মনিপুরে যে ঘটনা নিয়ে সহিংসতা শুরু হয়
ভারতের উত্তর-পূর্বের রাজ্য মনিপুরে গত ২৪ ঘণ্টায় বড় ধরনের কোনো সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। এ অবস্থায় আজ সোমবার সব পক্ষকে আশ্বস্ত করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, কোনো সম্প্রদায়েরই নিরাপত্তাহীনতায় ভোগার কারণ নেই। সব দিক বিবেচনা করেই সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেই সম্প্রদায়কে তফসিলি উপজাতি হিসেবে সংরক্ষণ দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
৩ মে থেকে মনিপুরে চলা সহিংসতা নিয়ে এই প্রথম মুখ খুললেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ভারতের একটি গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অমিত শাহ বলেন, আদালত একটি আদেশ দিয়েছেন। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। মনিপুর সরকারের সঙ্গেও পরামর্শ করা হবে। তারপরই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই।
গত ১৪ এপ্রিল মনিপুরের হাইকোর্ট এক নির্দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেই সম্প্রদায়ের দাবি খতিয়ে দেখতে মনিপুর সরকারকে নির্দেশ দেন। মেইতেই সম্প্রদায়ের দাবি তাদের মনিপুরের অন্যান্য উপজাতিদের মতোই সংরক্ষণ দিতে হবে। কারণ, সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের সংরক্ষণের সুবিধা না থাকায় তারা পিছিয়ে পড়ছে এবং এগিয়ে যাচ্ছে উপজাতি সমাজ। হাইকোর্টের এই নির্দেশের পরেই এপ্রিলে মনিপুরজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। রাজ্যে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) একাধিক জনজাতি গোষ্ঠীর এমএলএ পদত্যাগ করেন।
হাইকোর্টের নির্দেশের প্রতিবাদে গত সপ্তাহে উপজাতি সম্প্রদায় একটি মিছিল বের করে। মিছিলটিকে কেন্দ্র করে সহিংসতা শুরু হয় প্রধানত মধ্য এবং দক্ষিণ ও পশ্চিম মনিপুরের বিভিন্ন জেলায়। ৭২ ঘণ্টার সংঘর্ষে মেইতেই এবং কুকি ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের অন্তত ৫৪ জনের মৃত্যু হয় বলে সরকারি সূত্রে জানা গেছে। যদিও মৃতের প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি বলে এলাকার বাসিন্দারা দাবি করছেন।
তবে গত ২৪ ঘণ্টায় বড় ধরনের কোনো সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। মাঝেমধ্যে কারফিউ শিথিল করা হলেও সাধারণভাবে সব উপদ্রুত অঞ্চলে কারফিউ রয়েছে। আকাশে ধারাবাহিকভাবে উড়ছে সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার। রাজ্যের প্রধান প্রধান শহরগুলো তো বটেই, পার্বত্য অঞ্চলের গ্রামেগঞ্জেও টহল দিচ্ছে সেনাবাহিনী, আধা সামরিক বাহিনী ও স্থানীয় পুলিশ। তবে রাজ্যে এখনো মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
তবে ইতিমধ্যে বিজেপিরই এক বিধায়ক মেইতেই সম্প্রদায়ের জন্য তফসিলি উপজাতির মর্যাদা সম্পর্কিত মনিপুর হাইকোর্টের আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে একটি আবেদন করেছেন।
মনিপুর বিধানসভার পার্বত্য অঞ্চল কমিটির (এইচএসি) চেয়ারম্যান, ডিঙ্গাংলুং গ্যাংমেই যিনি রাজ্য বিধানসভায় ক্ষমতাসীন বিজেপিরই একজন এমএলএ-ও বটে, তিনি তাঁর আবেদনে বলেছেন, তফসিলি উপজাতির তালিকায় কোন সম্প্রদায় অন্তর্ভুক্ত হবে বা হবে না, তা দেখার এবং বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব একমাত্র রাজ্য সরকারের, হাইকোর্টের নয়। হাইকোর্টের অপ্রীতিকর আদেশের ফলে মনিপুরে অশান্তি সৃষ্টি হয়েছে।