ভারতের আঞ্চলিক নেতৃত্বের ভূমিকায় যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন

যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, অভিন্ন মূল্যবোধ ও স্বার্থকে এগিয়ে নিতে সহযোগিতা যেমন বেড়েছে, তেমনি কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত

যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশলে ওয়াশিংটন ‘আঞ্চলিক নেতা হিসেবে ভারতের ভূমিকাকে সমর্থন করে।’ ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশল (ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি) প্রকাশের বর্ষপূর্তিতে গত শুক্রবার পররাষ্ট্র দপ্তর এ কৌশলের বিভিন্ন কার্যক্রমের যে পর্যালোচনা প্রকাশ করেছে, তাতে ভারতের আঞ্চলিক নেতৃত্ব প্রসঙ্গে এসব কথা বলা হয়।

পর্যালোচনায় যুক্তরাষ্ট্রকে একটি ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশ উল্লেখ করে বলা হয়, পৃথিবীর সবচেয়ে গতিশীল এবং দ্রুত বর্ধনশীল অঞ্চল হিসেবে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধির একটি অপরিহার্য চালক। এই অঞ্চল বিশ্বের অর্ধেকের বেশি জনসংখ্যার আবাসস্থল এবং বৈশ্বিক জিডিপির ৬০ শতাংশের পাশাপাশি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দুই-তৃতীয়াংশের উৎস। ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের মধ্যে বাণিজ্য দুই ট্রিলিয়ন ডলারের ওপরে পৌঁছেছে। যুক্তরাষ্ট্র এ অঞ্চল থেকে ৯৫৬ বিলিয়ন ডলারের বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ থেকে লাভবান হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী এ অঞ্চলের বলেও এতে উল্লেখ করা হয়।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশল প্রকাশের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র এ অঞ্চলের জন্য একটি অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিকে এগিয়ে নিতে যে পদক্ষেপ নিয়েছে, তাকে ‘ঐতিহাসিক’ অভিহিত করে এ পর্যালোচনায় বলা হয়, এ দৃষ্টিভঙ্গি মুক্ত এবং উদার, সংযুক্ত, সমৃদ্ধ, নিরাপদ এবং স্থিতিস্থাপক।

কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র বলছে যে এ অভিন্ন মূল্যবোধ ও স্বার্থকে এগিয়ে নিতে সহযোগিতা যেমন বেড়েছে, তেমনি কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। এতে বলা হয়, চীন নিজ দেশে আরও নিপীড়ক এবং বিদেশে আরও প্রভাব খাটাচ্ছে, মানবাধিকার এবং আন্তর্জাতিক আইনকে ক্ষুণ্ন করছে এবং আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় নতুন রূপ দিতে চাইছে। উত্তর কোরিয়া তার বেআইনি পারমাণবিক অস্ত্র এবং দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি প্রসারিত করে চলেছে বলেও পর্যবেক্ষণে তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলো ছোট দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর জন্য একটি অস্তিত্বের হুমকি সৃষ্টি করছে।

আঞ্চলিক নেতা হিসেবে ভারতের ভূমিকাকে সমর্থন করার প্রশ্নে এতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র বহুপক্ষীয় ও দ্বিপক্ষীয় ফোরামের মাধ্যমে এই অঞ্চলে ভারতের নেতৃত্বকে সমর্থন করে। ২০২৩ সালের জুনে প্রধানমন্ত্রী মোদির ওয়াশিংটনে সফর, সেপ্টেম্বরে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের জন্য প্রেসিডেন্ট বাইডেনের নয়াদিল্লি সফর, পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে ভারতীয় মন্ত্রীদের বৈঠকগুলোর কথা উল্লেখ করে এতে বলা হয়, ‘আমরা প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা, জলবায়ু ও পরিচ্ছন্নশক্তি, মহাকাশ, বহুপক্ষীয় সহযোগিতা এবং জনগণের সঙ্গে জনগণের সম্পর্কের বিষয়ে একসঙ্গে কাজ করছি।’

মুক্ত এবং অবাধ ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল তৈরিতে অগ্রগতি, এ অঞ্চলের ভেতরে ও বাইরে সংযোগ স্থাপন, আঞ্চলিক সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতা জোরদার করা এবং একুশ শতকের আন্তর্জাতিক হুমকির ক্ষেত্রে প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ানো—এ পাঁচটি নির্দিষ্ট শিরোনামের অধীন বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক চ্যালেঞ্জ ও নীতিকৌশল এবং তা বাস্তবায়নের পর্যালোচনা এতে রয়েছে। বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে নেওয়া ও সমমনাদের সঙ্গে কাজ করা, মিয়ানমারের গণতন্ত্রের প্রতি সমর্থন, বিদেশ থেকে তথ্য বিকৃতি ও হস্তক্ষেপের হুমকি মোকাবিলা, রোহিঙ্গাদের মানবিক সংকট সমাধান ও দক্ষিণ চীন সাগরে আন্তর্জাতিক সমুদ্র আইন সমুন্নত রাখার প্রশ্নগুলো এতে আলোচিত হয়েছে।

মানবাধিকার প্রসঙ্গে মূলত চীন, উত্তর কোরিয়া ও মিয়ানমারে জবাবদিহির জন্য কাজ করার কথা এতে উল্লেখ করা হয়েছে। আর গণতন্ত্রের সমর্থনে মিয়ানমারের জন্য যুক্তরাষ্ট্র প্রায় ৩২ কোটি ডলার খরচের কথা তুলে ধরেছে। মিয়ানমারের ৯১ ব্যক্তি ও ৫০টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞারও উল্লেখ রয়েছে এতে। তবে এ অঞ্চলে অন্য কোনো দেশে গণতন্ত্রের অধোগতি কিংবা কর্তৃত্ববাদের উত্থান মোকাবিলায় ওয়াশিংটনের নীতিকৌশলের কোনো উল্লেখ এতে নেই।

রোহিঙ্গাদের মানবিক সংকট মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র ২০১৭ সাল থেকে ২৪০ কোটি ডলার সহায়তা দেওয়ার কথা জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের এ সহায়তা বাংলাদেশে থাকা ১০ লাখ শরণার্থী এবং এ অঞ্চলে ছড়িয়ে থাকা অন্যান্য রোহিঙ্গা শরণার্থীর কাছে পৌঁছেছে বলে পর্যালোচনায় বলা হয়।

নিরাপত্তা জোরদার করা, নিরাপত্তা সহযোগিতার বিভিন্ন উদ্যোগ ও জোট গঠন, ডিজিটাল–সংযোগ সম্প্রসারণ, সাইবারনিরাপত্তা, উন্নতমানের অবকাঠামো তৈরি, জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি মোকাবিলা, বিদ্যুৎসহ জ্বালানি নিরাপত্তা, দূষণমুক্ত জ্বালানির প্রসারসহ বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতা ও একুশ শতকের আগামী দিনগুলোর চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে এতে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে।