মিজোরাম-মিয়ানমার সীমান্তে বেড়া দেওয়ার বিরোধী মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী

মিজোরামের নতুন মুখ্যমন্ত্রী পু লালদুহোমাছবি: এএনআই

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় মিজোরাম রাজ্য ও সীমান্তবর্তী দেশ মিয়ানমারের মধ্যে বেড়া দিতে চান না রাজ্যের নবনির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী পু লালদুহোমা। দিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ কথা জানিয়ে দিয়েছেন।

রাজ্য সরকারের এক বিবৃতিতে বলা হয়, গত বুধবার ভারতের কেন্দ্রীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন নবনির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্র সরকারকে জানিয়েছেন, মিজোরাম ও মিয়ানমারের মধ্যে সীমান্তে সীমারেখা টানা একটি ত্রুটিপূর্ণ সিদ্ধান্ত ছিল। মিজো জনগণের সম্মতির বিরুদ্ধে তৎকালীন ব্রিটিশরা মিজোরাম ও মিয়ানমারের মধ্যে বর্তমান সীমানা চিহ্নিত করেছিল।

মিজোরাম রাজ্য ও মিয়ানামারের মধ্যে ৫১০ কিলোমিটারের সীমান্ত রয়েছে। এই সীমান্তে ছিদ্র রয়েছে এবং পুরোটা সীমান্তজুড়ে বেড়া দেওয়া হয়নি।

সাবেক মুখ্যমন্ত্রী জোরামথাঙ্গাও মিজোরাম ও মিয়ানমারের মধ্যে সীমান্ত বন্ধ করার বিরোধিতা করেছিলেন। তিনি ও বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী লালদুহোমা দুজনেরই বক্তব্য, প্রধানত মিয়ানমারের চিন এবং সাগাইন প্রদেশ ও মিজোরামের মানুষ জাতিগতভাবে সংযুক্ত। দুই দেশের মানুষ পরস্পরের আত্মীয়। তাঁদের মধ্যে রক্তের ও সামাজিক সম্পর্ক রয়েছে। এই অবস্থায় বেড়া দিয়ে তাঁদের আলাদা করার সিদ্ধান্ত বর্তমানে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।

তবে মণিপুরে গত বছরের জাতিগত ও সাম্প্রদায়িক সংঘাতের পর ভারত সরকার সীমান্তে বেড়া দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করে। মণিপুর সরকারের বক্তব্য, কুকি, মিজো ও চিন—এই তিন আদিবাসী সম্প্রদায়ের একটা বড় অংশ মিয়ানমার থেকে মণিপুরের পার্বত্য ও অরণ্য অঞ্চলে এসে বসবাস করছে। এর ফলে মণিপুরের সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেই জনগোষ্ঠী সংখ্যালঘু হয়ে পড়ছে।

রাজ্য সরকার এর বিরোধিতা করার জেরে মণিপুরে গত বছর সংঘর্ষ শুরু হয়, যাতে ১৭৫ জনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনার জেরে কেন্দ্রীয় সরকার মণিপুর এবং মিজোরামের যে সীমান্ত মিয়ানমারঘেঁষা, সেখানে বেড়া দেওয়ার বিষয়ে আলাপ-আলোচনা শুরু করে। সেই আলোচনার প্রাথমিক স্তরে মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী লালদুহোমা বেড়া দেওয়ার বিরোধিতা করলেন।

লালদুহোমা বলেছেন, ব্রিটিশরা ভারত থেকে বার্মাকে পৃথক করে মিজোদের আলাদা করেছিল। তারা মিজো ভূমিকে দুটি ভাগে ভাগ করেছিল।

রাজ্য সরকারের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বুধবার বৈঠকে লালদুহোমা বলেছেন, ‘মিজো জনগণ বর্তমান ভারত-মিয়ানমার সীমান্তকে আরোপিত সীমানা হিসেবে বিবেচনা করেন। সেই কারণেই আমরা সীমান্তটি মেনে নিতে পারি না।’

মিজো জনগণ এখনো একটি প্রশাসনের অধীনে পুনরেকত্রীকরণের স্বপ্ন দেখে বলে উল্লেখ করে লালদুহোমা বলেন, ভারত-মিয়ানমার সীমান্তে বেড়া দেওয়ার যেকোনো পদক্ষেপ মিজোদের কাছে ‘অগ্রহণযোগ্য’ হবে।

লালদুহোমা আরও বলেন, ভারত-মিয়ানমার সীমান্তে বেড়া দেওয়ার পদক্ষেপ মিজোদের বিভক্ত করার ব্রিটিশদের সিদ্ধান্তকে অনুমোদন দেবে, যা মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।

ভারত সরকারের বিভিন্ন সূত্রকে উদ্ধৃত করে ভারতের প্রচারমাধ্যম জানিয়েছে, মিয়ানমারের সঙ্গে সীমান্তের ৩০০ কিলোমিটার অঞ্চলে বেড়া দেওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। ভারত ও মিয়ানমারের মধ্যে অবাধ চলাচল ব্যবস্থা রয়েছে, যাকে বলা হয় ‘ফ্রি মুভমেন্ট রেজিম’ তা বন্ধ করার বিষয়ে সচেষ্ট হয়েছে ভারত সরকার। ওই ব্যবস্থার ফলে দুই দেশের নাগরিক দুই দেশের ভেতরে ১৬ কিলোমিটার পর্যন্ত যেতে পারেন কোনো কাগজপত্র ছাড়াই।

মণিপুরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই সুযোগের অপব্যবহার হচ্ছে। এর ফলে মিয়ানমার থেকে খুব বেশিসংখ্যক লোক উত্তর-পূর্ব ভারতে ঢুকছে। হয়তো সেটা সে দেশে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাহীনতার কারণেই ঘটছে। কিন্তু সেটা দেখার দায়িত্ব তো আমাদের নয়।’

ভারতের চারটি রাজ্য—মিজোরাম, মণিপুর, নাগাল্যান্ড ও অরুণাচল প্রদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের ১ হাজার ৬৪৩ কিলোমিটার আন্তর্জাতিক সীমান্ত আছে। এর অনেকটাই এখনো বেড়াহীন অবস্থায় রয়েছে।