অরুণাচল ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ, চীনের নামবদলে কোনো পরিবর্তন ঘটবে না: দিল্লি

ছবি: রয়টার্স

অরুণাচল প্রদেশ নিয়ে চীনের দাবি ও ওই রাজ্যের ১১টি অঞ্চলের নামকরণের বিষয়টি খারিজ করে ভারত জানাল, উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় এ রাজ্য ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল এবং চিরকাল তেমনই থাকবে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি আজ মঙ্গলবার এ বিষয়ে এক বিবৃতিতে বলেন, এ রাজ্যের কিছু এলাকার নতুন করে নামকরণের প্রচেষ্টা সেই বাস্তবতার কোনো পরিবর্তন ঘটাবে না।
চীন অনেক দিন ধরেই দাবি করে আসছে, অরুণাচল প্রদেশ দক্ষিণ তিব্বতের একটি অংশ। এ দাবি প্রতিষ্ঠায় তারা বহুবার অরুণাচল প্রদেশে ভারতের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সফরের সমালোচনা করেছে।

তিব্বতি ধর্মগুরু দালাই লামা যাতে অরুণাচল প্রদেশে না যান, সে জন্য বারবার প্রবল আপত্তি জানিয়ে এসেছে। অরুণাচল প্রদেশের নাগরিকদের ভিসা দিতে অস্বীকার করেছে। গত ২৫ ও ২৬ মার্চ এ রাজ্যের রাজধানী ইটানগরে জি-২০-এর ‘রিসার্চ ইনোভেশন ইনিশিয়েটিভ গ্যাদারিং’ সম্মেলনেও চীন অংশ নেয়নি। অবশ্য অরুণাচল প্রদেশ নিয়ে তাদের যাবতীয় দাবি ভারত বারবার নাকচ করে দিয়েছে। এবারেও তেমনই করা হলো।

গত সোমবার চীন অরুণাচল প্রদেশের ১১টি অঞ্চলের নামবদলের এক তালিকা প্রকাশ করে। চীনের সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমস সেই সরকারি বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী জানায়, সে দেশের অসামরিক প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ১১ এলাকার নাম আনুষ্ঠানিকভাবে পরিবর্তন করেছে। মানুষ যাতে সহজে এসব এলাকার নাম মনে রাখতে পারে, সে জন্য এ পদক্ষেপ। এ জায়গাগুলোর মধ্যে রয়েছে দুটি ভূমি অঞ্চল, দুটি নদী, দুটি আবাসিক এলাকা ও পাঁচটি পাহাড়চূড়া। তারা এক মানচিত্রও এর সঙ্গে প্রকাশ করেছে। এতে এই এলাকাগুলো ‘জাংনান’-এর অন্তর্গত বলা হয়েছে। চীন ও তিব্বতের মোট তিনটি আঞ্চলিক ভাষায় ওই বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়।

অরুণাচল প্রদেশকে চীন ‘জাংনান’ বলে ডাকে। তাদের চোখে এ রাজ্য দক্ষিণ তিব্বতের অংশ।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিটি অতি সংক্ষিপ্ত। মন্ত্রণালয় নিজে থেকেও এ বিবৃতি জারি করেনি। সংবাদমাধ্যমে খবরটি প্রকাশিত হওয়ার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ প্রতিক্রিয়া দেয়। এ নিয়ে বাড়তি কোনো মন্তব্য না করে ভারত বুঝিয়ে দিতে চেয়েছে, বিষয়টি নিয়ে প্রয়োজনের অতিরিক্ত গুরুত্ব দিতে চায় না।

অরুণাচল প্রদেশের বিভিন্ন এলাকার এমন নাম পরিবর্তন চীন আগেও দুবার করেছে। প্রথমবার ২০১৭ সালে দালাই লামার অরুণাচল প্রদেশ সফরের পর। ওই সফর আটকাতে চীন অনেক ধরনের চাপ সৃষ্টি করেছিল। ব্যর্থ হওয়ার পর তারা অরুণাচল প্রদেশের ছয়টি এলাকার নাম বদল করে। দ্বিতীয়বার এমনই কাজ তারা করে ২০২১ সালে। আগের বছর ২০২০ সালের গ্রীষ্মে গলওয়ানে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় দুই দেশের সেনাদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছিল। ২০২১ সালে তাঁরা নাম বদল করে অরুণাচল প্রদেশের ১৫টি এলাকার। এবার সেই একই কাজ তারা করল ইটানগরে জি-২০ সম্মেলনে যোগ না দেওয়ার কিছুদিনের মধ্যে। ভারতের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতেও তা-ই বলা হয়েছে, চীন এ কাজ এই প্রথমবার করেনি। আগেও তারা করেছে। এতে বাস্তবতার কোনো বদল হবে না।

লাদাখের মতো অরুণাচল প্রদেশের দিকেও প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার বিভিন্ন অংশে চীন সক্রিয়। ২০১৭ সালে দালাই লামার সফরের পর ডোকলামে চীন-ভারত-ভুটানের ত্রিদেশীয় সীমান্তে উত্তেজনা ছড়ায়। টানা ৭২ দিন ভারতীয় সেনাবাহিনী সেখানে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। শেষ পর্যন্ত চীনা ফৌজ ফিরে যেতে বাধ্য হয়।

কংগ্রেসের প্রতিক্রিয়া

অরুণাচল প্রদেশের বিভিন্ন এলাকার নামবদলে তীব্র আপত্তি জানানোর পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে একহাত নিয়েছে কংগ্রেস। দলের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে ও রাহুল গান্ধী টুইট করে মঙ্গলবার বলেন, চীন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নীতি ও নীরবতাই এসবের জন্য দায়ী।

খাড়গে ও রাহুল দুজনই টুইট করেছেন হিন্দিতে। খাড়গে লেখেন, ‘এই নিয়ে চীন তৃতীয়বার অরুণাচল প্রদেশে আমাদের এলাকার নাম বদলের দুঃসাহস দেখাল। ২০১৭ সালের ২১ এপ্রিল নাম বদলেছিল ৬টি জায়গার, ২০২১ সালের ৩০ ডিসেম্বর ১৫টি জায়গার, ২০২৩ সালের ৩ এপ্রিল ১১টি স্থানের। অরুণাচল প্রদেশ ভারতের অভিন্ন অংশ। অভিন্নই থাকবে।’ এরপরই প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণ করে তিনি বলেন, গলওয়ানের পর চীনকে মোদিজি ক্লিন চিট দিয়েছিলেন। এটা তারই ফল। দেশকে তা ভুগতে হচ্ছে।

রাহুল গান্ধী তাঁর টুইটে এ বিষয়ে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর নীরবতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছেন। পিটিআইয়ের খবরে বলা হয়, হিন্দিতে করা ওই টুইটে রাহুল লেখেন, ‘চীন ২ হাজার বর্গকিলোমিটার জমি কেড়ে নিয়েছে। ওরা জায়গার নাম বদলে দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নীরব। নিরুত্তর। প্রধানমন্ত্রী, কিসের এত ভয়?’

কংগ্রেস মুখপাত্র জয়রাম রমেশও এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নীরবতাকে দায়ী করে এক বিবৃতিতে বলেন, ‘চীনের প্ররোচনা ও সীমা লঙ্ঘন অব্যাহত। এই নিয়ে তৃতীয়বার তারা অরুণাচল প্রদেশের এলাকার নাম বদলাল। ২০২০ সালে চীন গলওয়ানে যা করেছে, তারপরও তাদের ক্লিন চিট দেওয়া ও প্রধানমন্ত্রীর নীরবতা পালনের দাম আমাদের দিয়েই যেতে হচ্ছে।’