নির্বাচনের আগে পশ্চিমবঙ্গে যেভাবে সিএএ বাস্তবায়ন করতে চায় বিজেপি

বিজেপির কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর–ছবি: এএনআই

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) নিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সমস্যা মিটছে না। এই আইন কবে বাস্তবায়িত হবে, তা নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী এবং তফসিলি জাতিভুক্ত নমঃশূদ্র সম্প্রদায় ও ধর্মীয় মতুয়া গোষ্ঠী–অধ্যুষিত উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের সংসদ সদস্য শান্তনু ঠাকুরকে। তাঁকে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনেও বনগাঁ আসন থেকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিজেপি।

শান্তনুকে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়, কারণ তিনি ধারাবাহিকভাবে বলে আসছেন ২০১৯ সালে আইনে পরিণত হওয়া সিএএ নির্বাচনের আগেই বাস্তবায়িত হবে। ভারতের বাইরে থেকে আসা শরণার্থী সম্প্রদায়, যাঁদের একটা বড় অংশই নমঃশূদ্র বা মতুয়া সমাজভুক্ত, তাঁরা নাগরিকত্ব পাবেন।

পশ্চিমবঙ্গে এখনো পর্যন্ত তিনটি জনসভা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এর মধ্যে দুটি সভা প্রধানমন্ত্রী করেছেন নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগর ও উত্তর চব্বিশ পরগনার বারাসাতে। এই দুটি আসনেই বেশির ভাগ ভোটার নমঃশূদ্র ও মতুয়া সম্প্রদায়ের। কিন্তু কোনো সভাতেই প্রধানমন্ত্রী মোদি নির্বাচনের আগে সিএএ বাস্তবায়ন নিয়ে কিছু বলেননি, যেমনটা বলেছেন শান্তনু ঠাকুর।

গতকাল বৃহস্পতিবার শান্তনু যখন তাঁর নির্বাচনী প্রচারের সূচনা করতে উত্তর চব্বিশ পরগনার ঠাকুরনগরের মতুয়া ধাম ঠাকুরবাড়িতে যান, তখন স্থানীয় সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করেন প্রধানমন্ত্রী কেন বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি এবং সিএএ কবে বাস্তবায়িত হবে।

এই প্রশ্নের উত্তরে শান্তনু বলেন, ‘ওনার (প্রধানমন্ত্রীর) কোনো প্রয়োজন নেই সিএএ নিয়ে বলার, যা বলার তা আমরা ইতিমধ্যেই বলে দিয়েছি।’

কবে নাগরিকত্ব আইন চালু হবে—এই প্রশ্নের উত্তরে শান্তনু বলেন, আইনটি ভোটের আগেই চালু হবে। ভোটের এক দিন, দুই দিন বা তিন দিন আগে হলেও হবে। নির্দিষ্টভাবে কোনো দিন ঘোষণা করতে পারেননি শান্তনু ঠাকুর।

আইনটির বাস্তবায়ন ভারতে বসবাসকারী শরণার্থীদের (যারা ভারতের শরণার্থী আইন অনুসারে শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃত নন) জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এর কারণ, আইনটি বাস্তবায়িত হলে নানা হেনস্তার হাত থেকে তাঁরা বাঁচবেন বলে নমঃশূদ্র সম্প্রদায়ের বক্তব্য। এই আইনে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে যাঁরা ভারতে এসেছেন, তাঁরা ভারতের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি পাবেন। তবে মুসলমান সম্প্রদায়ের কেউ পাবে না। আইনটি বিতর্কিত। কারণ, ধর্মের ভিত্তিতে সিএএর সুবিধা পাওয়া যাবে।

কিন্তু গত পাঁচ বছরেও আইনটি বাস্তবায়ন করতে পারেনি বিজেপি সরকার। এখন শান্তনু ঠাকুর বলছেন, নির্বাচনের আগে আইনটি বাস্তবায়িত হবে, যদিও এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি প্রধানমন্ত্রী।

স্বাভাবিকভাবেই তৃণমূল কংগ্রেস বিষয়টি নিয়ে আক্রমণ করেছে বিজেপিকে। রাজ্যসভায় তৃণমূল কংগ্রেসের সদস্য ও মতুয়া মহাসংঘের সভানেত্রী মমতাবালা ঠাকুর বলেন, ‘এটা কী ধরনের বক্তব্য যে ভোটের এক ঘণ্টা আগে হলেও আইন বাস্তবায়িত হবে? প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি বেশ কয়েকবার পশ্চিমবঙ্গে এলেন। কিন্তু সিএএ নিয়ে  তিনি একটি শব্দও বললেন না। উনি শুধু সন্দেশখালি নিয়ে বলে চলেছেন। বোঝাই যাচ্ছে এটি একটি ভাঁওতা।’

আইনটি বাস্তবায়নের আগে উত্তর-পূর্ব ভারতের আসাম রাজ্যে প্রায় সব বিরোধী দল এক জোট হয়ে সিএএর বিরোধিতা শুরু করেছে। আসামের নাগরিক সমাজও আইনটির বিরোধিতায় ইতিমধ্যেই পথে নেমেছে, যেমন তারা নেমেছিল ২০২০ সালে।