রাহুলের সংসদ সদস্যপদ খারিজ করতে বিজেপির তোড়জোড়

রাহুল গান্ধী
ছবি: এএনআই

কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর সংসদ পদ খারিজের জোরদার চেষ্টা শুরু হয়েছে। বিজেপি সরাসরি সে দাবি জানিয়েছে। বিষয়টি আপাতত লোকসভার অধিকারভঙ্গ কমিটির বিবেচনাধীন। ওই কমিটির চেয়ারম্যান বিজেপির সংসদ সদস্য সুনীলকুমার সিং।

বিজেপির পক্ষে এ দাবি জানিয়েছেন বিহার থেকে নির্বাচিত বিজেপি নেতা নিশিকান্ত দুবে। কেন রাহুল গান্ধীর লোকসভা সদস্যপদ খারিজ করা উচিত, সে বিষয়ে তাঁর যাবতীয় বক্তব্য গত শুক্রবার তিনি কমিটির বৈঠকে পেশ করেন। রাহুল গান্ধী এ বিষয়ে তাঁর বক্তব্য ইতিমধ্যে কমিটির কাছে জমা দিয়েছেন।

আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে শেয়ারবাজারে কাপচুপি ও জালিয়াতির মাধ্যমে সম্পদ বৃদ্ধির অভিযোগ এনেছিল যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিনডেনবার্গ রিসার্চ। সেই নিয়ে তদন্তের দাবিতে বিরোধীরা সরব হয়। সংসদের উভয় কক্ষে আলোচনার দাবি জানানো হলেও তা মানা হয়নি। তদন্তের দাবিতেও সরকার কর্ণপাত করেনি।

১৯৭৬ সালে সুব্রক্ষ্মণ্যম স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, দেশে-বিদেশে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সম্মানহানি করেছেন। দেশের বদনাম করেছেন। সংসদ সদস্যপদের যোগ্য আচরণ করেননি। সংসদের অসম্মান করেছেন। রাজ্যসভায় দীর্ঘ আলোচনার পর ১৯৭৬ সালের ১৫ নভেম্বর তাঁর সদস্যপদ খারিজ হয়ে যায়। নিশিকান্ত দুবের দাবি, রাহুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ একই রকম। অতএব, তাঁরও সদস্যপদ খারিজ করা হোক।

লোকসভার বাজেট অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির প্রারম্ভিক ভাষণের ধন্যবাদজ্ঞাপক প্রস্তাবের ওপর বিতর্কে অংশগ্রহণের সুযোগ নিয়ে রাহুল গান্ধীসহ বিভিন্ন বিরোধীদলীয় সদস্যরা শিল্পপতি গৌতম আদানির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিশেষ সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেছিলেন। সরকারি আনুকুল্যের অভিযোগ এনেছিলেন। বিজেপির দাবি, ওই ভাষণের মাধ্যমে কংগ্রেস নেতা প্রধানমন্ত্রীর অসম্মান করেছেন, কুৎসা করেছেন। নিশিকান্ত দুবেও সেই এক অভিযোগ করে রাহুলের বিরুদ্ধে সভার অধিকারভঙ্গের অভিযোগ আনেন। স্পিকার ওম বিড়লা তা বিবেচনার জন্য সংশ্লিষ্ট কমিটির কাছে পাঠান। রাহুলকে শোকজও করা হয়।

ইতিমধ্যে রাহুল যুক্তরাজ্যে গিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেশের ‘গণতন্ত্রহীনতা ও সরকারের স্বৈরতান্ত্রিক প্রবণতা’ নিয়ে অনেক কথা বলেন। সব মিলিয়ে বিজেপি বলতে শুরু করেছে, দেশে তো বটেই, বিদেশেও রাহুল একনাগাড়ে প্রধানমন্ত্রীর সম্মানহানি করে চলেছেন। দেশের বদনাম করছেন। এমনকি তিনি দেশের পরিস্থিতি উন্নয়নে বিদেশের সাহায্যও চেয়েছেন। সব মিলিয়ে গত শুক্রবারের অধিকারভঙ্গ কমিটির বৈঠক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল।

নিশিকান্ত দুবে ওই বৈঠকে সুব্রক্ষ্মণ্যম স্বামীর সংসদ পদ খারিজের তুলনাটিও দাখিল করেন। ১৯৭৪ সালে উত্তর প্রদেশ থেকে জনসংঘের টিকিটে সুব্রক্ষ্মণ্যম স্বামী রাজ্যসভায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। জরুরি অবস্থা জারির পর তিনি যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও তাঁর নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের প্রবল বিরোধিতা করেন। ১৯৭৬ সালে সুব্রক্ষ্মণ্যম স্বামীর বিরুদ্ধে অধিকারভঙ্গের নোটিশ আনেন তৎকালীন সংসদীয় মন্ত্রী ওম মেহতা। অভিযোগ ছিল, দেশে-বিদেশে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সম্মানহানি করেছেন। দেশের বদনাম করেছেন। সংসদ সদস্যপদের যোগ্য আচরণ করেননি। সংসদের অসম্মান করেছেন। রাজ্যসভায় দীর্ঘ আলোচনার পর ১৯৭৬ সালের ১৫ নভেম্বর তাঁর সদস্যপদ খারিজ হয়ে যায়। নিশিকান্ত দুবের দাবি, রাহুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ একই রকম। অতএব, তাঁরও সদস্যপদ খারিজ করা হোক।

অধিকারভঙ্গ কমিটির বৈঠকে অন্যদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও কংগ্রেসের কে সুরেশ। তাঁরা চেয়ারম্যানের কাছে জানতে চান, রাহুল গান্ধীর ভাষণের বিতর্কিত অংশ সভাধ্যক্ষ কার্যবিবরণী থেকে বাদ দিয়েছেন। যে বক্তব্যের অস্তিত্বই নেই, তা কী করে শাস্তির ভিত্তি হতে পারে? তাঁদের আরও দাবি, সেদিন রাহুল প্রায় ৫০ মিনিট ভাষণ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অসম্মানজনক কথা বললে স্পিকার কী করে তাঁকে ভাষণ দিতে দিলেন?

সূত্রের খবর, নিশিকান্ত দুবে ওই বৈঠকে বাংলাদেশ ও ইসরায়েলের কথাও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ওই দুই দেশে আদানির প্রকল্প রয়েছে। ভাষণে তার উল্লেখ করে রাহুল দেশের স্বার্থহানি ঘটিয়েছেন। তাঁর যুক্তি, বাংলাদেশে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের চুক্তি হয়েছিল ২০১১ সালে। চুক্তি করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ও শেখ হাসিনা। কাজেই নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের ওপর আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র চাপিয়ে দিয়েছেন, সেই যুক্তি অসাড়।

শুধু অধিকারভঙ্গের বিষয়টিই নয়, রাহুলের বিরুদ্ধে বিজেপির বিরোধিতা সর্বাত্মক হয়ে উঠেছে। এমনকি সেই সংঘাতে জড়িয়েছেন উপরাষ্ট্রপতি ও রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জগদীপ ধনখড়ও। সংসদে মাইক্রোফোন বন্ধ করে দেওয়া নিয়ে রাহুল যা যা বলেছেন, তার প্রতিবাদ জানিয়ে সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে ধনখড় বলেন, বিদেশে গিয়ে একজন সংসদ সদস্যের এমন ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মন্তব্যের পরও চুপ থাকলে সংবিধানের প্রতি অবিচার হয়। তিনি বলেন, ভারতের গণতান্ত্রিক কাঠামো খর্ব করার এমন দুঃসাহস সমর্থনযোগ্য নয়।

হিনডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদন ও গুজরাট দাঙ্গা নিয়ে বিবিসির তথ্যচিত্রের পর বিজেপি যে ‘ভারতবিরোধী চক্রান্তের’ অভিযোগে সরব, উপরাষ্ট্রপতিও সেই পথে হেঁটে রাহুল গান্ধীর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, সময়টা গুরুত্বপূর্ণ। ভারত যখন জি-২০-এর সভাপতিত্ব করছে, তখনই দেশের কিছু মানুষ দেশকে এভাবে ছোট করছেন। সংবিধান ও সংসদকে কালিমালিপ্ত করছেন। কংগ্রেস অবশ্য উপরাষ্ট্রপতির সমালোচনা করতে ছাড়েনি। দলের মুখপাত্র জয়রাম রমেশ বলেছেন, চেয়ারম্যানের ভূমিকা ক্রিকেটের আম্পায়ারের মতো। শাসক দলের চিয়ারলিডারের নয়।