পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে বলার পরই সংঘর্ষ শুরু মণিপুরে

দুই শিক্ষার্থীকে অপহরণ ও হত্যার অভিযোগে মণিপুর শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ। রাজ্যের রাজধানী ইম্ফলে গতকাল মঙ্গলবার এ বিক্ষোভ হয়
ছবি: এএফপি

উত্তর-পূর্ব ভারতের সহিংসতা-বিধ্বস্ত মণিপুরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে বলে দাবি করেছিল রাজ্য সরকার। তাদের দাবি ছিল, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আসছে। রাজ্য সরকারের এ ঘোষণার চার দিনের মধ্যে নতুন করে সংঘর্ষ শুরু হলো সেখানে। সহিংসতার জেরে আবারও মোবাইল ও ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দিতে হলো সরকারকে। গত শনিবার এই সেবা চালু করা হয়েছিল। একই সঙ্গে বন্ধ করে দিতে হলো স্কুল-কলেজ, আগের মতোই কিছু স্থানে জারি করতে হলো কারফিউ।

নিউইয়র্কে সব সদস্যের বার্ষিক বৈঠক চলাকালে অন্য রাষ্ট্রবিষয়ক সম্পর্ক নিয়ে আলাপ করার আমেরিকার মঞ্চ ‘কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনস’-এ এক আলোচনায় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেন, মণিপুরে আবার নতুন করে সহিংসতা শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, মণিপুরের স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে। যেমন দেশের বাইরে থেকে অভিবাসীদের ধারাবাহিক প্রবেশ এবং এর জেরে অস্থিতিশীলতা ও দীর্ঘস্থায়ী উত্তেজনা বাড়ছে। রাজ্য ও কেন্দ্র সরকার উভয়ই পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে বলেও তিনি জানান।

মণিপুরে সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের এক ছাত্র ও এক ছাত্রীকে অপহরণ ও হত্যার অভিযোগে মঙ্গলবার থেকে বিক্ষোভ সহিংস রূপ নেয়। বিভিন্ন মেইতেই সংগঠন, বিশেষত ছাত্র-ছাত্রীদের সংগঠনগুলো পথে নেমে প্রতিবাদ শুরু করে। পুলিশ ও র‌্যাপিড অ্যাকশন ফোর্সের সদস্যদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষও হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে নিরাপত্তা বাহিনীকে লাঠি চালাতে হয়, ব্যবহার করতে হয় কাঁদানে গ্যাসের শেলও। এর জেরে ৩০ জনের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রচারমাধ্যম। সংঘর্ষে গতকাল থেকে এখনো কেউ মারা যাননি।

সরকার দ্রুততার সঙ্গে মোবাইল এবং ভিপিএন-ইন্টারনেট পরিষেবার ওপর আরও পাঁচ দিনের জন্য নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করেছে বলে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষে জানানো হয়েছে। চলমান অস্থিরতার কারণে স্কুলগুলো আপাতত শুক্রবার পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

কংগ্রেস দলের পক্ষে মণিপুর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় বিজেপিকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করা হয়েছে। উত্তর-পূর্ব ভারতের এই রাজ্য ‘রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে’ বলে মন্তব্য করে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে সামাজিক মাধ্যমে বুধবার বলেছেন, ১৪৭ দিন ধরে মণিপুরের মানুষ কষ্ট পাচ্ছেন, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী মোদির রাজ্যে যাওয়ার সময় নেই...এই সহিংসতায় ছাত্রদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। এই ভয়াবহ চিত্র আবারও পুরো জাতিকে হতবাক করেছে। এটা এখন স্পষ্ট, মণিপুরের সংঘাতে নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা হয়েছে এবং সেই সহিংসতাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।

সহিংসতার জন্য সরাসরি বিজেপিকে দায়ী করে কংগ্রেস সভাপতি মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংকে ‘অযোগ্য’ বলে অভিহিত করেন এবং প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানান, তাঁকে অবিলম্বে সরানোর জন্য। খাড়গে বলেন, আরও অশান্তি নিয়ন্ত্রণের জন্য এটাই হবে প্রথম পদক্ষেপ।

মণিপুরের সহিংসতায় এখন পর্যন্ত সরকারি মতে, ১৭৫ জনের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, বাস্তুচ্যুত হয়েছেন ৬০ হাজারের বেশি মানুষ। গত ৩ মে সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের সঙ্গে  প্রধানত তফসিলি আদিবাসীদের সংঘর্ষ শুরু হয়, সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়কে তফসিলি জাতি হিসেবে মান্যতা দেওয়ার বিষয়ে মণিপুর হাইকোর্টের একটি নির্দেশের পর। সেই সংঘর্ষ এখনো থামেনি। সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এখনো রাজ্যে যাননি এবং চলমান সংঘর্ষ সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে পার্লামেন্টেও কিছু জানাননি।