‘ইন্ডিয়া’ জোটের আসল চ্যালেঞ্জ সামনে

ভারতে বিজেপিবিরোধী জোট গঠনের মাত্র মাসখানেক হলো। এই জোটের সাফল্য–ব্যর্থতার ওপর নির্ভর করছে আগামী এক দশকে ভারতের রাজনীতি ও সমাজ কোন পথে এগোবে। ভারত আরও গভীরভাবে ধর্মকে আঁকড়ে নতুন রাষ্ট্রকাঠামো নির্মাণ করবে, নাকি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে টিকে থাকবে—তা অনেকটা নির্ভর করছে ২০২৪ সালের নির্বাচনের ওপর। এই নির্বাচনের পরপরই ২০২৬ সালে ভারতে ‘ডিলিমিটেশন’ বা নির্বাচনী কেন্দ্রের সীমানা পুনর্বিন্যাস করা হবে। বিজেপি জিতলে তারা নির্বাচনী কেন্দ্রের সীমানা এমনভাবে পুনর্বিন্যাস করবে, যাতে ভবিষ্যতে হারের শঙ্কা না থাকে। কিন্তু বিজেপিবিরোধী ‘ইন্ডিয়া’ জোটে নানা সমস্যা মাথাচাড়া দিতে শুরু করেছে।

ভারতের সরকারবিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র সংবাদ সম্মেলনে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে। সঙ্গে জোটের অন্যান্য নেতা। ১ আগস্ট রাজধানী নয়াদিল্লিতে
ছবি: এএনআই

ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপি–বিরোধী সর্বদলীয় ‘ইন্ডিয়া’ জোট গঠিত হয়েছে গত জুলাইয়ের মাঝামাঝি। মাসখানেক যেতে না যেতেই এই জোটে চিড় ধরেছে। কোনো কোনো দল এই জোট ছেড়ে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ (ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স) জোটে যোগ দিয়েছেন। কেউবা চরম বিভ্রান্ত। আবার রাজ্যস্তরে জোট শরিকদের মধ্যে রয়েছে ঝামেলা। রাজ্যে জোটের একে অন্যের প্রধান প্রতিপক্ষ। যেমন পশ্চিমবঙ্গে একদিকে তৃণমূল কংগ্রেস, অন্যদিকে সিপিআইএম-কংগ্রেস। ‘ইন্ডিয়া’ জোটে তারা আবার পরস্পরের মিত্র। বর্তমান জোট–রাজনীতির গুরুত্ব বোঝাতে প্রথমেই ইতিহাস থেকে দুটি উদাহরণ দেওয়া যাক। বিরোধী রাজনীতিতে জোটের গুরুত্ব কোথায়, এই উদাহরণ থেকে তা হয়তো কিছুটা বোঝা যাবে।

দুটি ঘটনাই প্রায় ১০০ বছর আগে ১৯৩০ দশকের প্রথমার্ধের। প্রথমটি ঘটে ১৯৩১ সালে চীনে। ওই সময় জাপান চীনে আক্রমণ করেছিল। সে সময়ে জাতীয়তাবাদী জেনারেল চিয়াং কাই-শেকের গুওমিন্দাং দলের সঙ্গে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির পথে-প্রান্তরে লড়াই চলছিল। গুওমিন্দাংয়ের হাতে তুলাধোনা হচ্ছিল কমিউনিস্ট পার্টি। এর এক বছর আগে ১৯৩০ সালে কমিউনিস্ট পার্টির নেতা মাও সে–তুংয়ের প্রথম স্ত্রী ইয়াং কাইহুইকে হত্যা করেছিলেন গুওমিন্দাং। কিন্তু সাম্রাজ্যবাদী জাপানকে রুখতে চিয়াং কাই-শেকের দলের সঙ্গে হাত মেলানোর সিদ্ধান্ত নেয় কমিউনিস্ট পার্টি এবং চীনা কমিউনিস্ট নেতা মাও সে–তুং। যদিও দলে শ্রেণিশত্রু গুওমিন্দাংয়ের সঙ্গে ‘যুক্তফ্রন্ট’ গড়ে তোলার বিষয়ে দ্বিমত ছিল।

পরে ১৯৩৭ সালে গুওমিন্দাংয়ের সঙ্গে হাত মেলানোর প্রশ্নে মাও বহু আলোচিত প্রবন্ধ ‘অন কন্ট্রাডিকশন’ (দ্বান্দ্বিকতা) লিখেছেন, ‘জাপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময়ে গুওমিন্দাং এবং দেশীয় সামন্তশক্তির ব্যাপারে কমিউনিস্ট পার্টি মধ্যপন্থী নীতি নিয়েছিল। কারণ, গুওমিন্দাং জাপানের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল।’

যুদ্ধের সময় মাও শত্রুকে দুই ভাগে ভাগ করেছিলেন—প্রধান ও অপ্রধান। চীনে জাপানের আগ্রাসনের সঙ্গে সঙ্গে প্রধান শত্রু গুওমিন্দাং অপ্রধান শত্রুতে পরিণত হয়। এই অপ্রধান বা দ্বিতীয় শত্রু গুওমিন্দাং হয়ে ওঠেন প্রধান মিত্র। সেই মিত্রকে সঙ্গে নিয়ে জাপানকে হারাল কমিউনিস্ট পার্টি। জাপানকে হারানোর পর কমিউনিস্ট পার্টি আবার গুওমিন্দাংয়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করল। তাদের হারিয়ে ১৯৪৯ সালে চীনে সফল বিপ্লব হলো। চীনের ক্ষমতায় এল কমিউনিস্ট সরকার। এই সরকার আগামী অক্টোবরে ৭৫ বছরে পড়বে। এটাই হচ্ছে জোটের সাফল্য।

এবার জোট গঠন না করার একটি ব্যর্থতা দেখে নেওয়া যাক। প্রায় একই সময়ে ১৯৩২ সালের নভেম্বরের নির্বাচনে অ্যাডলফ হিটলারের নেতৃত্বাধীন নাৎসি পার্টি ৩৩ শতাংশ ভোট পেল। কিন্তু জার্মানির বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো বিশেষ করে কমিউনিস্ট, সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট ও মধ্যপন্থী ক্যাথলিকরা জোট গঠন করতে ব্যর্থ হলো।

ইতিহাসবিদ টিমোথি রাইব্যাকের কথায়, ‘তাঁরা পরস্পরকে প্রায় ততটাই অবিশ্বাস করতেন, যতটা তাঁরা নাৎসিদের ভয় পেতেন। বিরোধী ঐক্য তাঁরা গড়ে তুলতে পারলেন না।’

ফলে ১৯৩৩ সালের জুলাই মাস শেষ হওয়ার আগেই জার্মানিতে সব দল নিষিদ্ধ হয়ে গেল। একমাত্র স্বীকৃত রাজনৈতিক দল হিসেবে ময়দানে রইল নাৎসি পার্টি। বিরোধীদের জোট গঠনের অক্ষমতার জেরে পরের চারটি নির্বাচনে হিটলার পেলেন যথাক্রমে ৪৩ (মার্চ ১৯৩৩), ৯২ (নভেম্বর ১৯৩৩), ৯৮ (১৯৩৬) ও ৯৯ (১৯৩৮) শতাংশ ভোট। বাকিটা তো ইতিহাস।

আরও পড়ুন

 পশ্চিমবঙ্গের চিত্র

বিশ্বের এই দুই দেশের ইতিহাস সম্পর্কে ভারতের অভিজ্ঞ নেতা–নেত্রীরা নিশ্চয়ই সচেতন। তাই তাঁরা জুলাইয়ের মাঝামাঝি বেঙ্গালুরুতে বিজেপিবিরোধীরা হাত মেলানোর সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু এখন কার্যত পরিস্থিতি ভিন্ন। এক দলের সঙ্গে অন্য দলের রাজনৈতিক স্বার্থের বিরোধ বেশ গভীর। এখন তাঁদের অবস্থা দেখে কেন যেন মনে হচ্ছে, জার্মানির বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর রাস্তায় হাঁটছেন তাঁরা, মাও সে–তুংয়ের রাস্তায় নয়।

ভারতের প্রধান বাম দল সিপিআইএমকে (কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া মার্কসিস্ট) দিয়েই শুরু করা যাক। গত জুনে পাটনায় বিরোধীদের প্রথম বড় সমাবেশে প্রধান শত্রু তৃণমূল কংগ্রেসের সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির ছবি প্রকাশ্যে আসার পর সিপিআইএমের ভেতরে তীব্র মতবিরোধ শুরু হয়েছে। অবস্থা যে এমন হতে পারে তা খানিকটা আন্দাজ করেই ২০২২ সালের এপ্রিলে সিপিআইএম শেষ পার্টি কংগ্রেসের প্রস্তাবে লিখেছিল, আগামী দিনে দলের ‘প্রধান কাজ হলো বিজেপিকে বিচ্ছিন্ন ও পরাজিত করা।’

পার্টি কংগ্রেসে বলা হয়েছিল, বিজেপিকে হটাতে সিপিআইএম সংসদের ভেতরে–বাইরে ধর্মনিরপেক্ষ বিরোধী শক্তির সঙ্গে ‘সহযোগিতা’ করবে। এই বছরের এপ্রিলে সিপিআইএমের কেন্দ্রীয় কমিটি আবার একটি বিবৃতি দিয়ে প্রতিশ্রুতি স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। কিন্তু দলের ভেতরে এসব নিয়ে দ্বন্দ্বের বিষয়টি মাথায় রেখে আরেকটি লাইনও যোগ করেছিল, ‘এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে পরিস্থিতি যেহেতু ভিন্ন, তাই যেকোনো ব্যবস্থা রাজ্য-নির্দিষ্ট হতে হবে।’

কেন্দ্রীয় কমিটি বললে বা চাইলে কী হবে। রাজ্যের প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে বিরোধ যে থামছেই না। আগস্টের গোড়ার দিকে সিপিআইএমের বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির একাংশ কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তাদের প্রশ্ন, দীর্ঘ সময় তৃণমূল কংগ্রেসের হাতে মার খেয়ে কীভাবে জাতীয় পর্যায়ে তাদের সঙ্গে জোট করা সম্ভব? এতে কি দলের নেতা-কর্মীরা আশাহত হবেন না? বিশেষত যখন সাম্প্রতিক পঞ্চায়েত নির্বাচনে বামফ্রন্টের ভোট ৫ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে বেড়ে ১২ দশমিক ৫০ শতাংশ হয়ে গেছে। দলের রাজ্য কমিটির যুক্তি মেনে সিপিআইএমের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে তাই মাঝেমধ্যেই বলতে হচ্ছে—তাদের দুই শত্রু, কেন্দ্রীয় স্তরে নরেন্দ্র মোদির বিজেপি ও রাজ্যস্তরে মমতা ব্যানার্জির তৃণমূল কংগ্রেস।

সিপিআইএম এভাবে তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপিকে একই সারিতে বসানোতে মমতা যে খুশি নন, তা বলাই বাহুল্য। জুলাইয়ে জোট হওয়ার পরে মমতা একমাস কংগ্রেস বা সিপিআইএম—কাউকেই জোরালো ভাষায় আক্রমণ করেননি। ২১ আগস্ট মমতা আবার নতুন করে সিপিআইএমের বিরোধিতা শুরু করেছেন। নতুন করে তাঁর রাজনৈতিক আক্রমণ যে সার্বিকভাবে ‘ইন্ডিয়া’ জোট ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

আরও পড়ুন

 ভারতের চিত্র

দিল্লিতে ক্ষমতাসীন আম আদমি পার্টি (আপ) ও কংগ্রেসের মধ্যে তীব্র মতবিরোধ শুরু হয়েছে। আপ-এর হাত থেকে কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকারের ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া নিয়ে সম্প্রতি এই বিরোধের সূত্রপাত। দিল্লির কংগ্রেস নেতৃত্বের একাংশ আপকে তাদের প্রধান প্রতিপক্ষ এবং চরম দুর্নীতিগ্রস্ত দল বলে মনে করে। ফলে, আপ–এর সঙ্গে সম্পর্ক কী হওয়া উচিত, তা নিয়ে কংগ্রেসের মধ্যেই বিভাজন রয়েছে। অবশ্য আপ–এর সঙ্গে তাদের বিরোধ নতুন কিছু নয়। এসব বিরোধকে কেন্দ্র করে দিন কয়েক আগে আপ ‘ইন্ডিয়া’ জোট ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ারও হুমকি দিয়েছে। এখন অবশ্য সম্পর্ক কিছুটা স্বাভাবিক আছে। তবে স্থায়ী হবে কিনা, তা আগামী কয়েক মাসে বোঝা যাবে।

আবার এরই মধ্যে উত্তর প্রদেশের রাষ্ট্রীয় লোক দল (আরএলডি) ‘ইন্ডিয়া’ জোট ছেড়ে বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটে যোগ দিয়েছে। আরএলডির প্রভাব প্রধানত উত্তর প্রদেশ রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চল ও রাজস্থানে। দল হিসেবে তারা খুব বড় নয়, আসনও বেশি পায় না। তবে তাদের গুরুত্ব অন্য জায়গায়। আরএলডি জাঠ সম্প্রদায়-নির্ভর দল।

জাঠেরা ভারতে প্রভাবশালী সম্প্রদায়। তারা প্রধানত কৃষিনির্ভর। কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে কৃষির বিভিন্ন উপকরণ—যেমন সার, রাসায়নিক, বীজ প্রভৃতির দাম বেড়েছে। কৃষির সার্বিক সংকট কংগ্রেস–নেতৃত্বাধীন ইউপিএ জোটের আমলের চেয়ে ঢের বেড়েছে। এ ছাড়া, বিজেপি বছর কয়েক আগে কৃষি বিল পাশ করানোর চেষ্টা করেছিল, যা বড় কৃষক বিশেষ করে জাঠদের স্বার্থবিরোধী। স্বাভাবিকভাবেই জাঠরা বিজেপির কাছ থেকে অনেকটা সরে গেছে।

লোকসভা নির্বাচনের আগে আরএলডির সঙ্গে যদি বিজেপির হাত মেলানো হয় জাঠরা তা ভালোভাবে নেবে না। তারপরও বিজেপির সঙ্গে তাদের হাত মেলানো জাঠ ভোটকে প্রভাবিত করবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। উত্তর প্রদেশে গত বিধানসভা (২০২২) ও লোকসভা (২০১৯) নির্বাচনে বিজেপির গড়ে ১৫ শতাংশ আসন কমেছিল। তাই লোকসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যস্তরে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের ছোট শরিকদের ভাগিয়ে নিতে বিজেপি স্বাভাবিকভাবেই আরও জোর দেবে। এতে বিরোধীদের বিপদ আরও বাড়বে।

অনেক রাজ্যেই এতদিন ‘ইন্ডিয়া’ জোটের শরিকেরা পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। যেমন পশ্চিমবঙ্গ বা দিল্লি। এই একই সমস্যা দেখা দিতে পারে আরও কয়েকটি রাজ্যে। যেমন উত্তর প্রদেশে সমাজবাদী পার্টি ও কংগ্রেসের মধ্যে, মহারাষ্ট্রে ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি, কংগ্রেস ও শিবসেনার মধ্যে, বিহারে লালুপ্রসাদ যাদবের রাষ্ট্রীয় জনতা দল এবং নীতীশ কুমারের জনতা দল ইউনাইটেডের মধ্যে। নির্বাচন ঘনিয়ে এলে আসন সমঝোতা করতে গেলে এই বিরোধ আরও বাড়বে।

আরও পড়ুন

একটি রাজনৈতিক দলকে শুধু ওপরের দিকে জোটের কথা ভাবলেই হয় না। নিচের দিকের ক্যাডার ও নেতা–নেত্রীদের কথাও মাথায় রাখতে হয়। জোটের স্বার্থে নেতা–নেত্রীদের কেন নিজের আসন ছাড়া প্রয়োজন এবং ভারতের ভবিষ্যতের কথা ভেবে বর্তমানে কেন নিজের ভবিষ্যৎ জলাঞ্জলি দেওয়া দরকার, সেটা বোঝাতে হয়। মাঝারি বা নিচের স্তরের নেতা–কর্মী এবং ক্যাডারের ওপরে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ না থাকলে এই কাজ করা অসম্ভব। পশ্চিমবঙ্গে সেই নিয়ন্ত্রণ হয়তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা তামিলনাড়ুতে ডিএমকের আছে। কিন্তু অধিকাংশ রাজ্যে যেখানে কংগ্রেস প্রধান ও বিজেপি বিরোধী দল (কিংবা উত্তর প্রদেশে সমাজবাদী পার্টি), সেসব রাজ্য তাদের ক্যাডার-কর্মীদের ওপর সেই নিয়ন্ত্রণ আছে কি না, বলা মুশকিল।

জোর দিয়েই একটি কথা বলা যায়, অধিকাংশ বড় দলেরই নেতা–কর্মীদের ওপরে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেই। সেটি বিজেপি ভালো করেই জানে। ফলে ‘ইন্ডিয়া’ জোট গঠন হওয়ার পর থেকেই বিজেপি প্রবল উদ্যমে কখনো প্রলোভন দেখিয়ে; আবার কখনো ভয় দেখিয়ে বিরোধীদের নেতা–কর্মীদের কখনো টানতে শুরু করেছে। ‘ইন্ডিয়া’ জোট গঠনের ঠিক আগে শারদ পাওয়ারের দল ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টির সম্ভবত সবচেয়ে প্রভাবশালী নেতা অজিত পাওয়ারসহ আটজন বিধায়ককে টেনে নিয়েছে মহারাষ্ট্রের বিজেপি জোট।

উত্তর প্রদেশেও নেতা–নেত্রীদের টানতে শুরু করেছে। ‘ইন্ডিয়া’ জোট গঠনের এক পক্ষকালের মধ্যে উত্তর প্রদেশে কংগ্রেস, সমাজবাদী পার্টি ও বহুজন সমাজ পার্টির অন্তত ১২ জন স্থানীয় নেতা–নেত্রীকে তুলে নিয়েছে বিজেপি। গোটা রাজ্যে তাঁরা ভোট প্রভাবিত করতে পারেন না ঠিকই, কিন্তু একেবারে স্থানীয় স্তরে একটি-দুটি আসন প্রভাবিত করার মতো যোগ্যতা রাখেন। বিজেপি যেখানে–যেখানে দুর্বল, বেছে বেছে সেখানেই তারা এই স্থানীয় নেতা–নেত্রীদের আগামী দিনে আরও বেশি করে তুলে নিয়ে যাবে।

পরিস্থিতি দেখা বোঝাই যাচ্ছে, আগামী দিনে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের চ্যালেঞ্জ অনেক বাড়বে। শুধু জার্মানির উদাহরণ দিয়ে, আদর্শের কথা বলে, ছোট দল ও স্থানীয় নেতা–নেত্রীদের ধরে রাখতে পারবে না ‘ইন্ডিয়া’ জোট। বিশেষত জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকা নরেন্দ্র মোদি যখন প্রচারে নামবেন, তখন চ্যালেঞ্জ আরও বাড়বে। আশা করা যায়, বিষয়টি মাথায় রাখছেন ‘ইন্ডিয়া’ জোটের নেতৃত্ব।

শুভজিৎ বাগচী প্রথম আলোর পূর্ব ভারতের সংবাদদাতা

আরও পড়ুন