গুজরাটে দুর্ঘটনার পর কর্মসূচি কেন বাতিল করলেন না, জানালেন প্রধানমন্ত্রী মোদি

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি

গুজরাটের মরবিতে ঝুলন্ত সেতু দুর্ঘটনায় নিতহ মানুষের সংখ্যা দেড়শ ছুঁই ছুঁই সত্ত্বেও কেন তিনি পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি বাতিল করলেন না, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আজ সোমবার সকালে তার ব্যাখ্যা দিলেন। সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের জন্মবার্ষিকীতে গুজরাটের কেভাডিয়ায় ‘লৌহ পুরুষের’ সুউচ্চ ‘স্ট্যাচু অব ইউনিটি’তে রাষ্ট্রীয় একতা দিবস পালন উপলক্ষে আয়োজিত সভায় প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, ‘আমার হৃদয় ভেঙে গেছে।

মন পড়ে রয়েছে মরবিতে, যদিও শরীর এখানে কর্তব্যের খাতিরে।’ মোদি আরও বলেন, দুর্ঘটনার কবলে পড়া মানুষজনের পরিবারের সঙ্গে রাজ্য সরকার রয়েছে। সব রকম সহায়তায় রাজ্য সরকার প্রস্তুত। দুর্ঘটনার তদন্তে ইতিমধ্যেই এক কমিটি গঠিত হয়েছে।

কেভাডিয়ার অনুষ্ঠান পূর্বনির্ধারিত। যেমন নির্ধারিত উত্তর–পূর্ব গুজরাট ও দক্ষিণ রাজস্থানের সংযোগকারী ২ হাজার ৯০০ কোটি রুপির রেল প্রকল্পের উদ্‌ঘাটনও।

গতকাল রোববার প্রধানমন্ত্রী তাঁরই রাজ্যে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন এয়ার বাস ও টাটার এক প্রকল্পের, যেখানে প্রতিরক্ষা বাহিনীর জন্য সি২৯৫ সরবরাহকারী বিমান তৈরি হবে।

এই সব প্রকল্পের জন্য প্রধানমন্ত্রী তিন দিনের সফরে নিজ রাজ্যে রয়েছেন। তার মধ্যেই এই দুর্ঘটনা। সাম্প্রতিককালে এত ভয়াবহ এত দুর্ঘটনা সত্ত্বেও কেন তিনি কর্মসূচি বাতিল করলেন না, ভেদিয়াতে নিজেই তার ব্যাখ্যা দিয়ে বললেন, মন ভেঙে গেলেও কর্তব্য থেকে দূরে থাকা যায় না। সর্দার প্যাটেলের শিক্ষাও তা–ই। হাজার প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও কর্মে অবিচল থাকতে হবে।

মরবির দুর্ঘটনা এমন এক সময়ে হলো, যখন গুজরাট রাজ্যে ভোটের বাদ্যি বেজে গেছে। ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণার পর কোনো সরকারি প্রকল্পের ঘোষণা করা যায় না। এই কারণে হিমাচল প্রদেশের ভোট নির্ঘণ্ট ঘোষিত হলেও গুজরাটের ভোটের তারিখ নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করেনি, যাতে প্রধানমন্ত্রী উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর কাজ সেরে ফেলতে পারেন।

এ নিয়ে কমিশনকে সমালোচিতও হতে হয়েছে। এই সময়ে মরবির দুর্ঘটনা রাজ্য সরকার ও শাসক বিজেপির পক্ষে এক বড় ধাক্কা। কেননা, ইতিমধ্যেই বিরোধীরা প্রচার শুরু করেছেন, ‘ফিটনেস সার্টিফিকেট’ না পাওয়া সত্ত্বেও এই সেতু খুলে দেওয়া হয় স্রেফ ভোটের দিকে তাকিয়ে। কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সিং সুরযেওয়ালা রাজ্য সরকারকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে বলেছেন, এটা মনুষ্যসৃষ্ট (ম্যান মেড) ট্র্যাজেডি। মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র প্যাটেল ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হর্ষ সাংভি এই বিপর্যয়ের জন্য দায়ী। ভোটের দিকে তাকিয়ে তড়িঘড়ি এই সেতু জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।

প্রবীন কংগ্রেস নেতা মধ্য প্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী দিগ্বিজয় সিং আবার মোদির কথা ধার করেই তাঁকে আক্রমণ করেছেন। ২০১৬ সালের ৩১ মার্চ কলকাতায় বিবেকানন্দ রোডের ফ্লাইওভার ভেঙে পড়ার পর প্রধানমন্ত্রী জানতে চেয়েছিলেন ওটা ঈশ্বরের মার নাকি দুর্নীতির কোপ। সেই বাক্যবন্ধ ধার করে দিগ্বিজয় টুইট করে জানতে চান, ‘মোদিজি, মরবি বিপর্যয় “অ্যাক্ট অব গব” নাকি “অ্যাক্ট অব ফ্রড”?’ সিপিআই নেতা বিনয় বিশ্বম সমালোচনা করে বলেছেন, রাজ্য সরকার কতটা উদাসীন এটা তার প্রমাণ।

গতকাল রাত থেকেই শুরু হয়েছে উদ্ধারকাজ। আজও তা অব্যাহত। সকাল ১০টা পর্যন্ত ১৪১ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে বলে রাজ্য সরকারের পক্ষে জানানো হয়। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (এনডিআরএফ) ছাড়াও উদ্ধারকাজে হাত লাগিয়েছে সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনীর মেজর গৌরব সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তাঁরা মৃতদেহ তল্লাশি করছেন। এনডিআরএফের মহাপরিচালক অতুল কানোয়াল জানান, ৩০ জন উদ্ধারকারী দিনরাত তল্লাশি চালাচ্ছেন।