হিমাচলে কি কংগ্রেস সরকারকে ফেলে দিচ্ছে বিজেপি

মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিং সুখুফাইল ছবি: এএনআই

ভারতের হিমাচল প্রদেশে কংগ্রেস শেষ দিন পর্যন্ত সরকার টিকিয়ে রাখতে পারবে কি? রাজ্যসভার নির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থী অভিষেক মনু সিংভির বিস্ময়কর পরাজয়ের পর এই মুহূর্তে এটাই বড় প্রশ্ন।

গতকাল মঙ্গলবার উত্তর ভারতের একমাত্র কংগ্রেসশাসিত এই রাজ্যে রাজ্যসভার ভোটে কংগ্রেস প্রার্থী হেরে যান। ভোটের আগে যে জয় ছিল নিশ্চিত, ক্রস ভোটিংয়ের দৌলতে তার ভাগ্য বদলে দেয় রাজ্যের বিরোধী দল বিজেপি। রাজ্য বিধানসভার ৬৮ আসনের মধ্যে কংগ্রেসের আসন ৪০, বিজেপির ২৫ এবং তিনজন স্বতন্ত্র। তিন স্বতন্ত্র কংগ্রেস সরকারকে সমর্থন করছিলেন।

গতকাল ভোটের সময় দেখা যায়, কংগ্রেসের ছয় বিধায়কের সঙ্গে ওই তিন স্বতন্ত্র বিধায়ক বিজেপি প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন। ফলে কংগ্রেস ও বিজেপি দুই দলের প্রার্থীই ৩৪টি করে ভোট পান। এ পরিস্থিতিতে দুই প্রার্থীর মধ্যে লটারি হয়। লটারির ভাগ্যও কংগ্রেসের বিরুদ্ধে যায়। জয়ী হন বিজেপি প্রার্থী সাবেক কংগ্রেসি হর্ষ মহাজন। তিনি হিমাচলের কাংড়া অঞ্চলের নেতা। লক্ষণীয়, যে ছয় কংগ্রেস বিধায়ক তাঁকে ভোট দেন, তাঁরা সবাই কাংড়ার।

গতকাল ওই বিস্ময়কর ফলের পরেই রাজ্যের বিরোধী নেতা জয়রাম ঠাকুর সদলে রাজ্যপাল শিবপ্রসাদ শুক্লর কাছে গিয়ে কংগ্রেস সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা জানিয়ে বলেন, অবিলম্বে বিধানসভায় সরকারকে শক্তির পরীক্ষা দিতে হবে। আজ বুধবার রাজ্য বিধানসভায় বাজেট পেশ হওয়ার কথা। বিরোধীদের দাবি, তার আগেই সরকারের পতন ঘটবে। নীতিগতভাবে এই সরকার ক্ষমতায় থাকার অধিকার হারিয়েছে।

কিন্তু বাজেট পেশ হয়। পাস হয় কণ্ঠভোটে। কারণ, বাজেট পেশের আগে সভায় নানাভাবে গোলমাল সৃষ্টির অভিযোগে স্পিকার কুলদীপ সিং পাঠানিয়া বিজেপির ১৫ বিধায়ককে বহিষ্কার করেন। প্রতিবাদে বিরোধীরা কক্ষ ত্যাগ করেন। বিরোধীশূন্য বিধানসভায় বাজেট পেশ ও পাস হয়। তারপরই অনির্দিষ্টকালের জন্য মুলতবি করে দেওয়া হয় বিধানসভার অধিবেশন।

এর আগে আজ বুধবার সকালে দুটি ঘটনা ঘটে। প্রথমে রটে যায়—রাজ্যসভার ভোটে হারার নৈতিক দায় নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিং সুখু পদত্যাগ করেছেন। প্রায় একই সময় মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেন রাজ্যের সাবেক কংগ্রেস মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াত বীরভদ্র সিংয়ের ছেলে বিক্রমাদিত্য সিং। রটে যায় বিক্রমাদিত্য বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন।

দুপুর নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিং সুখু নিজের ইস্তফা দেওয়ার গুজব নাকচ করে বলেন, তিনি মোটেই পদত্যাগ করেননি। তাঁকে ইস্তফা দিতেও কেউ বলেননি। তিনি বলেন, ‘আমি এর শেষ দেখে ছাড়ব। পুরো পাঁচ বছরই ক্ষমতায় থাকব।’

সুখবিন্দর বলেন, বিধানসভায় বাজেট পেশের আগে বিজেপি এসব রটাচ্ছে, যাতে সরকারের পতন ঘটে; কিন্তু তা হবে না। যাঁরা দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন, তাঁদের কারও কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। চেষ্টা হচ্ছে তাঁদের ভুল ভাঙানোর। একজন বলেন, তিনি ভুল করেছেন। তাঁকে যেন ক্ষমা করে দেওয়া হয়।

সুখবিন্দর বলেন, ‘বিজেপি সরকারের পতন ঘটাতে চেয়েছিল। সে জন্য তারা সিআরপিএফ লাগিয়েছিল। হরিয়ানা পুলিশকে কাজে নামিয়েছিল। মুড়িমুড়কির মতো টাকা ছড়িয়েছে। হেলিকপ্টারও পাঠিয়েছে বিধায়কদের কিডন্যাপের উদ্দেশে। আমরা আপাতত তা রুখে দিয়েছি।’

রাজ্যসভায় হারের পরেই কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব সরকার বাঁচাতে কর্নাটকের উপমুখ্যমন্ত্রী ডি কে শিবকুমার, হরিয়ানার সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ভূপিন্দর সিং হুডা ও ছত্তিশগড়ের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেলকে হিমাচল প্রদেশ যাওয়ার নির্দেশ দেয়।

দলের মুখপাত্র জয়রাম রমেশ দিল্লিতে বলেন, ক্রস ভোটিং দুর্ভাগ্যজনক। এখন সরকার বাঁচানো দলের প্রথম কাজ। বিজেপি তাদের নোংরা খেলা ফের শুরু করেছে। তা প্রতিরোধ করতে দল দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

কংগ্রেসনেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্র বিজেপিকে একহাত নেন। ‘এক্স’ হ্যান্ডেলে তিনি লেখেন, ৪৩ জনের বিরুদ্ধে ২৫ জনের বিজেপি যখন প্রার্থী খাড়া করে, তখনই বোঝা যায়, কোনো অসৎ উপায় তারা নিতে চলেছে। কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্তের ভয় দেখিয়ে বিজেপি ব্ল্যাকমেলের রাজনীতি করছে দেশজুড়ে। টাকার জোরে তারা মানুষের রায় নস্যাৎ করার খেলায় নেমেছে।

কংগ্রেসের পাশে দাঁড়িয়েছে আম আদমি পার্টিও (আপ)। পাঞ্জাবের আপ নেতা ও মন্ত্রী হরপাল সিং চিমা আজ বুধবার বলেন, হিমাচল প্রদেশে বিজেপি যা করল, তা দেশের পক্ষে ক্ষতিকর। বিজেপি যে দেশ ও গণতন্ত্রের পক্ষে বিপজ্জনক দেশবাসী তা বুঝতে পারছে।

হিমাচল প্রদেশ কংগ্রেসের একচ্ছত্র অধিপতি ছিলেন বীরভদ্র সিং। ছয়বারের এই সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মারা যান ২০২১ সালের জুলাইয়ে। তাঁর স্ত্রী প্রতিভা সিং ছিলেন মুখ্যমন্ত্রিত্বের দাবিদার। কিন্তু নির্বাচিত বিধায়কদের সঙ্গে আলোচনার পর মুখ্যমন্ত্রী করা হয় তৃণমূল স্তর থেকে উঠে আসা নেতা সুখবিন্দর সিং সুখুকে।

প্রদেশ রাজনীতিতে বীরভদ্র ও সুখবিন্দর ছিলেন দুই গোষ্ঠীর নেতা। সুখবিন্দরের মন্ত্রিসভায় বীরভদ্রের ছেলে বিক্রমাদিত্য স্থান পেয়েছিলেন। কংগ্রেসের এই দলীয় অন্তর্দ্বন্দ্বকেই বিজেপি চতুরভাবে কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছে।

মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের পর বিক্রমাদিত্য আজ বলেছেন, তিনি বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন না। তাঁর অভিমান দেড় বছর পরেও প্রয়াত বাবার মূর্তি বসাতে রাজ্য সরকার কোনো উদ্যোগ নেয়নি। মুখ্যমন্ত্রী হয়েও সুখবিন্দর মূর্তি বসাতে আগ্রহী হননি।

বিক্রমাদিত্য বলেন, বীরভদ্র সিংয়ের নামে ভোটে জিতেও মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে অশ্রদ্ধা করে চলেছেন। সে কারণেই তাঁর পদত্যাগ।