ভারতের কিছু শোধনাগার রাশিয়ার তেল কেনা থেকে সরে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছে
ভারতের কিছু তেল শোধনাগার রাশিয়া থেকে তেল আমদানি কমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। গতকাল বুধবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ইউক্রেনের যুদ্ধ বন্ধে সাহায্য করতে ভারত রাশিয়ার তেল কেনা বন্ধ করার আশ্বাস দিয়েছে। এরপরই বৃহস্পতিবার তিনটি সূত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছে।
২০২২ সালে রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালানোর পর ইউরোপে বিক্রি কমে যাওয়ায় রাশিয়া ছাড়মূল্যে তেল বিক্রি করতে বাধ্য হয়। এ সুযোগে ভারত ও চীন রাশিয়ার সমুদ্রবাহিত অপরিশোধিত তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা হয়ে ওঠে।
বিষয়টি সম্পর্কে জানে এমন কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, ভারতের জ্বালানি তেল শোধনাগারগুলো রাশিয়ার তেল কেনা থেকে সরে আসার প্রস্তুতি শুরু করেছে। নভেম্বরের ক্রয়াদেশ ইতিমধ্যে দেওয়া হয়ে যাওয়ায় ডিসেম্বর মাস থেকে তেল কেনা কমানো হতে পারে।
সূত্রগুলো বলছে, সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে শোধনাগারগুলোকে রাশিয়ার তেল কেনা বন্ধ করতে বলেনি। তবে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার জন্য অনুমোদিত নয় বলে সূত্রগুলো নিজেদের নাম প্রকাশ করতে চায়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের জ্বালানি সহযোগিতা বৃদ্ধি
ভারতীয় কর্মকর্তারা বাণিজ্য আলোচনার জন্য ওয়াশিংটনে রয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে ভারতীয় পণ্যের ওপর আমদানি শুল্ক দ্বিগুণ করেছে।
মার্কিন আলোচকেরা ভারতের আমদানি শুল্ক কমাতে বলেছেন। পাশাপাশি একটি বাণিজ্যচুক্তি চূড়ান্ত করতে রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল কেনা কমানোও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল এক বিবৃতিতে বলেছেন, বর্তমান (মার্কিন) প্রশাসন ভারতের সঙ্গে জ্বালানি সহযোগিতা গভীর করতে আগ্রহ দেখিয়েছে। এ নিয়ে আলোচনা চলছে।
ট্রাম্প গতকাল বুধবার বলেছেন, ইউক্রেনের সঙ্গে শান্তিচুক্তির জন্য মস্কোর ওপর চাপ বৃদ্ধির প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ভারতের রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনা নিয়ে কথা বলেছেন।
ট্রাম্প হোয়াইট হাউসের এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভারত যে তেল কিনছিল, তাতে আমি অসন্তুষ্ট। তিনি (মোদি) আজ (বুধবার) আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন, রাশিয়া থেকে ভারত তেল কিনবে না।’
ট্রাম্প আরও বলেন, ‘এটি বড় এক পদক্ষেপ। এখন আমরা চীনকেও একই কাজ করাতে যাচ্ছি।’
তবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আজ বৃহস্পতিবার দাবি করেছে, বুধবার মোদি ও ট্রাম্পের মধ্যে টেলিফোনে কোনো কথা হয়নি।
ভারত সরকারের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র জানিয়েছে, ভারতীয় শোধনাগারগুলো সম্ভব হলে রাশিয়ার তেলের আমদানি কমিয়ে দেবে এবং তার পরিবর্তে যুক্তরাষ্ট্র থেকে অপরিশোধিত তেল কিনবে।
তবে সূত্রটি আরও যোগ করেছে, ভারত ও চীন উভয়ই রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করে দিলে বিশ্বব্যাপী তেলের দাম অনেক বেড়ে যাবে এবং বাজার অস্থিতিশীল হয়ে পড়বে।
বৃহস্পতিবার তেলের দাম স্থিতিশীল ছিল। কারণ, বাজারের ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, ভারত রাশিয়ার তেল কেনা কমালে অন্য জায়গা থেকে সরবরাহের চাহিদা বাড়বে।
বাণিজ্য তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে ভারতের মোট তেল আমদানির ৩৬ শতাংশ এসেছে রাশিয়া থেকে, যা প্রতিদিন প্রায় ১৭ লাখ ৫০ হাজার ব্যারেল।
কেপলারের তথ্যানুসারে, ইউক্রেনের ড্রোন হামলায় রাশিয়ার শোধনাগার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরপর দেশটি রপ্তানি বৃদ্ধি করায় অক্টোবরে ভারতে এই আমদানি বেড়ে ১৯ লাখ ব্যারেলে পৌঁছানোর কথা।
ভারতের সঙ্গে জ্বালানি অংশীদারত্বে রাশিয়া এখনো আত্মবিশ্বাসী
রাশিয়া আজ বৃহস্পতিবার বলেছে, ভারতের সঙ্গে তাদের জ্বালানি অংশীদারত্ব অব্যাহত থাকবে বলে তারা আত্মবিশ্বাসী।
রাশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী আলেকজান্ডার নোভাক ভারতের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আমাদের জ্বালানি সম্পদের চাহিদা রয়েছে, এটি অর্থনৈতিকভাবে সুবিধাজনক ও বাস্তবসম্মত। আমি আত্মবিশ্বাসী, আমাদের অংশীদারেরা আমাদের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাবে।’
ভারতের ম্যাঙ্গালোর রিফাইনারিজ অ্যান্ড পেট্রোকেমিক্যালস (এমআরপিএল) বলেছে, তারা ছাড়ে তেল কিনতে বিকল্প উৎস খুঁজছে। তবে একই সঙ্গে রাশিয়ার তেল কেনা চালিয়ে যাওয়ারও আশা করছে।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, যেসব দেশকে ট্রাম্প রাশিয়ার তেল কেনা বন্ধ করতে রাজি করানোর চেষ্টা করছেন, মস্কো তাদের কম দামে তেল সরবরাহ করতে সক্ষম।
পেসকভ বলেন, এ ধরনের দেশগুলোকে যদি তাদের পছন্দের জিনিস কেনার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়, তবে মুক্তবাণিজ্যের নীতির লঙ্ঘন হবে।