আদালতে ধাক্কা খেল পশ্চিমবঙ্গের সরকার, বাতিল হলো ৫ লাখ ওবিসি সনদ

কলকাতা হাইকোর্টপ্রথম আলো ফাইল ছবি

পশ্চিমবঙ্গ সরকার ২০১০ সাল থেকে থেকে যেসব ওবিসি সনদ দিয়েছিল, তা বাতিল করার নির্দেশ দিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্ট।

অনগ্রসর শ্রেণিভুক্ত মানুষের সংরক্ষণের সুবিধা দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকারের তরফে যে শংসাপত্র দেওয়া হয়, তা-ই হলো ওবিসি সনদ।

কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী ও বিচারপতি রাজশেখর মান্থার সমন্বয়ে গড়া ডিভিশন বেঞ্চ গতকাল বুধবার এক নির্দেশে জানিয়ে দিয়েছেন, বাতিল হওয়া ওবিসি সনদ ব্যবহার করে তা দিয়ে কেউ এখন আর চাকরি নিতে পারবেন না। তবে যাঁরা চাকরিতে আছেন বা যোগদানের প্রক্রিয়ায় আছেন, তাঁদের জন্য এ আইন প্রযোজ্য হবে না।

হাইকোর্ট বলেছেন, এ সনদ দেওয়ার প্রক্রিয়া আইনসম্মতভাবে হয়নি। গলদ রয়েছে।
এ নির্দেশকে স্বাগত জানিয়েছে বিজেপি ও সিপিএম।

বেঞ্চ এ কথাও বলেছেন, এখন থেকে যাঁদের ওবিসি তালিকাভুক্ত করা হবে, তাঁদের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় সিদ্ধান্তক্রমে এ তালিকা প্রণয়ন করতে হবে। বলা হয়েছে, ওয়েস্ট বেঙ্গল ব্যাকওয়ার্ড ক্লাস ওয়েলফেয়ার কমিশন ওবিসিদের তালিকা নির্ধারণ করবে। ওই তালিকা বিধানসভায় পাস করতে হবে। কিন্তু এর আগে এসবের কিছুই না করে তালিকা প্রণয়ন করা হয়।

বিজেপির অভিযোগ, মুসলিম সম্প্রদায়ের কিছু মানুষকে ওবিসি শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত করে তাঁদেরও সনদ দেওয়া হয়েছে।

গতকালই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দিল্লির এক জনসভা থেকে বলেছেন, ‘কলকাতা হাইকোর্ট ইন্ডিয়া জোটকে আবার এক থাপ্পড় মেরেছে। মমতা সরকারের ভোটব্যাংককে শক্তিশালী করার জন্য এই সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছিল।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, ‘এ রায়কে আমি স্বাগত জানাই। হাইকোর্টের নির্দেশে প্রমাণিত হলো মমতা সরকারের তোষণনীতি।’

একটি অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ২০১০ সালে পশ্চিমবঙ্গে ‘অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি (ওবিসি)’ তৈরি করেছিল বামফ্রন্ট সরকার। কিন্তু তার পরের বছরই ক্ষমতায় আসে তৃণমূল। নতুন সরকার ক্ষমতায় এসে ওই শ্রেণিসংক্রান্ত চূড়ান্ত প্রতিবেদন ছাড়াই একটি তালিকা তৈরি করে এবং আইন করে, যার ভিত্তিতেই মামলা করা হয় তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে।

২০১২ সালে হওয়া এক মামলায় মামলাকারীরা আদালতে আরজি করেন অবিলম্বে ওই আইন খারিজ করার জন্য। যুক্তি হিসেবে তাঁরা বলেন, তৃণমূল সরকার সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা ১৯৯৩ সালের ওয়েস্ট বেঙ্গল ব্যাকওয়ার্ড ওয়েলফেয়ার কমিশনের আইনের পরিপন্থী। এর ফলে সরকারি সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন প্রকৃত পিছিয়ে পড়া অংশের মানুষেরা। তাই সরকার যেন ওই আইন মেনেই সনদ দেয়।