ইন্টারনেটে ভারতে পার্থর থেকে দুই গুণ জনপ্রিয় অর্পিতা

লাল রং অর্পিতা এবং নীল রং দিয়ে পার্থর বিষয়ে ইন্টারনেটে সন্ধানের হার তুলে ধরা হয়েছে।

ইন্টারনেট যোগাযোগমাধ্যম গুগলের একটি পরিষেবা হলো ‘ট্রেন্ডস’, যারা জানায়—বিশ্বের মানুষ নির্দিষ্ট সময়ে, গত মাসে, গত বছরে বা গত পাঁচ বছরে ইন্টারনেটে কী খুঁজেছেন? এ তথ্য এত বড় আকারে আর কোনো সংস্থার কাছে নেই।

গুগল ট্রেন্ডস জুলাই মাসের যে পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে তাতে দেখা গেছে, গত ২১ জুলাই থেকে পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগসংক্রান্ত যে বিতর্ক শুরু হয়েছে, তাতে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে অনেক পেছনে ফেলে দিয়েছেন তাঁর পরিচিত অভিনেত্রী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়।

পশ্চিমবঙ্গে পার্থকে বেশি মানুষ গুগলে সার্চ করেছেন বা খুঁজেছেন, কিন্তু সার্বিকভাবে ভারতে সব সময়েই এগিয়ে ছিলেন অর্পিতা।

গত ২২ জুলাই যখন পার্থর বাড়িতে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা তল্লাশি শুরু করে, তখন গুগল ট্রেন্ডসে অর্পিতার থেকে সামান্যই এগিয়েছিলেন পার্থ।

তিনি পেয়েছিলেন ১৪ পয়েন্ট এবং অর্পিতা ১৩। তাৎপর্যপূর্ণ, শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে প্রায় কোনো সার্চই (খোঁজ) হয়নি। কারণ, দুর্নীতিবিষয়ক সার্চের পয়েন্ট ছিল ১। এরপর ২৩ জুলাই একলাফে অর্পিতা পার্থকে টপকে পৌঁছে যান ৮৬ পয়েন্টে, পার্থ ৭২-এ, নিয়োগ কেলেঙ্কারি ১। এর পরবর্তী সময়ে তাঁদের দুজনকেই খোঁজ করার ঝোঁকটা কমতে থাকে, কিন্তু বরাবরই অর্পিতা এগিয়ে ছিলেন।

তবে শনিবার ২৩ জুলাই দেখা যায়, পার্থ সামান্য এগিয়ে রয়েছেন। পার্থ ৩০ আর অর্পিতা ২৫–এ। কেলেঙ্কারি কিন্তু সেই একেই দাঁড়িয়ে। পার্থকে পেছনে ফেলে ২৭ জুলাই অর্পিতা চলে যান ৩০–এ, পার্থ ২৬–এ।

এরপর ২৮ জুলাই আবার বিরাট লাফ দেন অর্পিতা।

তাঁর স্কোর হয় ১০০। সাবেক শিক্ষামন্ত্রী তাঁর অর্ধেকে, অর্থাৎ ৫০–এ, নিয়োগ কেলেঙ্কারি মাত্র ২–এ। এরপর ধীরে ধীরে মানুষের বিষয়টিতে উৎসাহ কমতে শুরু করে এবং দুজনের ইন্টারনেট জনপ্রিয়তাও হ্রাস পেতে থাকে।

লাল রংয়ে অর্পিতার এবং নীল রংয়ে অর্পিতার বিষয়ে ভারতজুড়ে সার্চের হার উঠে এসেছে।

তবে বরাবরই এগিয়েছিলেন এবং এখনো রয়েছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের শিষ্যা অর্পিতা। শেষ হিসাব পাওয়া গিয়েছে ২ আগস্ট পর্যন্ত। অর্পিতা ১১, পার্থ ১০।

এটা সারা ভারতের সার্বিক চিত্র। বস্তুত, সার্বিক যে মানচিত্র প্রকাশ করেছে গুগল তাতে দেখা যাচ্ছে, পার্থকে বরং অর্পিতার থেকে বেশি সার্চ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মানুষ। আর গোটা ভারতের আগ্রহ স্পষ্টতই অর্পিতাকে ঘিরে।

পশ্চিমবঙ্গ বাদে গোটা ভারতে অর্থাৎ, উত্তরের কাশ্মীর থেকে একেবারে দক্ষিণে তামিলনাড়ু বা উত্তর-পূর্ব ভারত থেকে পশ্চিম ভারতের গুজরাট—সর্বত্রই গুরু পার্থর থেকে কোথাও তিন গুণ এবং কোথাও চার গুণ এগিয়ে রয়েছেন শিষ্যা অর্পিতা।
সব জায়গাতেই যেখানে অর্পিতা পেয়েছেন ৬০ থেকে ৮০ পয়েন্ট, সেখানে পার্থ পেয়েছেন ২০ বা ৩০ পয়েন্ট। বোঝাই যাচ্ছে, সাবেক শিক্ষামন্ত্রীকে নিয়ে কিছু আগ্রহ পশ্চিমবঙ্গে থাকলেও, ভারতে নেই। পশ্চিমবঙ্গে অবশ্য পার্থর সার্বিক পয়েন্ট ৫৮, অর্পিতা দাঁড়িয়ে ৪২–এ।

আর শিক্ষা বা দুর্নীতি নিয়ে যে মানুষের উৎসাহ একেবারেই নেই, তা বোঝাই যায় যখন দেখা যায় শিক্ষা ক্ষেত্রে নিয়োগসংক্রান্ত দুর্নীতির সার্চ পয়েন্ট মাত্র ১ কি ২।

উত্তরবঙ্গের কোচবিহার জেলায় একটি ছোটখাটো ওয়েবসাইট এবং ইউটিউব চ্যানেল বিএনএন বাংলা নিউজের সম্পাদক মনসুর হাবিবুল্লাহ বলেন, ‘অবাক করা কাণ্ড! দিনের পর দিন দেখছি একই ঘটনা ঘটছে, মানুষ ক্রমাগত ইন্টারনেটে ইংরেজিতে খুঁজে চলেছেন “পার্থর বান্ধবী”, “পার্থর বান্ধবীরা”, “অর্পিতা”, “অর্পিতার বয়ফ্রেন্ডরা”, “অর্পিতা মোনালিসা”, “পার্থর আরও বান্ধবী” ইত্যাদি। সাবেক শিক্ষামন্ত্রী, বাংলার শিক্ষাব্যবস্থা, শিক্ষাব্যবস্থার দুর্নীতি, পশ্চিমবঙ্গের আর্থিক কেলেঙ্কারি—এসব কেউ খুঁজছেনই না। পরিস্থিতি উদ্বেগজনক।’

গুগল নিজেই এসব তথ্য জানাচ্ছে বলে দাবি করেন হাবিবুল্লাহ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদান নিয়ে তাঁর বিশেষ পড়াশোনা রয়েছে।

হাবিবুল্লাহ বলেছেন, ‘এই ট্রেন্ডসের ভিত্তিতেই রাজনৈতিক দলগুলো বুঝতে পারছে—কতটা সময়, অর্থ এবং কর্মী কোনো একটি ইস্যুর পেছনে খরচ করতে হবে বা করা উচিত। তারা বুঝতে পারছেন, শিক্ষা বা নিয়োগ দুর্নীতিবিষয়ক ইস্যুতে মানুষের বিশেষ উৎসাহ নেই। তাই বিরোধী দলগুলোও হয়তো খুব একটা সময় এই ইস্যুতে দিচ্ছে না। হয়তো সেই কারণেই বিষয়টি ইতিমধ্যেই স্তিমিত হয়ে গিয়েছে।’

শিক্ষা থেকে মানুষ যে শিক্ষামন্ত্রীর বান্ধবীদের ব্যাপারে বেশি উৎসাহী, তা বলাই বাহুল্য।