ভারতে কামতাপুর রাজ্যের দাবিতে সশস্ত্র সংগ্রামের নেতা জীবন সিংহের আত্মসমর্পণের খবর

দলের সদস্যদের সঙ্গে কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (কেএলও) প্রধান জীবন সিংহ
ছবি: সংগৃহীত

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও আসামের কিছু অংশ নিয়ে পৃথক কামতাপুর রাজ্য গঠনের সশস্ত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া জীবন সিংহ আত্মসমর্পণ করেছেন বলে খবর বেরিয়েছে। দেশটির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিকভাবে না জানালেও গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে একাধিক সংবাদমাধ্যম জীবন সিংহের আত্মসমর্পণের খবর জানিয়েছে।

ভারতের জাতীয় ও স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (কেএলও) প্রধান জীবন সিংহ নাগাল্যান্ড রাজ্যের মোন জেলায় আধাসামরিক বাহিনী আসাম রাইফেলসের কাছে দলের সদস্যদের নিয়ে আত্মসমর্পণ করেছেন। তবে সম্প্রতি বলা হলেও তিনি কবে আত্মসমর্পণ করেছেন, তা জানা যাচ্ছে না। জীবন সিংহকে এখন রাজধানী দিল্লিতে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে শান্তি আলোচনা শুরু করবেন।

দীর্ঘদিন ধরে মিয়ানমারের জঙ্গলে ছিলেন জীবন সিংহ। সেখানে থেকেই পশ্চিমবঙ্গ ও আসামের বোড়ো জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত জেলাগুলো নিয়ে পৃথক কামতাপুর রাজ্যের দাবিতে আন্দোলন করছিলেন। ১৯৯৫ সালে কেএলও গঠন করার পর থেকে তিনি এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। তবে সম্প্রতি সংগঠনটির শক্তি অনেকটা কমেছে। পুরনো নেতাদের মৃত্যু হয়েছে বা দল ছেড়েছেন। কেন্দ্রীয় সরকারও তাঁকে শান্তি আলোচনায় বসার প্রস্তাব দিয়েছিল। সংগঠনের শক্তিক্ষয়ের ফলে তিনি আলোচনায় বসার ব্যাপারে তাঁর সম্মতিও আগেই জানিয়েছিলেন। গত শুক্রবার এক বিবৃতি দিয়ে জীবন সিংহ জানান যে, শান্তি আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে।

জীবন সিংহের এই বিবৃতির বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পরপরই জল্পনা শুরু হয় যে, তিনি সদলবলে আত্মসমর্পণ করেছেন। যদিও এখনো কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে জীবন সিংহের আত্মসমর্পণের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মাকে ধন্যবাদ দিয়েছেন জীবন সিংহ। বিবৃতিতে তিনি বলেন, আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে। এতে তিনি অত্যন্ত সন্তুষ্ট। কোচ কামতাপুর জনগোষ্ঠী ও বিভিন্ন সংগঠনের দীর্ঘদিনের দাবির ভিত্তিতে পৃথক রাজ্য পুনর্গঠনে বিষয়ে একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া গেছে। ১৯৪৯ সালের ২৮ আগস্ট ভারত সরকার এবং স্বাধীন কামতাপুরের মধ্যে যে ঐতিহাসিক চুক্তি হয়েছিল তার ভিত্তিতেই এই সিদ্ধান্তে পৌঁছানো গেছে।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, কেএলও নেতা জীবন সিংহের এই বিবৃতির ওপর ভিত্তি করে ভারত সরকার যদি তাঁর সঙ্গে এখন আলোচনায় বসে, তবে পশ্চিমবঙ্গকে ভেঙে একটি পৃথক রাজ্য গঠনের বিষয়টি একটি আলাদা এবং নতুন মাত্রা পাবে।

সেক্ষেত্রে, ২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচনের আগে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে পৃথক একটি রাজ্য গঠনের বিষয়টি যে একটি অন্যতম প্রধান বিষয় হিসেবে উঠে আসবে সে সম্পর্কে পর্যবেক্ষকরা নিশ্চিত।