাম, মণিপুর এবং নাগাল্যান্ডে কোনো বিরোধিতা হয় কি না, এখন সেটাই দেখার বিষয়।